দীঘিনালায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদ হওয়া ২১ পরিবার পাহাড়ির মানবেতর জীবন-যাপন
দীঘিনালা প্র্র্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম

দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকার যত্ন মোহন কার্বারী পাড়ায় বিজিবি’র ৫১নং ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে গত ১০ জুন বিজিবি-পুলিশ ও সেটলারদের যৌথ হামলার পর উচ্ছেদের শিকার হওয়া ২১টি পাহাড়ি পরিবারের ৭৭ জন নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এদের মধ্যে শিশু, বৃদ্ধদের অবস্থা খুবই শোচনীয়।
সরেজমিনে গিয়ে বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিজিবি তাদের বাড়ীঘর, জায়গা-জমি দখল করে নিয়েছে এবং ওই এলাকায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে। বিজিবি তাদের বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে বাবুছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এখন তারা সর্বস্ব হারিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। এলাকার জনগণ যা সহযোগিতা দিচ্ছে তা দিয়েই কোন রকমে জীবন বাঁচাচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে তাদের কোন সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে না। এদিকে, বিজিবি ২নং বাঘাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেয়ায় এলাকার কোমলমতি শিশুদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে।
২নং বাঘাইছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী বৈশাখী চাকমা ও একই ক্লাসের ছাত্র সূর্যরণ চাকমা কাঁদতে কাঁদতে বলে, বিজিবি আমাদের বিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের বাড়িটাও কাটাতারে বেড়া দিয়েছে। আমরা এখন কী করব?
৭৬ বছর বয়স্ক সন্তোষ কুমার কার্বারী বলেন, ‘১০ জুন বিজিবি সদস্যরা আমাকে বাড়ী থেকে টেনে হিঁচড়ে মারতে মারতে বের করে দিয়ে বাড়ী এবং দোকান ভাংচুর করে। সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে। ১২ই জুন হাসপাতাল থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলেও বিজিবির বাধার কারণে বাড়ীতে যেতে পারিনি। এ বয়সে আমি এখন কি করব? কোথায় যাব?’
একই গ্রামের কিরণ চাকমার স্ত্রী মুধুরিকা চাকমা বলেন, ‘বিজিবিরা আমাকে যেভাবে বন্দুক দিয়ে মেরেছে মনে হয়েছে আমি আর কোন দিন দাঁড়াতে পারবো না। শুধু চার/পাচঁটা বন্ধুকের গুটা মনে আছে। পরে তারা আমাকে কি করেছিল আর কিছু মনে নেই।’
একই গ্রামের সংঘ দেবী চাকমার সাথে কথা বলে জানা যায়, বিজিবি এবং পুলিশ সদস্যরা তাকে লক্ষ করে গুলি ছুড়েছে এবং তার রানের দুইটি বুলেট বিদ্ধ হয়েছে। কাপড় উল্টিয়ে বুলেটের ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমি আর আগের মত কাজ করতে পারব না। আমি কিভাবে বাঁচবো! কখন আমার বাড়ীতে যেতে পারবো?’
দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘যেখানে জোরপূর্বক গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ করে বিজিবি ৫১নং ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের চেষ্টা করছে তার কোন যৌক্তিকত নেই। কারণ ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়ন তথা ৫১নং দীঘিনালা মৌজাটি কোন পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্ত নেই। বিজিবি হচ্ছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী। দেশের এবং জনস্বার্থে যদি বিজিবি ক্যাম্পের প্রয়োজন হয় তাহলে পার্শ্ববর্তী ৫নং বাবুছড়া ইউনিয়নের ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় করা হোক, তবে কাউকে উচ্ছেদ করে নয়।’
বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষেরদ চেয়ারম্যান সুগত প্রিয় চাকমা বলেন, ‘অত্র উপজেলায় এত সেনাক্যম্প, আনসার, ব্যাটেলিয়ন ক্যাম্প থাকা স্বত্ত্বেও কেন ৫১ নং ব্যাটালিয়ন বিজিবি হেডকোয়ার্টার স্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়। কাউকে উচ্ছেদ করে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন করা অমানবিক এবং অন্যায়। গত ১০ জুন নিরীহ গ্রামবাসীর উপর বিজিবি যে অত্যাচার নির্যাতন করেছে তা দেখে মনে হয় দেশে আইন বলতে কিছুই নেই। তাই অচিরেই বিজিবি ৫১নং ব্যোটালিয়ন প্রত্যাহার করে নীরিহ গ্রাম বাসীকে নিজ নিজ জায়গায় পূনর্বাসন করা হোক।’
————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।