নান্যাচর গণহত্যার বিচারের দাবিতে নান্যাচরে পিসিপি’র আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন

0


নান্যাচর প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

নান্যাচর গণহত্যার ৩২ বছর উপলক্ষে উক্ত হত্যাযজ্ঞের বিচার দাবিতে আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।

আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্বলন অনুষ্ঠানের ব্যানার শ্লোগান ছিল, “পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার কর” এবং আহ্বান ছিল “শত শহীদের শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় শাসকের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী জুম্মরূপী সকল কালো শক্তির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ এক হয়ে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন লড়াইয়ে সামিল হোন।”

গতকাল শনিবার (১৫ নভেম্বর ২০২৫) বিকাল ২:৩০টায় নান্যাচরে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

অনুষ্ঠান শুরুতে নান্যাচর গণহত্যায় শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে সাইরেন বাজিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সভায় পিসিপির রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি চয়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ভবান্তর চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর সংগঠক জয়েন চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তনুময় চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সহ-সভাপতি কল্পনা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন ও যুব প্রতিনিধি সুগত চাকমা।

ছাত্রনেতা চয়ন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক যে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার মধ্যে ১৯৯৩ সালের ১৭ নভেম্বর সংঘটিত নান্যাচর গণহত্যা অন্যতম একটি হত্যাযজ্ঞের ঘটনা। এ বর্বরতম গণহত্যার ৩২ বছরেও ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা বিচারের আওতায় আনা হয়নি। নান্যাচর গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত সকল গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর মধ্যযুগীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা ও নান্যাচর কলেজ ছাত্র রমেল চাকমার মৃত্যুর জন্য দায়ী তৎকালীন নান্যাচর জোন কমাণ্ডার বাহালুল আলম ও মেজর তানভীরের কোন বিচার হয়নি।

তিনি বলেন, ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়ন, ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ ও গুম, খুনের হাত থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে। তাই তিনি ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে সামিল হয়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।


পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সহ-সভাপতি কল্পনা চাকমা বলেন, ১৯৯৩ সালে আমি কলেজে পড়তাম। যেদিনদ ঘটনাটি ঘটে (১৭ নভেম্বর ’০৩) আমি কলেজে গিয়েছিলাম। সেদিন নান্যাচর বাজারের যাত্রী ছাউনিতে সেনা চেকপোস্ট বসানোর প্রতিবাদে তৎকালীন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হলে তার বিপরীতে সেনাবাহিনীর মদদে সেটলার বাঙালিরা ও সমাবেশ করে এবং বিকালে প্রতিবাদী জনগণ বাড়ি ফিরার সময় সেটলার ও সেনা বাহিনী হামলা করে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়।

তিনি গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির গুইমারায় সেনা-সেটলার কর্তৃক সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল গণহত্যার যথাযথ বিচারের দাবি জানান।

ইউপিডিএফ সংগঠক জয়েন চাকমা বলেন, ১৭ নভেম্বর দিনটি পাহাড়িদের জন্য এক কালোদিন। ১৯৯৩ সালে এই দিন সেনা-সেটলাররা নান্যাচর বাজারে আসা লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে এক বর্বরতম গণহত্যা সংঘটিত করেছিল, যা আজো কোন বিচার হয়নি।

তিনি বলেন, শাসকগোষ্ঠি ‌‌‘ভাগ কর শাসন কর’ নীতির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন, ভূমি বেদখল, গুম, খুনের মধ্য দিয়ে জুম্মদের ওপর ফ্যাসিস্ট শাসন জারি রেখেছে। তারা পাহাড়িদের বিরুদ্ধে সেটলার বাঙালিদের লেলিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলা, গণহত্যা চালাচ্ছে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় সেনা-সেটলাররা মিলে পাহাড়িদের ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসনের মাধ্যমে অপারেশনের নামে প্রতিনিয়ত ঘর-বাড়ি তল্লাশি, লুটপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন, অস্ত্র উদ্ধারের নামে নিরপরাধ মানুষকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তিনি নান্যাচর গণহত্যার সুষ্ঠু তদন্ত বিচার দাবি করেন।


ছাত্রনেতা তনুময় চাকমা বলেন, অধিকার কেউ কাউকে খুশি করে দেয় না, অধিকার ছিনিয়ে আনতে হয়। পৃথিবীতে যারা সামগ্রিক স্বর্থের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন পৃথিবীতে তারা স্মরণীয় বরণীয়। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া ধরকার। ছাত্র সমাজ ঐক্যবদ্ধ হলে কোন অপশক্তি টিকে থাকতে পারে না। তাই অধিকার নিয়ে বাঁচার জন্য ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই।

তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনৈতিক ভাবে সচেতন হয়ে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

যুব নেতা প্রিয়তন চাকমা বলেন, আমাদের যেমন বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস জানা প্রয়োজন তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয়েও জানতে হবে। শাসকগোষ্ঠি পাহাড়িদের ওপর যে অন্যায়-অবিচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে, বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

যুব প্রতিনিধি সুগত চাকমা বলেন, আমাদের অন্যায়-বিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচারের দাবি জানান।

আলোচনা সভা শেষ হওয়ার পর নানা শ্লোগানের মধ্য দিয়ে নান্যাচর গণহত্যায় শহীদদেরসহ সকল শহীদদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More