নান্যাচরের বগাছড়িতে পাহাড়িদের ৫৭ বাড়ি ও দোকানে সেটলারদের অগ্নিসংযোগ

0

সিএইচটিনিউজ.কম
Boghachari-settler-attackনান্যাচর(রাঙামাটি): রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের সুরিদাশ পাড়া, নবীন তালুকদার পাড়া ও বগাছড়ি গ্রামে আজ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেটলার বাঙালিরা হামলা চালিয়ে পাহাড়িদের ৫০টি বাড়ি ও ৭টি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে।

যেসব বাড়ি পুড়ে দেওয়া হয় তার মধ্যে সুরিদাশ পাড়ায় ৩৭টি, নবীন তালুকদার পাড়ায় ৬টি ও বগাছড়িতে ৭টি রয়েছে। এছাড়া সেটলাররা স্থানীয় করুণা বৌদ্ধ বিহারে ঢুকে ভদন্ত উগাসা ভিক্ষুকে মারধর, ৪টি পিতলের বুদ্ধিমূর্তি লুট করে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বগাছড়ি এলাকার সেটলার মো: আফসার আলী গতবছর(২০১৩) সুরিদাশ পাড়ার বাসিন্দা প্রফুল্ল চাকমা পিতা পদ্ম রঞ্জন চাকমার ২ একরের অধিক জায়গা বেদখল করে এবং এবছর সেখানে আনারস চারা রোপন করে। গতকাল সোমবার রাতে পাহাড়িরা তার আনারস বাগানটি কেটে দিয়েছে এমন অভিযোগ করে আজ মঙ্গলবার সকালে সেটলাররা বগাছড়িতে জড়ো হয়ে প্রথমে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে ১৪ মাইল নামক স্থানে অবস্থিত পাহাড়িদের ৭টি দোকান পুড়িয়ে দেয়। এরপর সেটলাররা পার্শ্ববর্তী সুরিদাশ পাড়া, নবীন তালুকদার পাড়া ও বগাছড়ি পাড়ায় ঢুকে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং লুটপাট চালায়। এতে ৫০টি টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করলেও তারা সেটলারদের বাধা না দিয়ে তাদের সহযোগিতা দিয়েছে বলে পাহাড়িরা অভিযোগ করেছেন।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকরা হলেন- আনন্দ চাকমা, সুবিন্টু চাকমা, শান্তি লাল চাকমা, সুরোশি কুমার চাকমা, সাধন কুমার চাকমা, সত্য বিলাস চাকমা ও পিদেয়ে চাকমা।

যাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে।  তারা হলেন-১.সুপন জ্যোতি চাকমা, ২.সভা রঞ্জন চাকমা, পিতা- খুশী কিস্ত চাকমা, ৩.মঞ্জু চাকমা, পিতা- অনিল চাকমা, ৪.চন্দ্র মোহন চাকমা, পিতা- মানেক চন্দ্র চাকমা, ৫.শুভতারা চাকমা, পিতা- নলবন চাকমা, ৬.পিদিয়ে চাকমা, পিতা- চন্দ্রপা চাকমা, ৭.চন্দ্র মানেক চাকমা পিতা- কমল উধো চাকমা ও ৮.বুড়িঘাট ইউপি মেম্বার কাজলী ত্রিপুরা, স্বামী- হিরক চাকমা, ৯.নিহিরাধন চাকমা(৩৩), পিতা- মৃত সাধন কুমার চাকমা,১০. প্রদীপ চাকমা(৩৮), পিতা- সাধন কিস্ত চাকমা, ১১.নিহার বিন্দু চাকমা(২৭), পিতা- বিজু কুমার চাকমা, ১২.মঞ্জুলাল চাকমা, পিতা-বিজু কুমার চাকমা, ১৩.স্নেহ কুমার চাকমা, পিতা- মনু রঞ্জন চাকমা, ১৪.গন্দগুল্যা চাকমা (৩৭), পিতা- চিয়রঞ্জন চাকমা, ১৫.পূর্ণময় চাকমা, পিতা- ভরত চাকমা, ১৬.রনো চাকমা, পিতা- নিশি কুমার চাকমা, ১৭.কালা চাকমা, ১৮.মতিলাল চাকমা ও ১৯.শংকর চাকমা…..

এদিকে, সকাল পৌনে ১১টার দিকে সেটলারদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে অর্ধপোড়া একট দোকানে এক দল সেনা সদস্য পেট্রোল ঢেলে আবারো আগুন লাগিয়ে দেয়। এ সময় পাহাড়িরা প্রতিবাদ জানালে সেনা সদস্যদের সাথে পাহাড়িদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। পরে নান্যাচর জোন কমান্ডার ঘটনাস্থলে গিয়ে ৩নং বুড়িঘাট ইউপি মেম্বার আনন্দ চাকমা, সুবিন্টু চাকমা ও মুলুক্যাছড়া গ্রামের কার্বারী মিশন চাকমাকে বেদম মারধর করে।

অপরদিকে, ঘটনার দীর্ঘক্ষণ পর রাঙামাটি থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও ততক্ষণে সব পুুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ তাৎক্ষণিকভাবে রাঙামাটি – খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ পালন করেছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ইউপিডিএফ-এর নিন্দা ও প্রতিবাদ:
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা এক বিবৃতিতে পাহাড়ি গ্রামে সেটলার হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বৌদ্ধ ভিক্ষুকে মারধরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি বিজয় দিবসে সেটলারদের এ হামলাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, “সেটলারদের উগ্রবাদী অংশটি একদিকে পাহাড়িদের ভূমি জোরপূর্বক দখল করছে, অন্যদিকে তাতে বাধা দেয়া হলে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ইন্ধন ও সহযোগিতা ছাড়া এটা করা সেটলারদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং আজকের ঘটনার সাথে জড়িত সেটলারদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন, ভূমি বেদখল বন্ধ করা ও লুণ্ঠিত বুদ্ধমূর্তি উদ্ধারের দাবি জানান।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More