পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলার পর ক্ষমতায় থাকা জুম্ম নেতাদের অথবা জনপ্রতিনিধিদের প্রতিক্রিয়া:

0
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সেটলাররা অগ্নিসংযোগ করে গুইমারার রামেসু বাজারের দোকানপাট ও পাহাড়িদের বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

• ১৯৯২ সালের ২০ মে রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ি বসতিতে সেটলারদের সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে তৎকালীন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ানের পদত্যাগের পর আর কোন পাহাড়ি নেতা একের পর এক জঘন্য হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেননি। এমনকি ২০২৪ সালে রাঙ্গামাটি শহরে হামলার সময় আঞ্চলিক পরিষদ ভবন আক্রান্ত হওয়ার পরও তার প্রতিবাদ জানিয়ে সন্তু লারমা কোন বিবৃতি দেননি, পদত্যাগ করা দূরের কথা।

১৯৮০: কলমপতি গণহত্যা (কাউখালি, রাঙ্গামাটি): তখন প্রয়াত উপেন্দ্র লাল চাকমা জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি অন্য একজন এমপি শাহজাহান সিরাজসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে তার নিন্দা জানান।

১৯৮৬: মাটিরাঙ্গা-তাইন্দং গণহত্যা (খাগড়াছড়ি): তখন খাগড়াছড়ি থেকে এমপি ছিলেন একেএম আলীম উল্লাহ (জাতীয় পার্টি)। এ গণহত্যায় তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

১৯৮৯: লংগদু গণহত্যা: (রাঙ্গামাটি): সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন বিনয় কুমার দেওয়ান। তিনি এ হামলার সময় কোন বিবৃতি বা বক্তব্য দেননি। তবে পাহাড়ি ছাত্ররা একজোট হয়ে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গঠন করে।

১৯৯২, ১০ এপ্রিল: লোগাং গণহত্যা (খাগড়াছড়ি): সে সময় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিল কুখ্যাত দালাল সমীরণ দেওয়ান। সে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরে আয়োজিত এক জনসভায় তোতা পাখির মতো সরকার ও সেনাবাহিনীর বক্তব্য আউরে বলেছিলেন, লোগাং গণহত্যায় মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৩ জন।

তখন এমপি ছিলেন কল্প রঞ্জন চাকমা। সে সময়কার বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তিনি উক্ত গণহত্যার প্রতিবাদে কিছুটা সোচ্চার ছিলেন।

১৯৯২, ২০ মে: রাঙ্গামাটি শহরের সাম্প্রদায়িক হামলা: তখন রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন গৌতম দেওয়ান। তিনি উক্ত হামলার প্রতিবাদে পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। এধরনের গণহত্যা ও হামলার প্রতিবাদে তার পরে আজ পর্যন্ত আর কোন পাহাড়ি নেতাকে পদত্যাগ করতে দেখা যায়নি। সে কারণে তিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।

২০০৬: মহালছড়ি হামলা (খাগড়াছড়ি): তখন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য ছিলেন ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অভিযোগ রয়েছে তার ইন্ধনে এই হামলা সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং তার কাছ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা ছিল বৃথা।

২০০৮: সাজেক হামলা (রাঙ্গামাটি): তখন সেনা-সমর্থিত ফকরুদ্দিন আহমেদ-এর অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে জরুরী অবস্থা জারী ছিল। রাজা দেবাশীষ রায় সরকারের উপদেষ্টপা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় তার প্রতিক্রিয়া কি ছিল জানা যায়নি।

২০১০: সাজেক (রাঙ্গামাটি) ও খাগড়াছড়ি হামলা: যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ছিলেন খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন বলে জানা যায় না।

২০১২, ২০১৫ ও ২০২৪: রাঙ্গামাটি হামলা: আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন (এবং এখনও আছেন) জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্রি বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। তার ক্ষমতায় থাকাকালীন পর পর বড় ধরনের হামলার পরও তিনি আঞ্চলিক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেনি। এমনকি গত বছরের হামলায় তার অফিস পুড়িয়ে দেয়ার পরও তার প্রতিবাদে পদত্যাগ করা দূরের কথা, নিন্দা জানিয়ে এক লাইনের বিবৃতিও দেননি।

২০২৫: খাগড়াছড়ি ও গুইমারা হামলা: অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার ভূমিকা ন্যাক্কারজনক। তিনি হামলাকারী সেনা সদস্য, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ও উগ্রপন্থী সেটলারদের রক্ষার জন্য যেন উঠে পড়ে লেগেছেন। হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগদূরের কথা, নিন্দাও জানাননি। শুধু তাই নয়, তিনি ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনকারীদের হুমকি দিচ্ছেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More