পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন ও গ্যাসের দাবিতে খাগড়াছড়িতে নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের সংবাদ সম্মেলন
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন ও মানিকছড়ির সেমুতাঙ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস তিন পার্বত্য জেলাবাসীদের জন্য সরবরাহের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সংগঠন নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতনিধি সংসদ। আজ ১২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মহাজন পাড়াস্থ চন্দনপতি কমিউনিটি সেন্টারে সংগঠনটির আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নির্বাচিত জুম্ম জনপ্রতিনিধি সংসদের সভাপতি ও পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সোনা রতন চাকমা, বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা, মহালছড়ি উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাকলী খীসা, ভাইবোন ছড়া ইউপি চেয়ারম্যান কান্তি লাল চাকমা ও মাইসছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান শান্তশীল চাকমা।
লিখিত বক্তব্যে সর্বোত্তম চাকমা বলেন, ১৯৮৯ সালে গঠনের পর দীর্ঘ ২২ বছরেও জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না। কোন সরকারই পার্বত্য জেলা পরিষদকে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করেনি। শুধু দলীয় স্বার্থ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার হাতিয়ার হিসেবেই জেলা পরিষদকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার কারণে কোন সরকারই জেলা পরিষদের নির্বাচন দেয়নি এবং বর্তমান মহাজোট সরকারও দিচ্ছে না। নির্বাচন না দিয়ে জেলা পরিষদকে সরকারের পছন্দের দলীয় লোক ও তাদের আত্মীয় স্বজনের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, জেলা পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং নিয়োগ ও বদলী বাণিজ্য আজ সবার কাছে ওপেন সিক্রেট একটা বিষয়। চাকুরীতে নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে অযোগ্য অদ লোক এমনকি হিরোইন, গাঁজাখোর, সমাজের বখাটেরাও নিয়োগ পাচ্ছে। এলাকার উন্নয়নের নামে হাজার হাজর মেট্রিক টন গম, চাউল নিজেদের আরাম আয়েশের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের কাছে জেলা পরিষদ নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ জেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেখতে চায়।
সেমুতাঙের গ্যাস পাবত্য জেলাবাসীদের জন্য সরবরাহের দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা ইতিধ্যে জেনেছি সেমুতাং গ্যাস ত্রে থেকে গ্যাস উত্তোলন চলছে এবং তা জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে নেওয়া হচ্ছে। তেল, গ্যাস, কয়লাসহ সব খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর স্থানীয় জনগণের অধিকার সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটানোর পরেই অন্যত্র সরবরাহ করা যে কোন গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। কিন্তু বর্তমান সরকার পার্বত্যবাসীর চাহিদা এবং দাবি তোয়াক্কা না করে সেমুতাংয়ের গ্যাস জাতীয় গ্রীডে নিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে অবিলম্বে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দেয়া, জেলা পরিষদের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ফান্ড জেলা পরিষদ থেকে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদে ৫০% উন্নয়ন কাজে ফান্ড বরাদ্দ দেয়া, পার্বত্য জেলা পরিষদের উন্নয়ন কমটিতে সকল উপজেলা চেয়ারম্যানদের অন্তর্ভুক্ত করা, সেমুতাং গ্যাস ত্রে থেকে উত্তোলিত গ্যাস তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দাদের জন্য সরবরাহের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রাখা, সেমুতাংয়ের গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ ও পার্বত্য চট্টগ্রামে গ্যাস ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার দাবি জানোনো হয়।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলন থেকে উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ২০ জানুয়ারী খাগড়াছড়ি জেলা উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার প্রতিনিধি এবং গণ্যমান্য ব্যক্তবর্গ ও নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় এবং ২২ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি প্রেস কাবের সামনে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়।
