পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের ৪০ বছর উপলক্ষে চবিতে পিসিপি’র আলোচনা সভা

0

চবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন ২০২৩

পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের ৪০ বছর উপলক্ষে চবিতে ঘরোয়া আলোচনা সভা করে পিসিপি।

১৯৮৩ সালের ১৪ জুন জনসংহতি সমিতির লারমা গ্রুপ (লাম্বা) কর্তৃক প্রীতি গ্রুপের (বাদি) উপর সশস্ত্র হামলার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সূচনা হয় সশস্ত্র ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের। এই হামলায় শান্তিবাহিনীর অভিক্ষ সামরিক প্রশিক্ষক বলি ওস্তাদসহ ৩ জন নিহত হন। এই দিনটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ঘরোয়া আলোচনা সভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চবি শাখা।

গতকাল ১৪ জুন ২০২৩, বুধবার অনুষ্ঠিত সভায় পিসিপি চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা করেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা।

সভার শুরুতে অধিকার আদায়ে নিহত সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত সূচনার দিন নিহতদের স্মরণ করা হয়।

সভায় বক্তারা বলেন, সন্তু লারমা জেল থেকে বের হবার এক বছর পর ১৯৮১ সালে পূনরায় দলের সঙ্গে যুক্ত হলে জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরবর্তীতে এ বিরোধ চরম আকার নেয় এবং দলটি লাম্বা (লারমা গ্রুপ) ও বাদি (প্রীতি গ্রুপ) গ্রপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৮৩ সালের ১৪ জুন লাম্বা গ্রুপ বাদি গ্রুপের উপর আক্রমণ করলে এটি সশস্ত্র ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে রূপ নেয়। সন্তু লারমার কারণেই এ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের সূচনা হয় বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সেদিন (১৪ জুন’ ৮৩) দুপুর নাগাদ শান্তিবাহিনীর ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর সমীরণ (উষাতন তালুকদার)-এর নেতৃত্বে পানছড়ির পুজগাং এলাকার গোলকপুদিমা ছড়ার শাখা লাম্বাছড়া নামক স্থানে বাদি গ্রুপের ঘাটিতে আক্রমণ চালানো হয়। এতে অমৃত লাল চাকমা ওরফে বলি ওস্তাদসহ আরো দুইজন নিহত হন।

বক্তারা বলেন, সাবেক ইপিআর (ইষ্ট পাকিস্তান রাইফেলস) হাবিলদার অমৃত লাল চাকমা ওরফে ‘বলি ওস্তাদ’ ছিলেন শান্তিবাহিনীর একজন অভিজ্ঞ সামরিক প্রশিক্ষক। অস্ত্রগুরু খ্যাত বলি ওস্তাদের অধীনে শত শত শান্তিবাহিনী গেরিলা সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সে সময় তার নাম ছিল ক্যাপ্টেন অসাধ্য। তবে বলি ওস্তাদ নামে বেশি খ্যাত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা শান্তিবাহিনীর ইতিহাসে বলি ওস্তাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেযোগ্য হলেও বর্তমান জেএসএস তার অবদানের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। তার কথা তারা মুখেও আনে না।

তারা বলেন, সেই যে ১৪ জুন’৮৩ সশস্ত্র ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের মাধ্যমে ভ্রাতৃহত্যা শুরু হলো তারপর আমরা হারিয়েছি এম এন লারমাসহ একে একে আরো অনেককে। কিন্তু এ সংঘাতের দীর্ঘ ৪০ বছরে এসেও আমাদের মধ্যে এখনো ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে জর্জরিত। চলমান এ সংঘাতে আমরা মিঠুন, রূপক, অনিমেষ চাকমাসহ শত শত উদীয়মান নেতা-কর্মীকে হারিয়েছি। তাই এ সংঘাত বন্ধ হওয়া খুবই জরুরী।

সভায় বক্তারা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সন্তু লারমা ও জনসংহতি সমিতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির মুখে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত চলমান থাকলে শাসকগোষ্ঠিই লাভবান হবে। কাজেই সংঘাতের পথ পরিহার করে আসুন জুম্ম জাতির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলি।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More