পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চট্টগ্রামে তিন পাহাড়ি সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

0

চট্টগ্রাম : পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম(ডিওয়াইএফ), বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ।

“পররাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প” ছাড়া বাকি সকল বিষয়গুলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্বাচিত স্বশাসিত সংস্থার কাছে অর্পন করতে হবে” এ দাবিকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার (১ ডিসেম্বর ২০১৭) বিকাল ৩টার সময় শহীদ মিনার হতে হাজার খানিক ছাত্র, যুবক ও নারী ইউপিডিএফ এর পতাকা এবং বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন সহকারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।  মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব হয়ে চেরাগী পাহাড়ে এসে এক সমাবেশে মিলিত হয়।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি থুইক্যচিং মারমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুকৃতি চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুনয়ন চাকমা, চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রূপন চাকমাও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের চট্টগ্রাম মহানগরের নেত্রী মাদ্রি চাকমা প্রমুখ।

এছাড়া সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের চট্টগ্রাম মহানগরের নেতা সামিউল আলম।

সভাপতির বক্তব্যে থুইক্যচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় স্বাধীন রাজ্য ছিল। ইতিহাস তাই বলে। সর্বপ্রথম বৃটিশরাই এই স্বাধীনতাকে খর্ব করে। এর পরও তারা পাহাড়িদেরকে ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলেও এ শাসন ব্যবস্থা বলবৎ ছিল। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িরা অংশগ্রহণ করে এবং অনেকেই আত্মহুতিও দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ মর্যাদাকে খর্ব করে “নয়া উপনিবেশিক” কায়দায় শাসন পরিচালনা করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমানের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে সেনা শাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়, যা আজও বলবৎ রয়েছে।

তিনি অবিলম্বে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি মেনে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা এবং “পররাষ্ট্র, অর্থ, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প” ছাড়া বাকী সকল বিষয় পাবর্ত্য চট্টগ্রামের নির্বাচিত স্বশাসিত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করার জোর দাবি জানান।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের নেতা সামিউল আলম রিচি-পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেটলারদেরকে সমতলে পূনর্বাসন করা কঠিন কাজ নয় উল্লেখ করে বলেন, গত ১০ আগস্ট ২০১৬ইং বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রতিবেদনে এসেছে যে, বঙ্গোপসাগর ও চর অঞ্চলে প্রতিবছর ১৬ বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি স্থল ভুখন্ডের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এসব জেগে উঠা চর অঞ্চলের সেটলারদেরকে পুনর্বাসন করা সম্ভব অথচ তা না করে সেই চর অঞ্চলে রোহিঙ্গাদেরকে পুনর্বার্সন করার জন্যই সরকার ইতিমধ্যে নৌ-বাহিনীতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছে।

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা পার্বত্য চুক্তিকে সমালোচনা করে বলেন, যে চুক্তি ২০ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি এবং কখন কিভাবে হবে এর কোন নিশ্চয়তা কিংবা সময় সীমা নেই সে চুক্তি কখনোই বাস্তবায়িত হবার নয়। সরকার চুক্তি নিয়ে ভাওতাবাজি করছে বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।

তারা বলেন, চুক্তিপুর্বে অপারেশন “দাবানল” ছিল। আর এখন চলছে অপারেশন “উত্তরণ”। এ অপারেশন উত্তরণের কারণে বর্তমানে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম জ্বলছে। ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, খুন, গুম, অপহরণ, নিরীহ পাহাড়িদেরকে অস্ত্র গুঁজে দিয়ে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে জেলে পাঠিয়ে হয়রানী করা, তথা পাহাড়ি জাতিসত্তাকে চিরতরে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার জন্য সরকার এবং রাষ্ট্র তথা সেনা প্রশাসন অব্যাহতভাবে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, সম্প্রতি সেনা-ডিজিএফআইরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য “ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক” নামে একটি নব্য সন্ত্রাসী ‘গুপ্ত হত্যাকারী” বাহিনী সৃষ্টি করেছে। অতীতেও সেনা-ডিজিএফআইরা মুখোশবাহিনী, বোরকা বাহিনী ইত্যাদি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সেনা শাসনকে ন্যায্যতা দেওয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।
————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More