ফিরে দেখা ২০১৪: পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার ৫৬, নিহত ১
সিএইচটিনিউজ.কম
ডেস্ক রিপোর্ট: পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতন, ধর-পাকড়, বাড়িঘরে তল্লাশির ঘটনা আগের মতোই বহাল রয়েছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। পার্বত্য চুক্তির পরও এ পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি হয়নি।
ইউপিডিএফের প্রকাশিত তথ্য মতে ২০১৪ সালে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন ১৭ জন, নিরীহ গ্রামবাসী গ্রেফতার হয়েছেন ২৬ জন এবং জেএসএস (এমএন লারমা)-এর ৩ কর্মী-সমর্থক গ্রেফতার হন। এছাড়া সেনা হেফাজতে শারিরীক নির্যাতনে একজন মারা যান।
অপরদিকে, একটি বৌদ্ধ মন্দির সহ কমপক্ষে ৫৫টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় এবং জনপ্রতিনিধি সহ বেশ কয়েকজন হেনস্থা ও হয়রানির শিকার হন। এ সময় ১৫ জন নিরীহ ব্যক্তি শারিরীক নির্যাতনের শিকার হন। সেনা, বিজিবি ও পুলিশ কর্তৃক এসব ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও দীঘিনালার বাবুছড়ায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের প্রতিবাদ করায় বিজিবি’র দায়েরকৃত মামলায় ৪ নারীসহ ১০ জনকে আটক করা হয়।
নিজস্ব সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাবলীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নীচে তুলে ধরা হলো:
সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার:
১৬ মার্চ ২০১৪, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বাইল্যাছড়ি এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নবীন চাকমা (২৫) নামে এক ইউপিডিএফ সদস্যকে আটক করে। নবীন চাকমা লক্ষীছড়ি উপজেলার হাজাছড়ি গ্রামের সমীর দেওয়ানের ছেলে। আটকের পর তার হাতে অস্ত্র গুজে দিয়ে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১৫ এপ্রিল খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের জুমছড়া গ্রামের কার্বারী(গ্রাম প্রধান) পুষ্ট কুমার ত্রিপুরা(৪০), পিতা- খঞ্জল্যা ত্রিপুরা ও তার জামাই খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা গ্রামের চাইহ্লা প্রু মারমা (২২)-কে সেনাবাহিনী আটক করে।
জানা যায়, ঘটনার দিন পাহাড়িদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি (সাংগ্রাই) উপলক্ষে মানিকচন্দ্র পাড়ায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। পুষ্ট কুমার ত্রিপুরা এ খেলাধুলার অনুষ্ঠান আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এ উৎসব উপলক্ষে তার জামাই চাইহ্লা প্রু মারমাও সেখানে বেড়াতে যান। অনুষ্ঠান শেষে রাতে তারা বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। দিবাগত রাত অনুমানিক ১টার সময় সিন্দুকছড়ি জোনের একদল সেনা তার বাড়ি ঘেরাও করে শ্বশুর ও জামাই দু’জনকে ঘুম থেকে তুলে আটক করে নিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রুজু করে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
২৯ এপ্রিল ২০১৪ খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সদরের বেলতলী পাড়ার সোনাধন চাকমার ছেলে প্রবীল কুমার চাকমাকে (৪০) নিজ দোকান থেকে সেনাবাহিনী আটক করে।
আটক প্রবীল কুমার চাকমা সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।
ঘটনার দিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে লক্ষ্মীছড়ি সেনাজোন থেকে একদল সেনা উপজেলা সদরের বেলতলী পাড়ার নিজ দোকান থেকে প্রবীল কুমার চাকমাকে একটি দেশীয় তৈরি এলজি গুজে দিয়ে আটক করে জোনে নিয়ে যায়। এ সময় সেনারা বিভিন্ন দোকানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। আটকের পর রাত ১০টার দিকে তাকে লক্ষ্মীছড়ি থানায় হস্তান্তর করে অস্ত্র মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১২ মে ২০১৪ খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার মনাছড়ি গ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মানিকছড়ি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র থুইসি মারমা (১৪) সহ দুই কিশোরকে আটক করে। আটক অপর জনের নাম অংসি মারমা (১৫)। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মানিকছড়ি ক্যাম্প হতে একদল সেনা মনাছড়ি গ্রামে অপারেশনে যায়। এ সময় উক্ত দুই কিশোর পাড়ার আমগাছের তলায় বসে আম খাচ্ছিল। সেখান থেকে কোন কারণ ছাড়াই সেনারা তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আইয়ুব আলী ও গ্রামের মুরুব্বীদের মাধ্যমে রাত ১১টার দিকে তাদের দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১৭ মে ২০১৪ খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার উল্টাছড়ি ইউনিয়নের প্রফুল্ল পাড়া থেকে রাতে ইউপিডএফ সদস্যসহ ৩ জনকে আটক করে সেনাবাহিনী। আটককৃতরা হলেন- মরাটিলা এলাকার পদ্মিনী পাড়ার বাসিন্দা ইউপিডিএফ সদস্য সুনীল বিকাশ ত্রিপুরা ওরফে কাতাং (৩৬), পিতা- সুখেন্দু ত্রিপুরা এবং একই গ্রামের মৃত নবকুমার ত্রিপুরার ছেলে সুরেন ত্রিপুরা (২৪) ও মিলন ভূষণ ত্রিপুরার ছেলে মহেন ত্রিপুরা (২৫)।
জানা যায়, ঘটনার দিন সুনীল বিকাশ ত্রিপুরা সাংগঠনিক কাজ শেষে স্থানীয় এলাকার যুবক সুরেন ত্রিপুরা ও মহেন ত্রিপুরাকে সাথে নিয়ে শুক্রবার রাতে উপজেলার উল্টাছড়ি ইউনিয়নের প্রফুল্ল পাড়ায় ঘুমাতে যান। সেখানে একটি বাড়িতে তারা ঘুমিয়েছিলেন। শনিবার ভোররাত ৪টার দিকে পানছড়ি সাব জোনের মেজর মেহেদি হাসান রাসেলের নেতৃত্বে একদল সেনাবাহিনী ওই বাড়িতে হানা দিয়ে তাদেরকে ঘুম থেকে তুলে আটক করে নিয়ে যায়।
আটকের পর ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তাদের হাতে অস্ত্র গুজে দিয়ে ছবি তোলার পর তাদেরকে পানছড়ি থানায় হস্তান্তর করে অস্ত্র মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১৮ জুন বুধবার দুপুরে রাঙামাটির বাঘাইছড়ির তদেকমারা কিজিং(দুই টিলা) এলাকা থেকে সেনাবাহিনী পুলিশ সমেত গিয়ে ৭ ব্যক্তিকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন, ১. বিটন চাকমা (২৫), পিতা-তাপস চাকমা, ২.সুমঙ্গল চাকমা (৫৫) পিতা- মৃত কৃষ্ণ কুমার চাকমা, গ্রাম- পহনছড়ি, মেরুং ইউপি, দীঘিনালা ৩. রাসেল চাকমা (১৯) পিতা- জ্ঞানেন্দু চাকমা, গ্রাম- রূপকারী, ৪. বাঘ্যা চাকমা (১৭) পিতা- অনাদি কুমার চাকমা, গ্রাম- বাজেপেদা ছড়া, মেরুং, দীঘিনালা, ৫. শুভমঙ্গল চাকমা (২৪) পিতা দেব কুমার চাকমা, গ্রাম পহনছড়ি, মেরুং, দীঘিনালা, ৬. স্মৃতি ময় চাকমা (৩৫) পিতা হনুমান চাকমা, গ্রাম- বাজেপেদা ছড়া, মেরুং দীঘিনালা ও ৭. রিকন চাকমা (২৬) পিতা করুণাময় চাকমা, গ্রাম- গলাছড়ি, রূপকারী বাঘাইছড়ি।
ঘটনার দিন তদেকমারা কিজিঙে বৌদ্ধ ভাবনা কুটির নির্মাণে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের বাধাদানের প্রতিবাদে তদেকমারা কিজিঙ উপাসক-উপাসিকা পরিষদ ও এলাকাবাসী অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চলাকালে একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এমন অভিযোগ করে তদেকমারা কিজিঙ এলাকায় অবস্থিত দোকানগুলোতে হানা দেয় সেনাবাহিনী তাদের আটক করে। আটকের পর তাদেরকে বাঘাইছড়ি থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ৩ জনকে ছেড়ে দিয়ে বিটন, স্মৃতিময়, কিরণ ও আশীষ চাকমা ওরফে বাঘ্যাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে রাঙামাটি জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া ২৩ জুন তারা রাঙামাটি জেলা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
১৮ জুন ২০১৪ বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১:১৫টার সময় খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের গোঁয়েইছড়ি গ্রাম থেকে বুধবার দিবাগত রাতে ২ পাহাড়ি যুবককে আটক করে সিন্দুকছড়ি জোনের সেনাবাহিনী। আটককৃতরা হলেন- নিহার বিন্দু চাকমা (২০) পিতা আজীবন চাকমা ও ছয়ন চাকমা (২১) পিতা- লঙ্কেশ্বর চাকমা।
ঘটনার দিন সিন্দুকছড়ি জোনের একদল সেনা সদস্য রাত আনুমানিক ১:১৫টার সময় সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গোঁয়েইছড়ি গ্রামে যায়। সেখানে যাওয়া পর সেনারা ওয়ার্ড মেম্বার নীল কুমার চাকমা (৪৫) পিতা লশিষ্ট মুনি চাকমা ও সমীরণ চাকমা (২৮) পিতা- মঙ্গল কুমার চাকমা-এর বাড়ি তল্লাশি চালায়। এরপর চলে যাবার সময় সেনারা স্থানীয় চঞ্চল কার্বারীর দোকান থেকে নিহার বিন্দু চাকমা ও ছয়ন চাকমাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় তারা ওই দোকানে টেলিভিশনে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখছিলেন।
আটকের পর সেনাদের নির্দেশমত পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে নীল কুমার চাকমা সহ স্থানীয় মুরুব্বীরা সিন্দুকছড়ি জোনে গেলে সেখান থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
২৬ জুন ২০১৪, সকাল ৯টার দিকে মোটর সাইকেলযোগে সিন্দুকছড়ি যাওয়ার পথে গুইমারা ব্রিগেডের সেনা সদস্যরা মোটর সাইকেল আটকিয়ে ইউপিডিএফ সদস্য সমীরণ চাকমা (৩০) পিতা মৃত বজেয়্য চাকমা, গ্রাম- বটগাছ পাড়া, দুল্যাতলী, লক্ষীছড়ি ও জয়েস দেওয়ান ওরফে বিশাল(২৭) পিতা কিনারামদেওয়ান, গ্রাম থুইল্যা কার্বারী পাড়া, লক্ষ্মীছড়ি কে আটক করে। সেনারা তাদের কাছ থেকে কোন কিছু না পেলেও গুইমারা থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। পরে তারা জামিনে মুক্তি পান।
৪ জুলাই ২০১৪, শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার শনখোলা পাড়া থেকে বড়াদাম ক্যাম্পের ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ আলাউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-এর দীঘিনালা থানা শাখার দপ্তর সম্পাদক জীবন চাকমা(১৭) ও সদস্য সুনীল চাকমা(১৭)-কে আটক করে। এ সময় তারা ১৫-১৬ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষে কুপনের সাহায্যে জনগণের কাছ থেকে অর্থ উত্তোলন করছিলেন।
আটকের পর সেনাবাহিনী তাদেরকে দীঘিনালা থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠায়।
৮ জুলাই ২০১৪, মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার হরিধন মগ পাড়া ও পূর্ব খেদারাছড়া গ্রাম থেকে সেনাবাহিনী এক গ্রাম প্রধান সহ ৩ নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন হরিধন মগপাড়ার পাড়া প্রধান(কার্বারী) মংশি প্রু মারমা(৩৭) পিতা-মংহ্লা প্রু মারমা ও পূর্ব খেদারাছড়ার আঁউস্যে মনি চাকমা(৩৫), পিতা- লক্ষ্মী মোহন চাকমা ও ভূট্টো চাকমা(২৩) পিতা-রামচন্দ্র চাকমা(রাম্যা)। মাটিরাঙ্গা সেনা জোন থেকে একদল সেনা সদস্য হরিধন মগ পাড়া ও পূর্ব খেদারাছড়া গ্রামে হানা দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে ভুট্টো চাকমাকে রেখে বাকীদের ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়।
২৩ জুলাই ২০১৪ বুধবার সকালে লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনারা দুল্যাতলী ইউনিয়নের রান্যামা ছড়া এলাকা থেকে খিলুঅং মারমা (৪৫) পিতা মৃত চাইলা প্রু মারমা ও রূপায়ন চাকমা ওরফে আপন(২২) পিতা লাইগ্যা চাকমা, গ্রাম থুইল্যা কার্বারী পাড়া কে আটক করে। তাদেরকে অস্ত্র মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
একইদিন রাতে সেনারা সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের গোয়েইছড়ি গ্রাম থেকে সমীরণ চাকমা(৩০) পিতা মৃত মঙ্গল কুমার চাকমাকে আটক করে। সেদিনই তিনি খাগড়াছড়ি কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান।
৬ আগস্ট ২০১৪, বুধবার বিকাল আনুমানিক ৫টার দিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজার থেকে ১০ম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রসহ ২ কিশোরকে আটক করে সেনাবাহিনী। আটককৃতরা হলো- চিকন চান চাকমা(১৬) ও অংশি প্রু মারমা(১৭)। এর মধ্যে চিকন চান চাকমা গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র। সে মানিকছড়ি উপজেলা সদরের কিরণ চাকমার ছেলে। আর অংশি প্রু মারমার বাড়ি গুইমারার বটতলীতে।
ঘটনার দিন চিকন চান চাকমা ও অংশি প্রু মারমা গুইমারা বাজারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় হঠাৎ একদল সেনা সদস্য গিয়ে তাদেরকে আটক করে নিয়ে যায়। আটকের পর তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামল রুজু করে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
৮ আগস্ট ২০১৪ শুক্রবার খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারায় বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার দপ্তর সম্পাদক রিয়েল ত্রিপুরাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ হামলায় কমপক্ষে ১২ জন পিসিপি কর্মী ও স্কুল-কলেজের ছাত্র আহত হয়।
গুইমারা বাজার থেকে সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হওয়া গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র চিকন চান চাকমা (১৬) ও গুইমারার বটতলী গ্রামের অংশি প্রু মারমার(১৭) নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গুইমারা থানা শাখা সেদিন বেলা ২টায় এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। গুইমারার রামেসু বাজার মুখ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে গুইমারা বাজার প্রদক্ষিণ শেষে প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলাকালে বিনা কারণে সেনাবাহিনী পুলিশ সমেত এসে সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের উপর হামলা ও লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় সেনা সদস্যরা রিয়েল ত্রিপুরাকে মারধর করার পর আটক করে সিন্দুকছড়ি জোনে নিয়ে যায়। সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর পরদিন শনিবার বিকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
১০ আগস্ট ২০১৪ রবিবার খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায় সেনাবাহিনীর নির্যাতনে জেএসএস(এমএন লারমা)-এর সদস্য তিমির বরণ চাকমা ওরফে দুরন(৫২) মারা যায়।
জানা যায়, ঘটনার আগের দিন ৯ আগস্ট ২০১৪ শনিবার গভীর রাতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা লেমুছড়া নামক গ্রামে অপারেশনে যায়। রাতভর গ্রামটি ঘিরে রাখার পর পরদিন ভোর ৬টায় সেনা সদস্যরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে দুরন, নকুল ত্রিপুরা, নিশি মনি চাকমা(৪০) ও তার ছেলে অমর কান্তি চাকমাকে(১৮) আটক করে বেদম প্রহারের পর মাটিরাঙ্গা সেনাজোনে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের উপর আবারো নির্মম নির্যাতন চালানো হলে এতে দুরন চাকমা মারা যান। আটক বাকী ৩ জনকে মিথ্যা মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১২ আগস্ট ২০১৪ খাগড়াছড়ির গুইমারা থানাধীন জালিয়া পাড়া থেকে সেনা সদস্যরা কংরা মারমা(১৮) নামে এক নিরীহ পাহাড়ি যুবককে আটক করে। তিনি পাতাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম পিলাভাঙা গ্রামের ক্যজরী মারমার ছেলে।
ঘটনার দিন সকালে কংরা মারমা গুইমারা বাজারে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে বিকাল ৩টার দিকে জালিয়া পাড়ার একটি দোকান থেকে কোন কারণ ছাড়াই সেনাবাহিনী তাকে আটক করে নিয়ে যায়। আটকের পর তাঁকে গুইমারা থানায় হস্তান্তর করে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয়।
১৩ আগস্ট ২০১৪ বুধবার সকালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বেলছড়ি ইউনিয়নের অন্তর্গত হরিধন মগপাড়া থেকে মংসাথোয়াই মারমা (৩৫) পিতা মৃত উথোয়াই মারমা ও অংক্যচাই মারমা(৪০) পিতা মৃত সুইহ্লা প্রু মারমা-কে সেনাবাহিনী আটক করে।
জানা যায়, ঘটনার আগের দিন রাতে হরিধন মগপাড়ার পার্শ্ববর্তী বটতলীতে মো: আলী নামে এক ব্যক্তির চা দোকানের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলমকে (৩০) কে বা কারা কুপিয়ে আহত করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের একদল সেনা সদস্যরা হরিধন মগপাড়ায় গিয়ে নিজেদের বাড়ি থেকে উক্ত দুই ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়। আটকের পর তাদেরকে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
২৭ আগস্ট বুধবার সকাল ১১টার দিকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার মাইসছড়ি বাজার থেকে ইউপিডিএফ সদস্য বসু চাকমাকে(৪০) সেনাবাহিনী আটক করে। বসু চাকমা সাংগঠনিক কাজে মাইসছড়ি বাজারে গেলে সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের পর সন্ধ্যায় মহালছড়ি থানায় হস্তান্তর করে পরদিন বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে তাকে মহালছড়ি থানা থেকে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
৩০ আগস্ট শনিবার ভোররাত ৪টার দিকে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের গোঁয়েইছড়ি গ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অমল চাকমা(২৭) পিতা মৃত মধু চাকমা নামে এক নিরীহ গ্রামবাসীকে আটক করে। আটকের পর তার হাতে একটি গাদা বন্দুক গুঁজে দিয়ে সিন্দুকছড়ি জোনে নিয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্ট ছিল না।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, শনিবার খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার নালকাবা এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য ইত্তুক্যা চাকমা ওরফে দুর্জয় (৩৫) নামে এক ইউপিডিএফ সদস্যকে আটক করে সেনাবাহিনী।
ঘটনার দিন দুপুর ১টার দিকে পানছড়ির নালকাবা এলাকায় ইউপিডিএফ সদস্য দুর্জয় চাকমা এলাকার জনগণকে নিয়ে সাংগঠনিক মিটিঙ করছিলেন। এ সময় পানছড়ি জোন থেকে একদল সেনা বাড়িটি ঘেরাও করে তাকে আটক করে জোনে নিয়ে যায়। সেখানে শারিরীক নির্যাতনের পর সেনারা তাকে পানছড়ি থানায় হস্তান্তর করে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বিকালে তাকে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার:
১১ মার্চ ২০১৪, মঙ্গলবার খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার ১০ নম্বর এলাকা থেকে ইউপিডিএফ সদস্য এলিন চাকমা(১৯)-কে আটক করে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ। সে মাটিরাঙ্গা উপজেলার ব্যাঙমারা এলাকার পিতা-জ্যোতিময় চাকমার ছেলে ।
৩ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরের বাসস্টেশন এলাকা থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য লালন চাকমাকে আটক করে দীঘিনালা থানা পুলিশ।
লালন চাকমা সাংগঠনিক কাজ শেষে দীঘিনালা বাসস্টেশন এলাকার একটি দোকানে বসেছিলেন। এসময় দীঘিনালা থানা থেকে একদল পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। আটকের পর তাকে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
১২ অক্টোবর দপুর সোয়া ১টার দিকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা শাখার সহ সভাপতি সুসময় চাকমাকে(৩৮) পুলিশ আটক করে। তিনি তারাবন ছড়া গ্রামের হরেন্দ্র চাকমা’র ছেলে। আটকেরক পর তাকে পানছড়ি থানায় নিয়ে গিয়ে পুলিশের অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় জড়িত করে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
১৮ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলা সদরে কলাবাগান এলাকা থেকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কর্মী গণমিত্র চাকমা (১৮) আটক করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে কোন ওয়ারেন্ট ছিল না। আটক গণমিত্র চাকমা নপিদা পাড়ার বাসিন্দা গজেন্দ্র চাকমার ছেলে। তিনি পিসিপি’র পানছড়ি থানা শাখার সদস্য। আটকের পর তাকে পুলিশের অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় জড়িত করে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
২৫ অক্টোবর শনিবার, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে পাই কুমার ত্রিপুরা(২৬) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। আটক পাই কুমার ত্রিপুরা মাটিরাঙ্গা ১০নং রাবার বাগান এলাকার বিদ্যা মোহন কার্বারী পাড়ার মৃত পুন্য মোহন ত্রিপুরার ছেলে। আটকের পর তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ।
১৮ নভেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার, খাগড়াছড়ির পানছড়ি বাজার এলাকা থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উপজেলা শাখার সহ সভাপতি রহিন ত্রিপুরাকে(২৫) আটক করে পুলিশ। তিনি মরাটিলা গ্রামের জনাধন ত্রিপুরার ছেলে। আটকের পর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা রুজু করে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে পাঠানো হয়।
শারিরীক নির্যাতন-বাড়িঘর তল্লাশি-হয়রানি:
৮ জানুয়ারি ২০১৪ বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলাধীন বর্মাছড়ি ইউনিয়নের বাকছড়ি গ্রামের বাসিন্দা মন কুমার চাকমা(৪৫) নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে সেনাবাহিনী তল্লাশি চালায়। ঐ দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার সময় লক্ষ্মীছড়ি জোনের অধীন শুকনাছড়ি ক্যাম্প থেকে ক্যাপ্টেন এফরানের নেতৃত্বে একদল সেনা বাকছড়ি পাড়ায় গিয়ে মন কুমার চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর সেনারা বিনা অনুমতিতে বাড়িতে ঢুকে তন্ন তন্ন করে বাড়ি তল্লাশি চালায়। এ সময় সেনারা তার স্ত্রীর কাছ থেকে মন কুমার চাকমাকে জিজ্ঞেস করে। তবে মন কুমার চাকমা এ সময় বাড়িতে ছিলেন না।
১০ জানুয়ারি ২০১৪ খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার লেমুছড়ি ও পাহাড়তলীতে সেনাবাহিনী অভিযানের নামে সাধারণ পাহাড়ি জনগণকে হয়রানি করে। ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে মহালছড়ি উপজেলার লেমুছড়ি ও পাহাড়তলী গ্রামে মহালছড়ি জোনের একদল সেনা সদস্য অভিযান চালায়। সেনারা পাহাড়তলী গ্রাম ঘেরাও করে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করে ও বাড়ি তল্লাশি চালায়। এ সময় সেনারা উক্ত গ্রামের সুমন্ত চাকমা নামে একজনকে আটক করলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয়।
একইভাবে সেনা সদস্যরা লেমুছড়ি গ্রামে অভিযান চালিয়ে গ্রামের নিরীহ লোকজনকে হয়রানি ও জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে এবং এলাকার ছাত্র-যুবকদের ধাওয়া করে। মহালছড়ি জোনের ওয়ারেন্ট অফিসার মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে এ হয়রানিমূলক অভিযান চালানো হয় বলে জানা যায়।
১১ জানুয়ারি ২০১৪, শনিবার খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলীতে মানিকছড়ি সাবজোন ও বাটনাতলী ক্যাম্প থেকে একদল সেনা সদস্য ইউপিডিএফ নেতা ক্যহ্লাচিং মারমার বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় সেনারা বাড়ির লোকজনের কাছ থেকে ক্যহ্লাচিং মারমাকে জিজ্ঞাসা করে নানা হয়রানির চেষ্টা করে । সেনারা ক্যহ্লাচিং মারমার বড় ভাই ও বাটনাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজাইহ্লা চৌধুরীকেও ডেকে নিয়ে যায়। তবে বাড়িতে উপস্থিত না থাকায় ক্যহ্লাচিং মারমা গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হন।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, সোমবার দুপুর ১টার সময় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার ২নং হাফছড়ি ইউনিয়নের ছোটকালাপানি গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়িদের কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। যাদের বাড়িঘর তল্লাশি চালানো হয় তারা হলেন, ১. মধু রঞ্জন চাকমা (৬৫) পিতা বুজ্যা চাকমা, ২. সমীচিন তালুকদার (৪৫) পিতা মৃত রত্ন কিশোর তালুকদার, ৩. সন্তু চাকমা (৩৮) পিতা শশী কুমার চাকমা ও ৪. সমর জ্যোতি চাকমা (৩৫) পিতা মৃত্যুঞ্জয় চাকমা।
ঐ দিন দুপুর ১টার দিকে সিন্দুকছড়ি জোনের থেকে একদল সেনা ছোট কালাপানি গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসী খোঁজার নামে তারা বিনা অনুমতিতে উক্ত চার গ্রামবাসীর বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক তল্লাশি চালায় ও জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। ব্যাপক তল্লাশির পরও অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে পরে তারা ক্যাম্পে ফিরে যায়।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নিরাপদ তালুকদার ও পরেশ চাকমা ভূয়াছড়ি ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জাভেদ কর্তৃক হেনস্থার শিকার হন। ঐ দিন নিরাপদ তালুকদার ও পরেশ চাকমা কমলছড়ি ইউনিয়নের আমতলির নিজ নিজ বাড়ি থেকে ভান্তেদের সিয়ং দিতে মোটর সাইকেলে করে পার্শ্ববর্তী বৌদ্ধ কুটিরে যাবার পথে টহলরত একটি সেনা পিকআপ ভ্যান থেকে এক সেনা কমান্ডার তাদেরকে থামার জন্য সিগন্যাল দেয়। এ সময় সেনা কমান্ডারটি কোথায় যাচ্ছ বলে তাদের কাছ থেকে জানতে চায়। তারা কুটিরে যাচ্ছি বলে উত্তর দিলে সেনা কর্মকর্তাটি বলেন, ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে সেটা কি জানেন? তার কথার উত্তরে পরেশ চাকমা বলেন- তা জানি, কিন্তু ১৪৪ ধারা জারি হলে যে ধর্মকর্মও করা যাবে না এটাতো জানি না। এ কথা বলার সাথে সাথে ওই সেনা কমান্ডার আমাদেরকে গাড়ি থেকে নামতে বলেন এবং গালিগালাজ করতে থাকেন। গাড়ি থেকে নামার পর আমাদের দুইজনকে আলাদা করা হয়। এ সময় সেনা কমান্ডারটি পরেশ চাকমাকে গালে তিনটা চড় মারেন। পরে আমাদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন গালি-গালাজ করে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী কমলছড়ি ও বেতছড়ি গ্রামে পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলার পর প্রশাসন কমলছড়ি ইউনিয়ন ও মহালছড়ি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করায় এলাকায় সেনা টহল বাড়ানো হয়।
৯ মে ২০১৪, শুক্রবার ভোরাতে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের গুজাপাড়ায় ঘরে ঘরে সেনা সদস্যরা তল্লাশি চালায়।
ঐ দিন মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলী ক্যাম্প হতে জনৈক সুবেদারের নেতৃত্বে ১১ জনের একদল সেনা শুক্রবার ভোররাত আনুমানিক ৪টার সময় গুজাপাড়ায় হানা দেয়। এ সময় সেনারা প্রথমে মিংক্রই ত্রিপুরা (৬০) পিতা মৃত মহিষচন্দ্র ত্রিপুরার বাড়িতে গিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে এবং তাকে ঘুম থেকে তুলে বাড়ির বাইরে নিয়ে এসে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করে। সেনারা তাকে সন্ত্রাসী ধরার জন্য তাদের যেতে হবে বললে তিনি ‘ আমি বৃদ্ধ মানুষ, তাই যেতে পারবো না’ বলে সেনাদের জানিয়ে দেন। পরে সেনারা তাকে বন্দুক তাক করে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করে। বাড়ি থেকে আনুমানিক ৫০০ গজ দূরে যাওয়ার পর তিনি সেনাদের ফাকিঁ দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
এরপর সেনারা জ্ঞানেন্দ্র ত্রিপুরা(৫০) পিতা থুঅংগ্য ত্রিপুরা’র বাড়ি ঘেরাও করে একইভাবে তাকেও বন্দুক তাক করে রেইনকোট পরিয়ে দিয়ে তাদের সাথে যেতে বাধ্য করে। বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ যাওয়ার পর তিনি ‘যেতে পারবো না’ বলে সেনাদের অনুরোধ করলে সেনারা পা দিয়ে লাথি মেরে সেখান থেকে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে সেনারা দক্ষিণ গুজাপাড়ার বাসিন্দা বীর কুমার চাকমা (৭৫) পিতা মৃত রমনী মোহন চাকমা, তার ছেলে গুজা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক চন্দ্র কেতু চাকমা ও মালা চাকমা নামে এক বিধবা নারীর বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় ও জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। সেনারা প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে সেখানে অবস্থান করে তল্লাশি ও লোকজনকে হয়রানি করেছে বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। ব্যাপক তল্লাশির পরও কোন সন্ত্রাসীকে ধরতে না পেরে এবং অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে সকাল ৭টার দিকে সেনারা ক্যাম্পে ফিরে যায়।
১৬ জুন ২০১৪ সোমবার রাত ১১টার দিকে গুইমারা ব্রিগেড থেকে একদল সেনা প্রতাপ সিং চাকমা(৫০) পিতা-উপেন্দ্র চাকমা নামে এক ব্যক্তির বাড়ি তল্লাশি চালায়। এ সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। সেনা সদস্যরা তাঁর অনুপস্থিতিতে বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। তবে অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে পরে সেনারা ক্যাম্পে ফিরে যায়।
২৩ জুন ২০১৪ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের যতীন্দ্র কার্বারী পাড়ায় লক্ষ্মীছড়ি জোনের সেনারা ঘরে ঘরে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। এসময় সেনারা বেশ কয়েকটি দোকানেও ব্যাপক তল্লাশি চালায়।
লক্ষ্মীছড়ি সেনা জোন থেকে জনৈক ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বে দুই পিকআপ সেনা সদস্য এ তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করে। সেনারা সন্ত্রাসী খোঁজার নামে পাড়ার ৮ ব্যক্তির ঘর ও ৬ ব্যক্তির দোকানে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। সেনারা ইচ্ছেমত ঘরে ও দোকানের ভিতর ঢুকে তন্নতন্ন করে তল্লাশি করে ও জিনিসপত্র সম্পর্ণ তছনছ করে দেয়।
যাদের ঘরে তল্লাশি চালানো হয় তারা হলেন, ১. যুগেন্দ্র চাকমা (৫৫), পিতা- মৃত নতুন কুমার চাকমা, ২. তরুণী চাকমা(৩৫)পিতা- যুগেন্দ্র চাকমা, ৩.গুড়িক্যা চাকমা(৩০) পিতা কালাবাঁশি চাকমা, ৪. কৃষ্ণ চন্দ্র চাকমা (৩৫) পিতা- কালাবাশিঁ চাকমা, ৫. শিমুল চাকমা (২৮) পিতা মধুচন্দ্র চাকমা, ৬. সুমন চাকমা (৩২) পিতা তামুলুক্যা চাকমা, ৭. যোগেন্দ্রসেন চাকমা(৫৫) পিতা ভূবনজয় চাকমা ও ৮. ব্যাঙঙো চাকমা (৩৫) পিতা খল্যা চাকমা।
এছাড়া যাদের দোকানে সেনারা তল্লাশি চালায় তারা হলেন, ১. বিনোদ বিহারী চাকমা (৪৩) পিতা ধন্যা চাকমা, ২. রাজ কুমার চাকমা (৭০) পিতা-অজ্ঞাত, ৩. নিশি কুমার চাকমা (৫৫) পিতা- চন্দ্র মোহন চাকমা, ৫. বাধি চাকমা (৫০) পিতা-অজ্ঞাত ও ৬. রবীন্দ্র চাকমা (৫৫), পিতা- রমনী মোহন চাকমা। সেনারা বিনোদ বিহারী চাকমা ও রবীন্দ্র চাকমার কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায়। প্রায় ঘন্টাখানিক তল্লাশি চালিয়েও অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে পরে সেনারা জোনে ফিরে যায়।
১১ জুলাই ২০১৪ শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সেনাবাহিনী যৌথ খামার গ্রামের খুকুমনি চাকমা(১৮), পিতা কামিনী চাকমা, রূপায়ন চাকমা(২৪) পিতা লক্ষী কুমার চাকমা, এরাকাজি চাকমা (২৩)পিতা গুলু চাকমা, থবা চাকমা (২২) পিতা বড়চাবি চাকমা ও কলেন্ত ত্রিপুরা (২৫) পিতা পাচি ত্রিপুরা-কে শারিরীক নির্যাতন করে।
ঘটনার দিন সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর একদল সদস্য শুক্রবার রাতে মাটিরাঙ্গার ব্যাঙমারা থেকে নিখোঁজ হওয়া ৪ বাঙালি শ্রমিককে খোঁজার নামে যৌথ খামার নামক গ্রামে অপারেশনে যায়। দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে সেনারা ওই গ্রামে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ ভাবনা কুটির ঘেরাও করে সেখানে আষাঢ়ী পূর্ণিমা উপলক্ষে অষ্টশীল পালনরত খুকুমনি চাকমা, রূপায়ন চাকমা, এরাকাজি চাকমা, থবা চাকমাকে কুটির থেকে বের করে নানা হয়রানিমুলক প্রশ্ন জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বেদম মারধর করে। একই সময় সেনারা কলেন্ত ত্রিপুরা(২৫) পিতা-ফাচি ত্রিপুরা নামে অপর এক ব্যক্তিকেও মারধর
১৭ জুলাই ২০১৪ খাগড়াছড়ির গুইমারা থানাধীন বাইল্যাছড়ির তৈমাথাই ১নং রাবার এলাকায় সেনবাহিনী ২০০ নং তৈমাথাই মৌজার হেডম্যান বিমল কান্তি ধামাই(৫২) পিতা- রুপেরাম ধামাই-এর বাড়ি সহ ৫টি বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এসময় আরো যাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয় তারা হলেন- আপ্রুসি মারমা(৩২) পিতা- তানিঅং মারমা, তিনি স্থানীয় দোকানদার, কাপলি ত্রিপুরা(৩৫) পিতা মৃত পূর্ণজয় ত্রিপুরা, হিরণজয় ত্রিপুরা(২৫) পিতা মৃত যতীন চন্দ্র ত্রিপুরা ও ভৃগুরাম ত্রিপুরা(৩৫) পিতা মৃত শরৎ চন্দ্র ত্রিপুরা।
২৭ জুলাই ২০১৪ রবিবার রাত আনুমানিক ১২টার সময় খাগড়াছড়ির গুইমারা থানাধীন বাইল্যাছড়ির তৈমাথাই ১নং রাবার বাগান এলাকায় সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়িদের বাড়িঘরে ব্যাপক তল্লাশি এবং এক স্কুল ছাত্র সহ ৩ জনকে মারধরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা সেনা জোন থেকে ক্যাপ্টেন কাওসারের নেতৃত্বে ৪টি গাড়ীতে করে ৬০/৭০ জনের একদল সেনা রবিবার রাত আনুমানিক ১২টার সময় বাইল্যাছড়ির ১নং রাবার বাগানে অবস্থিত পাহাড়ি গ্রামে হানা দেয়। এ সময় সেনারা সন্ত্রাসী খোঁজার নামে প্রথমে বাড়িগুলো ঘেরাও করে। এরপর তারা বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা লোকজনকে(নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে) টেনে হেঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে নানা জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায়।
যাদের বাড়িঘরে তল্লাশি চালানো হয় তারা হলেন- ১. মংসা মারমা(১) বয়স:৪০, পিতা মৃত মংপ্রু মারমা, ২. কৃষ্ণ ত্রিপুরা(৫০) পিতা মৃত কর্মচাঁন ত্রিপুরা, ৩. মানেন্দ্র ত্রিপুরা (৩৫) পিতা ধন কুমার ত্রিপুরা, ৪. জগদীশ ত্রিপুরা (৩২) পিতা ধন কুমার ত্রিপুরা, ৫. মংচাইংগ্য মারমা (৩৩) পিতা কংজইরী মারমা, ৬. সন্ধ্যা রাণী বৈষ্ণব (৪৭) পিতা মৃত জিবানন্দ বৈষ্ণব, ৭. সুলেন্দ্র বৈষ্ণব (৪০) পিতা মৃত জিবানন্দ বৈষ্ণব, ৮. চন্দ্র কেতু ত্রিপুরা (৪২) পিতা মৃত সুরেন্দ্র ত্রিপুরা, ৯. ক্যসাই মারমা (৫০) পিতা মৃত মংচিংহ্লা প্রু মারমা, ১০. সভানন্দ বৈষ্ণব (৪২) পিতা জিবাবন্দ বৈষ্ণব, ১১. মংসা মারমা(২), বয়স: ৪০, পিতা মংসি মারমা ও ১২. ধনঞ্জয় ত্রিপুরা (৩৮) পিতা মৃত কিঞ্চি কুমার ত্রিপুরা।
এ সময় সেনারা ক্যসাই মারমা ছেলে মংসাথোয়াই মারমা (১৭), মংসা মারমা(১)’র ছেলে উসাজাই মারমা(১৯) ও মংসা মারমা(২)’র ছেলে মাটিরাংগা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র থুঅংজ মারমাকে(১৬) মারধর করে।
৬ আগস্ট ২০১৪, বুধবার ভোররাতে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়িদের কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশির ঘটনা ঘটে। সিন্দুকছড়ি জোনের এক দল সেনা পাতাছড়া ইউনিয়নের পিলাভাঙা ও তবলা পাড়ায় ৬টি বাড়িতে এ তল্লাশি চালায়।
জানা যায়, ঐ দিন সিন্দুকছড়ি জোনের একদল সেনা বুধবার ভোর আনুমানিক ৬টার দিকে সন্ত্রাসী খোঁজার নামে পিলাভাঙা ও তবলা পাড়ায় হানা দেয়। এ সময় সেনারা পিলাভাঙা গ্রামের প্রতাপ সিংহ (৫০) পিতা উপেন্দ্র চাকমা, আশানিয়া চাকমা(৩৫) পিতা কর্মধন চাকমা ও বড়ভারত চাকমা(৩৩) পিতা মৃত মাথারাঙা চাকমা’র বাড়ি তল্লাশি চালায়।
একই সময় সেনারা পার্শ্ববর্তী তবলা পাড়ার গ্রাম প্রধান (কার্বারী) সাজেং মারমা(৫৩) পিতা মৃত আম্রা মারমা ও তার পুত্র রুহ্লাঅং মারমা(৩০) এবং মম মার্মা(৪২) পিতা চহ্লাঅং মারমা’র বাড়ি তল্লাশি চালায়। ব্যাপক তল্লাশির পরও অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে পরে সেনারা ক্যাম্পে ফিরে যায়।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের পিলাভাঙা গ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক গভীর রাতে দু’টি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
সূত্র জানায়, ঐ দিন দিবাগত রাত আনুমানিক ২:৩০টার দিকে সিন্দুকছড়ি জোন থেকে একদল সেনা সদস্য পিলাভাঙা গ্রামে গিয়ে সন্ত্রাসী ও অস্ত্র খেঁজার নামে ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রতাপ সিংহ চাকমা(৫০) পিতা-উপেন্দ্র চাকমা ও মনাবি চাকমা (৩৫) স্বামী মৃত জামুরো চাকমা-এই দু’জনের বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালায় এবং বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। তবে ব্যাপক তল্লাশির পরও অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে সেনারা পরে ক্যাম্পে ফিরে যায়।
২৪ নভেম্বর ২০১৪, সোমবার রাতে রাঙামাটির নান্যাচর উপজেলার ঘিলাছড়ি বাজারে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘিলাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সুমিতা চাকমার দোকানসহ চারটি দোকানে তল্লাশি চালায়। দোকানের মালিকদের মধ্যে অন্যরা হলেন কৃষ্ণবাঁশী চাকমা(৩৫), মঙ্গল চাকমা(২৬) ও মতিলাল চাকমা।
ঐদিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় রাঙামাটি ব্রিগেড ও ঘিলাছড়ি ক্যাম্পের একদল সেনা ঘিলাছড়ি বাজারে গিয়ে সুমিতা চাকমা, কৃষ্ণবাঁশী চাকমা, মঙ্গল চাকমা ও মতিলাল চাকমার দোকানে গিয়ে প্রথমে লাথি দিয়ে দোকানের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। পরে ঘুমন্ত অবস্থায় দোকান মালিকরা খবর পেয়ে দোকান খুলে দিলে সেনা সদস্যরা দোকানের ভেতর ঢুকে তল্লাশি চালায়। এ সময় সেনারা দোকান মালিকের কাছে থাকা মোবাইলগুলো কেড়ে নিয়ে সংরক্ষিত ফোন নাম্বারগুলো চেকিং করে। তল্লাশির পরও অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে পরে সেনা সদস্যরা চলে যায়।
১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার ২নং পাতাছড়া ইউনিয়নের কালাপানি গ্রামে একটি বৌদ্ধ মন্দিরে তল্লাশি সেনাবাহিনী তল্লাশি চালায়।
ঐ দিন দুপুরে সিন্দুকছড়ি জোনের মেজর এখতিয়ার এর নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ৩টি পিকআপে করে সন্ত্রাসী খোঁজার নামে কালাপানি গ্রামে যায়। সেখানে গিয়ে তারা প্রথমে নির্মাণাধীন একটি বৌদ্ধ জাদি’র চারদিকে ঘেরাও করে এবং জুতা পায়ে জাদি এলাকায় প্রবেশ করে। যদিও জুতা পায়ে প্রবেশ করার কোন নিয়ম নেই। পরে সেনারা পার্শ্ববর্তী বৌদ্ধ মন্দিরে অস্ত্রসহ ঢুকে তল্লাশি চালায়। অবশ্য মন্দিরে ঢুকার সময় তারা মন্দির কর্তৃপক্ষের অনুমতি চায়। তল্লাশি চালানোর পরও মন্দিরের ভিতর অবৈধ কোন কিছু না পেয়ে সেনারা ক্যাম্পে ফিরে যায়।
বিজিবি কর্তৃক নির্যাতন
১৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার লক্ষীছড়ায় বিজিবি(বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদস্যদের কর্তৃক নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসী মারধরের শিকার হয়। যারা মারধরের শিকার হয়েছেন তারা অধিকাংশই নারী। মারধরের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া যায় তারা হলেন, ১. কান্তি বালা ত্রিপুরা(৪০) স্বামী- বন্ধু ত্রিপুরা, গ্রাম- গর্জনটিলা, মাটিরাঙ্গা, ২. নাতিবালা ত্রিপুরা(৩৪) স্বামী- মৃত থতক ত্রিপুরা, গ্রাম- মাছ পাড়া, মাটিরাঙ্গা, ৩. হিরুবালা ত্রিপুরা(২৬) স্বামী- শান্ত কুমার ত্রিপুরা, গ্রাম- গর্জনটিলা, ৪. ইয়ান্টি ত্রিপুরা(২৭) স্বামী-অন্ত ত্রিপুরা, গ্রাম-গর্জনটিলা, ৫. বুকুর ত্রিপুরা(২১) পিতা- শতাংক ত্রিপুরা, গ্রাম-অভ্যা পাড়া, ৬. শশাংকবালা ত্রিপুরা(৫৬) স্বামী-অজ্ঞাত, গ্রাম- অভ্যা পাড়া। বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া বাঁশগুলো বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার মো: হাবিব তাঁদের জব্দ করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। বাঁশ বিক্রেতারা এর প্রতিবাদ করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের উপর হামলা চালায় ও বেদম মারধর করে।
১০ মে ২০১৪, শনিবার খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার নাড়াইছড়িতে বিজিবি সদস্যরা গ্রামবাসীর বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। জানা যায়, ঘটনার দিন বিকাল আনুমানিক পৌনে ৫টার দিকে নাড়াইছড়ি ক্যাম্প থেকে বিজিবি’র একদল সদস্য নাড়াইছড়ি বাজার হতে আনুমানিক দেড় কিলোমিটার দূরত্বের ধীরেন হেডম্যান পাড়ায় গিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসীর বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। এর মধ্যে দু’জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, সুরুশি বালা চাকমা (৪৫), স্বামী মৃত কনক বরণ চাকমা ও অমিয় কান্তি চাকমা (৪০) পিতা- করুণা মোহন চাকমা।
১০ জুন ২০১৪ দীঘিনালার বাবুছড়ায় ভূমি বেদখল করে বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনে প্রতিবাদ করতে গিয়ে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর বিজিবি-পুলিশ হামলা চালায়। এতে ১৮ গ্রামবাসী আহত হয়। আহতরা ছিল অধিকাংশই নারী। এ ঘটনার পর বিজিবির দায়েরকৃত মামলায় ৪ নারীসহ ১০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী ও ৬ জন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ছিল।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।