বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বনবিহারে মহা সংঘদান উপলক্ষে মহতী পূণ্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

0


বর্মাছড়ি প্রতিনিধি, সিএইটিনিউজ

সোমবার, ২৯ অক্টোবার ২০২৫

লক্ষীছড়ির বর্মাছড়ি আর্য কল্যান বন বিহারে বর্মাছড়ি সত্তা এলাকার সর্বস্তরের শ্রদ্ধাবান দায়ক-দায়িকার উদ্যোগে প্রথম বারের মত মহা সংঘদান উপলক্ষে মহতী পূণ্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর ২০২৫) আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানটি রয়েল চাকমার সঞ্চালনায় দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল ৯টায় ও দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বেলা ১:০০টায়।

প্রথম পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আর্য কল্যাণ বন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি কপিল সেন চাকমা। দ্বিতীয় পর্বে বক্তব্য রাখেন ফটিকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান উষাতন চাকমা।

অনুষ্ঠানে ধর্মীয় দেশনা প্রদান করেন বিশুদ্ধানন্দ মহাস্থবিব, ড. জিনবোধি মহাথের ও মানিকছড়ি উপজেলা থেকে আগত এক মারমা ভান্তে।


ধর্মীয় দেশনায় জিনবোধি মহাথের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি অসাধারণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিদিন ঘরে ঘরে অসংখ্য মানুষের জন্ম হয়, কিন্তু মনুষ্যত্বের জন্ম হয় না। পশু পশুত্ব নিয়ে জন্মায় কিন্তু মানুষ মনুষ্যত্ব নিয়ে জন্মায় না। মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়।

তিনি আরো বলেন, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ আছে। বিবেকের কারণে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। তিনি বলেন “সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে”।

তিনি এটাও বলেন যে, জন্মের দ্বারা মানুষ শ্রেষ্ঠ হয় না, কর্মের দ্বারা মানুষ শ্রেষ্ঠ হয়।


জিনবোধি মহাথের বলেন, আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে সুন্দরভাবে বসবাস করতে চাই। আমি গর্ব করে বলি, অহংকার করে বলি- ‘বৌদ্ধদের দ্বারা এদেশে ক্ষতি হয়েছে এমন কোন নজির নেই।’  

তিনি বলেন, এদেশের মাটি খনন করলে সেই বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া যায়। রাঙ্গুনিয়ায় চাকমা রাজার রাজধানী ছিল। সুখদেব রাজার রাজধানী ছিল সুখবিহার। এরাই এদেশকে শিক্ষা-দীক্ষায়, শিল্পকলায় এবং বৌদ্ধ ধর্মের স্মৃতিচিহ্ন রেখে গেছেন। বর্তমানে বাংলা ভাষাও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ব্যবহৃত চর্যাগীতি থেকে উদ্ভুত বলে তিনি উল্লেখ করেন।


তিনি বলেন, এই ভাষা যারা সৃষ্টি করেছেন, যে জাতির লোকেরা সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে সসম্মানে রক্ষা করবেন নাকি করবেন না, তাদেরকে নিরাপত্তা দেবেন নাকি দেবেন না, তাদের নাগরিক অধিকার দেবেন, নাকি দেবেন না? আমরা তো ভিক্ষা চাচ্ছি না। আমাদের সম্পদকে আমরা নিরাপদে রক্ষা করে ফলজ, বনজ ঔষধি বৃক্ষের মাধ্যমে আপনাদের খাওয়া-দাওয়ার চাহিদা পূরণে বৌদ্ধরা নিবেদিতপ্রাণ। এতটুকু উদারতা, এতটুকু মানবতা, এতটুকু মানবপ্রেম, এতটুকু সহযোগিতা দেয়া সত্ত্বেও আমরা কেন নিরাপদে থাকতে পারছি না। আমরা তো অন্য প্রান্তে গিয়ে কারো সম্পত্তি দখল করছি না। আমরা যেখানে বসবাস করি বৈদ্যুতিক লাইন নেই, রাস্তাঘাট নেই। কিন্তু আমাদের মাতৃজাতিরা লেখাপড়া বিনা অবস্থায় চাষাবাদ করে, ফল-সবজি উৎপাদন করে এবং সমগ্র বাংলাদেশে সরবরাহ করছে। অথচ ‘যে তোমাকে রক্ষা করে তুমি তাকে রক্ষা করছো না’।


তিনি বলেন, আমাদের দ্বারা অতীতেও যেমন ক্ষতি হয়নি, বর্তমানেও হবে না, ভবিষ্যতেও হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায় তখন একটু ফোঁসফাঁস করে, তাতেও কাউকে আঘাত করে না। তিনি বলেন, ‘অত্যাচারিত হচ্ছে কারা? আমাদের মা-বোন, নির্যাতিত হচ্ছে কারা? আমাদের মা-বোন।’

অনুষ্ঠানে লক্ষীছড়ি উপজেলা ছাড়াও মানিকছড়ি ও কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজারের অধিক পূণ্যার্থীর সমাগম হয়।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More