বাঘাইছড়ির বঙলতুলিতে সেনা তল্লাশি, লুটপাট ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রতিবাদে সাজেকে বিক্ষোভ

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
“অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার কর” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে বাঘাইছড়ির বঙলতুলী ইউনিয়নে গভীর রাতে তালা ভেঙে জোরপূর্বক ঘরবাড়ি তল্লাশি, ভাঙচুর, লুটপাট ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির প্রতিবাদে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) বিকালে সাজেক গণ অধিকার পরিষদ, ছাত্র-জনতার সংগ্রাম পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।
প্রথমে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ইসিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ব্রিজ প্রদক্ষিণ করে উজো বাজারে এসে সমাবেশে মিলিত হন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘অবিলম্বে সেনা শাসন তুলে নাও, নিতে হবে; যে বাহিনী গুলি করে সে বাহিনী মানি না’সহ নানা শ্লোগান দেন।

সমাবেশে ছাত্র জনতার সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি উপদেষ্টামন্ডলির সহ সভাপতি নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য চিত্তি চ’ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবু ধন চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিপায়ন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখঅর সহসাধারণ সম্পাদক সমর জ্যোতি চাকমা।
বক্তারা পাহাড়ে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধে অবিলম্বে সেনা শাসন প্রত্যাহার ও পাহাড়িদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরাকরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্ববৃহৎ ইউনিয়ন সাজেক। সাজেক পাশে ৩৫ নং বঙ্গলতুলি ইউনিয়ন। গতকাল গভীর রাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিনা অনুমতিতে ঘরের তালা ভেঙে এক বাড়িতে প্রবেশ করে তল্লাশি, জিনিসত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। পাহাড়ের জুম্ম জনগণের উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন-নিপীড়ন, সাম্প্রদায়িক হামলার মুলে রয়েছে এই সেনাশাসন।

তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও পাহাড়িরা নাগরিকের স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাবাহিনী এক দেশে দুই নীতি জারি রেখেছে। পাহাড়ি জনগণ বাঙালি জাতি নয় বলে আজ আমাদের উপর একতরফা নিপীড়ন নির্যাতন জারি রাখা হয়েছে, পাহাড়কে সেনা কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। পাকিস্তান শাসনামলে যেভাবে বাঙালির উপর দমন-পীড়ন, হত্যা-ধর্ষণ, নির্যাতন করেছে, তার কয়েকগুণ বেশি নিপীড়ন এই স্বাধীন দেশে পাহাড়ি জনগণের উপর সেনাবাহিনী প্রয়োগ করছে। দিন-দুপুরে, রাতে-বিরাতে পাহাড়ি জনগণের বাড়িঘরে কথিত সন্ত্রাসী খোঁজার নাম করে তল্লাশি, ভাঙচুর, লুটপাট করে অর্থনৈতিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।

বক্তারা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক বছরেরও বেশি হয়ে গেলো। এই এক বছর পরেও পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে যেমনিভাবে নিপীড়ন নির্যাতন করেছিল, ঠিক একইভাবে এখনো নিপীড়ন নির্যাতন চলছে। এখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ না থাকলেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেনা অভিযানের নামে পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। গত ২৪ অক্টোবর সাজেক ইউনিয়নের ভুয়োছড়িতে দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে এক সেনা সদস্য। সে ঘটনার কোন বিচার হয়নি। উল্টো বঙলতলীতে রাতের আঁধারে তল্লাশির নামে হয়রানি, ভাঙচুর, লুটপাট করা হয়েছে।
বক্তারা সেনাবাহিনীর এসব কর্মকাাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে সেনা অভিযানের নামে হয়রানি, নিপড়িন, লুটপাট বন্ধ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
