বিলাইছড়িতে ৮ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে গ্রেফতারের অভিযোগ, আইএসপিআর বললো ‘কেএনএফ’ সদস্য !

0
সংগৃহিত ছবি

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের দুর্গম ধুপানি ছড়া এলাকা থেকে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল ২০২৪) সেনাবাহিনী ৮ জন নিরীহ ত্রিপুরা গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ধুপানিছড়া গ্রামের কার্বারিও রয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উক্ত গ্রেফতারকৃত ত্রিপুরা গ্রামবাসীদেরকে ‘কেএনএফ সদস্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

তবে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ৯ জনকে গ্রেফতারের কথা উল্লেখ থাকলেও মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে ৮ জনই দেখা গেছে। কয়েকটি ‌‘গাদা বন্দুক’সহ ছবিটি সেনা ক্যাম্পেই তোলা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

গ্রেফতারের বিষয়ে আইএসপিআরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ সকালে সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়নের অন্তর্গত ১৬ বেঙ্গল কর্তৃক ধুপানিছড়া পাড়া এলাকায় সুংসুংপাড়া আর্মি ক্যাম্পের মেজর রাজীবের নেতৃত্বে একটি টহল দল অভিযান পরিচালনা করে। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবরের প্রেক্ষিতে এ অভিযান চালানো হয়। পরে সেনা সদস্যদের অভিযানে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৯ জন কেএনএফ সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়।”

তবে গ্রেফতারকৃতদের নাম, পরিচয় কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

দেশের মেইন স্ট্রিম মিডিয়াসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় কথিত ‘কেএনএফ সদস্য’ গ্রেফতার বিষয়ে আইএসপিআরের প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে।  

খোঁজ নিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতরা সবাই ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের। তারা বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের ধুুপানি ছড়া, হাতিছড়া পাড়া ও শেপ্রু পাড়ার বাসিন্দা।

গ্রেফতারকৃতদের নামও পাওয়া গেছে। এরা হলেন-

১)  জাতিরাই ত্রিপুরা (৪১), পিতা-সাদিজন ত্রিপুরা, গ্রাম-ধুপানি ছড়া, ৯নং ওয়ার্ডম ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি, রাঙামাটি। তিনি ধুপানিছড়া পাড়ার কার্বারি।
২) পেট্রিক ত্রিপুরা(২৭), পিতা-সুনরাং ত্রিপুরা, গ্রাম-ধুপানি ছড়া, ৯নং ওয়ার্ড, ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি, রাঙামাটি। 
৩) কৃষ্ণচন্দ্র ত্রিপুরা(৪০), পিতা-জরেন্দ্র ত্রিপুরা, গ্রাম-হাতি ছড়া পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, বিলাইছড়ি,রাঙামাটি,
৪) যাকোব ত্রিপুরা (৩৯), পিতা-লাস্কু ত্রিপুরা, গ্রাম-হাতিছড়া পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি,রাঙামাটি। 
৫) গুনীজন ত্রিপুরা(৪৪), পিতা- মৃত অংশেপ্রু ত্রিপুরা, গ্রাম-শেপ্রু পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড, ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন। বিলাইছড়ি, রাঙামাটি। 
৬) বীরজয় ত্রিপুরা(১৯), পিতা-গুণীজন ত্রিপুরা, গ্রাম-শেপ্রু পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড, ৪নং বরথলি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি,রাঙামাটি। 
৭) বীরবাহাদুর ত্রিপুরা(৩৮), পিতা-সতিজন ত্রিপুরা, গ্রাম- শেপ্রু পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড , ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন। বিলাইছড়ি, রাঙামাটি। 
৮) সিমন ত্রিপুরা(২৫), পিতা-গণেশ ত্রিপুরা, গ্রাম-শেপ্রু পাড়া, ৮নং ওয়ার্ড, ৪নং বড়থলি ইউনিয়ন, বিলাইছড়ি,রাঙামাটি। 

এছাড়া আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে, এর আগে গত ১৪ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথানি ত্রিপুরা পাড়া থেকে কেএনএফ-কে সহযোগিতা করার কারণ দেখিয়ে কারবারি রতিচন্দ্র ত্রিপুরা(৫৮),পিতা: গঙ্গামণি ত্রিপুরা; নটরডেম কলেজ পড়ুয়া ছাত্র কারবারির ছেলে সুকান্ত ত্রিপুরা(২১); রখাচন্দ্র ত্রিপুরা (২১); আব্রাহাম ত্রিপুরা (৩০); পিন্টু ত্রিপুরা (৩০), পিতা: শৈতোহা ত্রিপুরা ও অজ্ঞাতনামা ১ জনসহ মোট ৬ জন সাধারণ ত্রিপুরাকে যৌথবাহিনী কর্তৃক আটক করে হয়রানি করা হয়। আটকের পরে তাদের কাছ থেকে ‌‘কেএনএফের ক্যাম্প কোথায়? কতদিন ধরে কেএনএফ-রা বেথানি পাড়া এলাকায় অবস্থান করছে’ ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সেদিন রাতেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

উল্লেখ্য, গত ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলায় নাটকীয় ব্যাংক ডাকাতি, পুলিশ-আনসার সদস্যদের অস্ত্র লুট ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণের ঘটনা ঘটে।

উক্ত ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের নির্দেশে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী রুমা, থানচি, আলীকদম উপজেলায় সাড়াশি অভিযান শুরু করে। চলমান অভিযানে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীসহ ৬০ জনের অধিক বম সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 

সর্বশেষ বিলাইছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৮ জনকে গ্রেফতারের পর ‌‌‘কেএনএফ সদস্য’ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার ঘটনায় যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More