মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনী কর্তৃক দুরন্ত চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ
সিএইচটিনিউজ.কম

খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনী কর্তৃক আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে দুরন্ত চাকমাকে হত্যা ও অপর তিন জনকে আটকের প্রতিবাদে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন আজ ১১ আগস্ট সোমবার খাগড়াছড়ি সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
‘গণতান্ত্রিক মিছিল-মিটিঙের উপর সেনা হস্তক্ষেপ বন্ধ কর’ এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে স্বনির্ভর বাজারস্থ ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকাল ৩টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নারাঙহিয়া, উপজেলা হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ারে গিয়ে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করে। এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য এল্টন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সচিব রিপন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শিখা চাকমা, পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বিপুল চাকমা ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ শাখার দপ্তর সম্পাদক (সদ্য সেনা হেফাজত থেকে মুক্ত) রিয়েল ত্রিপুরা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, সেনাবাহিনী কর্তৃক বিনা বিচারে দুরন্ত চাকমাকে হত্যার মাধ্যমে আবারো প্রমাণ হল যে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীই সবচেয়ে বড় হুমকি। তারা বলেন, সেনারা দুরন্ত চাকমাকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর না করে রাতের আঁধারে খাগড়াছড়ির সদরের একটি শ্মশানে পুড়িয়ে ফেলে নিজেদের অপকর্ম আড়াল করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, মাটিরাংগা, গুইমারা, রামগড় এলাকায় সেনাবাহিনী বেপরোয়া নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নিরীহ পাহাড়ি জনগণ নিজ বাড়িতে শান্তিতে ঘুমোতে পারে না। কখন যে সেনাবাহিনী বাড়ি ঘেরাও করে, কখন ধরে নিয়ে যায় প্রতিনিয়ত এই চিন্তায় জনগণকে থাকতে হচ্ছে।
বক্তারা সাম্প্রতিক দু’য়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, গত ৬ আগস্ট ২০১৪, সেনাবাহিনী গুইমারা বাজার থেকে এক স্কুল ছাত্রসহ ২ কিশোরকে আটক করে শারিরীক নির্যাতন চালিয়েছে। গত ৮ আগস্ট গুইমারা সদরের প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে সেনাবাহিনী পিসিপি’র খাগড়াছড়ি কলেজ শাখার দপ্তর সম্পাদক রিয়েল ত্রিপুরাকে ধরে নিয়ে অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে।
বক্তারা অবিলম্বে দুরন্ত চাকমার হত্যাকারী সেনা সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচার, আটক ৩ জনকে মুক্তি, নিরাপত্তার নামে সেনা তল্লাশি-হয়রানি-চোখ রাঙানি-হত্যা-নির্যাতন বন্ধ করা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, শনিবার গভীর রাতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোন থেকে বিপুল সংখ্যক সেনা লেমুছড়া নামক গ্রামে অপারেশনে যায়। রাতভর গ্রামটি ঘিরে রাখার পর ভোর ৬টায় সেনা সদস্যরা বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে দুরন্ত চাকমা(৫২), নকুল ত্রিপুরা ওরফে রিয়েল(৩৪), নিশি মনি চাকমা(৪০) ও তার ছেলে অমর কান্তি চাকমাকে(১৮) আটক করে নিয়ে যায়। এরপর মাটিরাঙ্গা জোনে নিয়ে গিয়ে তাদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হলে দুরন্ত চাকমা মারা যায়। দুরন্ত চাকমা জেএসএস(এমএন রারমা)-এর একজন সংগঠক ছিলেন। এছাড়া অপর ৩ জনকেও এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি।
———–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।