মানিকছড়ি সীমান্তবর্তী কাঞ্চননগর ইউপি এলাকায় হত্যার শিকার যুবকের পরিচয় মিলেছে

স্থানীয় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৯ জুন ২০২৫
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি সীমান্তবর্তী ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের গর্জনিয়া এলাকায় হত্যার শিকার হওয়া যুবকের পরিচয় পাওয়া গেছে।
নিহতের নাম বিপুল চাকমা ওরফে বিজয় (২৫), পিতা- সুনীল চাকমা, গ্রাম- রান্যামা ছড়া, ৬নং ওয়ার্ড, দুল্যাতলী ইউনিয়ন, লক্ষীছড়ি, খাগড়াছড়ি।
গতকাল রবিবার (৮ জুন) ভোররাতের দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে।
জানা গেছে, নিহত বিপুল চাকমা মুখোশ বাহিনীর একজন সদস্য ছিল। এই বাহিনীর সর্দার রবিন চাকমার সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছেন।
গতকালই পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ফটিকছড়ি থানায় নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় ও পরিবারের সূত্রে জানা যায়, বিপুল চাকমা দীর্ঘদিন ধরে মুখোশ বাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করে আসছিল। সে তার স্ত্রীকে নিয়ে গুইমারায় অবস্থান করার সময় মুখোশ সর্দার রবিন চাকমার সাথে আর্থিকসহ নানা বিষয়ে তার বিরোধ দেখা দেয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে জীবনের নিশ্চয়তা না থাকায় মাস দুয়েক আগে সে গুইমারা থেকে পালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। এতদিন সে ফটিকছড়ির কোন একটি স্থানে আত্মগোপনে ছিল বলে জানা গেছে।
এরপর গত ৭ জুন ২০২৫ মুসলিম সম্প্রদায়ের কোরবানী ঈদের দিন তার পরিচিত কয়েকজন বাঙালি (যারা মুখোশদের সাথে সম্পৃক্ত) তাকে ঈদের নিমন্ত্রণ দিলে সে নিমন্ত্রণ খেতে যায়। এ সময় আগে থেকে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা রবিন চাকমার নেতৃত্বে মুখোশরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর ঐদিন দিবাগত রাতে দু’টি মোটর সাইকেল করে কাঞ্চননগর ইউপি’র গর্জনিয়া এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশটি সেখানে ফেলে রেখে যায়।
পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে ঘটনার খবর পেয়ে ফটিকছড়ি থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

হত্যার শিকার হওয়া যুবকের মরদেহ।
এ ঘটনার বিষয়ে বিপুল চাকমার মা-বাবার সাথে কথা বললে তারা জানান, বিপুলকে যখন রবিনরা ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখন সে (বিপুল) তাদেরকে ফোন করে ঘটনাটি জানিয়েছিল। এর পরপরই তারা জ্যোতিষ দেওয়ানের সাথে যোগাযোগ করেন। এ সময় জ্যোতিষ দেওয়ানও “বিপুল বেশি বাড়াবাড়ি করছে, তাকে মেরে ফেলতে হবে” এমন কথা বললে তারা তাদের ছেলেকে মেরে না ফেলতে জ্যোতিষ দেওয়ানকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাদের অনুরোধ রক্ষা না করে মুখোশরা তাদের ছেলেকে প্রাণে মেরে ফেলে।
তারা আরো জানান, বিপুলকে হত্যার খবর পেয়ে গতকাল তার স্ত্রী জ্যোতিষ দেওয়ানের কাছ থেকে কেন তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে তা জানতে চাইলে জ্যোতিষ দেওয়ান তাকে বলেছিলেন, ‘তোমাকে কে বলেছে তোমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে? তোমার স্বামীতো ফটিকছড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছে’।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে মানিকছড়ি-ফটিকছড়ি উপজেলা সীমান্তবর্তী বটতলী এলাকায় রবিন চাকমার নেতৃত্বে মুখোশদের একটি সশস্ত্র দল অবস্থান করে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম সংঘটিত করে আসছে। কিছু বাঙালিও তাদের সাথে যুক্ত রয়েছে। সেনাবাহিনীর লক্ষীছড়ি জোন থেকে তাদেরকে তত্ত্বাবধান ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রশাসন এ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় সন্ত্রাসীরা অবাধে তাদের অপরাধকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
* আরও পড়ুন:
>> মানিকছড়ি-ফটিকছড়ি সীমান্তে এক যুবককে হত্যা
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।