যেভাবে জেএসএস সন্তু গ্রুপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উদ্ধার করলো

মন্তব্য প্রতিবেদন
২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারা হামলা ও গণহত্যার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সারা দেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইতে শুরু করে। সোস্যাল মিডিয়া, টিভি চ্যানেল, প্রিন্ট মিডিয়া ছিল সরগরম – সর্বত্র গুইমারা হামলা সম্পর্কে আলোচনা চলতে থাকে। বিদেশে যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, জেনেভা ইত্যাদি দেশেও বিক্ষোভ করা হয়।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছা্ত্র সংগঠন, নারী সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ হামলার নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনের ঘোষণা দিলে সেনাবাহিনীর ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। অপরাধী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তখন মুখ লুকোতে ব্যস্ত। নিজেদের অপরাধ আড়াল করার জন্য তারা ইউপিডিএফের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল। এজন্য মিডিয়ায় তাদের প্রবল প্রপাগান্ডা চলছিল, ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল। কিন্তু তারপরও গুইমারা থেকে মিডিয়া ও জনগণের দৃষ্টি ফেরাতে পারছিল না।
ঠিক এই কোনঠাসা অবস্থা থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে উদ্ধার করতে আবির্ভূত হয় জনসংহতি সমিতির সন্তু গ্রুপ। তারা এজন্য দু’টি কাজ করে। এক, সন্তু গ্রুপ তড়িঘড়ি করে গুইমারা ঘটনার ওপর একখানা রিপোর্ট বের করে। এতে তারা হামলায় সেনাবাহিনীর আগ্রাসী ভূমিকাকে অত্যন্ত লঘুভাবে তুলে ধরে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সন্তু গ্রুপ সেনাবাহিনীর সাথে সুর মিলিয়ে হামলার জন্য প্রকারান্তরে ইউপিডিএফকে দায়ি করে।
তারা দ্বিতীয় যে কাজটি করে সেটি হলো, রাঙামাটি থেকে কলেজ ছাত্র আলোড়ন চাকমাকে অপহরণ। গুইমারার হামলাকে ঢামাচাপা দিতে এবং পাহাড়ি ছাত্র-যুব সমাজকে অন্যত্র ব্যতিব্যস্ত রাখতে সন্তু গ্রুপ খুবই পরিকল্পিতভাবে তাকে অপহরণ করে। তাকে তো তারা অন্য যে কোন সময় অপরহণ করতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তাকে একটি বিশেষ সময়ে অপহরণ করার অর্থ তো অন্য কিছু করা যায় না। তাদের নিশ্চয়ই জানার কথা, কোন অপহরণ ঘটনা ঘটানো হলে সেটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ইত্যাদি হবে। সেনাবাহিনীর নির্দেশে যে তারা অপহরণটি করেনি তাও নিশ্চিত করে কীভাবে বলা যায়?
তবে যেই হোক, সন্তু লারমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। যেখানে গুইমারার ঘটনা নিয়ে ছাত্র-যুব সমাজের ব্যস্ত থাকার কথা – ত্রাণ সংগ্রহ, প্রতিবাদ সভা, আহতদের দেখাশোনা ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকার কথা, সেখানে তাদেরকে আলোড়ন চাকমাকে উদ্ধার বা মুক্তির দাবিতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এভাবে সন্তু গ্রুপের কারণে অপরাধী সেনা-সেটলাররা পার পেয়ে যাচ্ছে, আর অন্যদিকে আমাদের জুম্ম জাতির সংগ্রামী শক্তি অপচয় হয়ে যাচ্ছে।
বলাবাহুল্য, সেনাবাহিনীকে বিব্রতকর ও কোনঠাসা অবস্থা থেকে উদ্ধার জেএসএস সন্তু গ্রুপ এবারই প্রথম করেনি। গত বছর ১৯-২০ সেপ্টেম্বরের হামলার পরও সন্তু লারমা একইভাবে সেনাবাহিনী ও উগ্র সেটলারদের রক্ষা করেছিলেন। সে সময়ও তিনি দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য ইউপিডিএফ ও সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দায়ি করেছিলেন। সে সময় নিজের আঞ্চলিক পরিষদের অফিস আক্রান্ত হলেও তিনি তার নিন্দা জানিয়ে এক কলমের বিবৃতি পর্যন্ত দেননি।
সন্তু লারমার এই ন্যাক্কারজনক কদর্য ভূমিকার কারণে তিনি কঠোরভাবে সমালোচিত ও নিন্দিত হলেও, সেনাবাহিনীর কাছে তিনি প্রিয়পাত্র। আসলে আঞ্চলিক পরিষদের গদিতে থাকার বিনিময়ে এভাবে তিনি সেনা-শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল করে দিয়ে চলেছেন। (৯ অক্টোবর ২০২৫)
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।