‘রক্তাক্ত জুলাই’ ও ‘স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডে’ শহীদদের স্মরণে কাউখালীতে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ১৮ আগস্ট ২০২৪
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া বাজারে ‘দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়ের প্রতিবাদী ছাত্র-যুব-নারীসমাজ’ এর ব্যানারে ‘রক্তাক্ত জুলাই ২০২৪’ ও ‘স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ড ২০১৮’-এ নিহত আবু সাঈদ-মুগ্ধ, তপন-এল্টন-পলাশসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিহত সকল শহীদদের সম্মানে স্মরণসভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
আজ রবিবার (১৮ আগস্ট ২০২৪) বিকাল ৬টায় এ কর্মসূচি শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হয়।
স্মরণসভায় ঘাগড়া, বেতবুনিয়া ও ফটিকছড়ি ইউনিয়ন থেকে কয়েকশত ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-যুবতী ও এলাকার জনগণ অংগ্রহণ করেন।
এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কাউখালি উপজেলা শাখার সভাপতি দীপায়ন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি থুইনুমং মারমা।

বক্তারা ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দীর্ঘ পনেরো বছর শাসন আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এর মধ্যে স্বনির্ভরের হত্যাকাণ্ড ছিল নৃশংস ও ভয়াবহ। এতে ছাত্রনেতা তপন-এল্টন, যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে সেনাবাহিনীর লেলিয়ে দেয়া সংস্কার-মুখোশ সন্ত্রাসীরা। কিন্তু সেদিন পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু আজ পর্যন্ত সেই খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রেখেছে।
তারা আরো বলেন, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে বিজিবি, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার নামে যেসব রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে পাহাড়ে নিয়োজিত রাখা হয়েছে তারাই পাহাড়িদের অনিরাপদ করে রেখেছে। তারই সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে খুন-খারাবিসহ নানা অপকর্ম সংঘটিত করছে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত উস্কে দিচ্ছে। তাদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের হাতে মিঠুন চাকমাসহ অসংখ্য উদীয়মান নেতা-কর্মী শহীদ হয়েছেন।

বক্তারা অন্তর্বতীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, কোটা আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে পাহাড়ে আমাদের ভাইদের হত্যার বিচার কেন হবে না?
তারা বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হওয়ার পর সমতল অঞ্চলের মানুষ স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে মুক্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এখনো স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পায়নি। যার প্রমাণ হচ্ছে সমতলের ন্যায় পাহাড়ে গ্রাফিতি অঙ্কনে সেনাবাহিনীর বাধা প্রদান, হামলা ও শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ ও ধরে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা।

বক্তারা অবিলম্বে পাহাড় থেকে সেনা শাসন তুলে নেওয়ার এবং স্বনির্ভর হত্যাকাণ্ডসহ জুলাইয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানান।
স্মরণসভা শেষে তুমুল স্লোগানে শহীদের স্মরণে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ২০ মিনিটের মতো জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন বেতবুনিয়া বাজার এলাকা।
শেষে প্রতিবাদী সংগীতের মাধ্যমে স্মরণ সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান শেষ হয় এবং জ্বলন্ত প্রদীপ সড়কের পাশে রাখা হয়।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।