রাঙামাটিতে ‘অপহৃত’ কলেজ ছাত্র আলোড়ন চাকমা’র মুক্তির দাবিতে কাউখালীতে মানববন্ধন

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
রাঙামাটি সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র ও সাংস্কৃতিক কর্মী আলোড়ন চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি ও অপহরণকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে কাউখালীতে মানববন্ধন হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা সদরে ‘পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সহপাঠী ও হাজাছড়ি গ্রামবাসী’ এবং ‘আগমুলিম ক্লাব শিল্পী গোষ্ঠী” এই দুই ব্যানারে মানববন্ধনটি আয়োজন করা হয়।
আগমুলিম ক্লাবের নাচের প্রশিক্ষক মমতা চাকমার সভাপতিত্বে ও ছাত্র প্রতিনিধি অজয় মারমার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আলোড়ন চাকমার সহপাঠী দয়ারণ চাকমা, আগমুলিম ক্লাব শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য প্রান্তিকা চাকমা, এলাকার যুব প্রতিনিধি সঞ্জু চাকমা, এলাকার নারী প্রতিনিধি আশা চাকমা. এলাকার কার্বারী বিন্দু কুমার চাকমা, জনপ্রতিনিধি কিরন চাকমা ও আলোড়নের পিতা প্রিয় ধন চাকমা ও মাতা কল্পনা চাকমা।

বক্তব্য দিতে গেলে আলোড়ন চাকমার মা কল্পনা চাকমা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত লোকজন তাকে সামলে নেন। পরে তিনি কান্না জুড়ে দিয়ে তার ছেলেকে সুস্থ শরীরে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানান।
আলোড়ন চাকমার পিতা প্রিয় ধন চাকমা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খোঁজ করার কথা জানান এবং থানায় জিডি করলেও থানা কর্তৃপক্ষের হুমকির কারণে সেই জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।
তিনি তার ছেলেকে মুক্তি দিতে অপহরণকারীদের প্রতি আহ্বান জানান এবং ছেলেকে উদ্ধার করে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, আলোড়ন চাকমা এলাকার আগমুলিম ক্লাব শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্য। তিনি একজন খুবই ভদ্র, নম্র ও নীতিবান ব্যক্তি। এইচএসসি পরীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য মাস খানেক কোচিং করলেও পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে কোচিং শেষ করতে পারেননি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারেননি। তারপর তিনি অনার্সে গণিত বিভাগে ভর্তি হন রাঙামাটি সরকারি কলেজে। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে রাঙামাটি শহরে পার্টটাইম একটা ফার্মেসি দোকানে কাজ করতেন এবং রাঙামাটির টিটিসি এলাকায় এক বড় ভাইয়ের বাসায় থাকতেন। গত ৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৫.৪৫ টায় বাজার করার উদ্দেশ্য বাসা থেকে বের হলে পরে আর বাসায় ফিরেননি।

তারা বলেন, আলোড়ন চাকমা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পাড়া-প্রতিবেশী, সহপাঠিরা সবাই উৎকন্ঠিত। রাঙাামটি শহরের যে জায়গায় থেকে আলোড়ন চাকমা নিখোঁজ হয়েছেন সেই জায়গাটি সন্তু লারমার জেএসএস’র আস্তানা হিসেবে খ্যাত। আমাদের ধারণা জেএসএস’র ছাত্র-যুব-নারী কর্মীরাই তাকে অপহরণ করেছে।
তারা অভিযোগ করে আরো বলেন, আলোড়নের সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবরা যখন তার সন্ধানে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল তখন জেএসএস (সন্তু) এর ছাত্র ও নারী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা তাদের মোবাইল ফোন, ম্যানি ব্যাগ, ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে বাধা দিয়েছিল। এর থেকেই প্রমাণ হয় তারাই আলোড়নকে অপহরণ করেছে।

ছয় দিনেও আলোড়ন চাকমার কোন খোঁজ না পাওয়ায় বক্তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আলোড়ন চাকমাকে খুঁজে পেতে গত ৫ অক্টোবর তার পিতা রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। পুলিশ প্রশাসন থেকে আলোড়ন চাকমার সর্বশেষ গতিবিধির লোকেজন কে কে রায় সড়ক বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পরদিন আলোড়নের পিতাকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে থানা কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেন। পুলিশের উচিত ছিল জিডি আমলে নিয়ে নিখোঁজ ছাত্রকে উদ্ধারে পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু তারা সেটা না করে জিডি প্রত্যাহার করতে বাধ্য করলেন। যা অপরাধীদের রক্ষার সামিল।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা অবিলম্বে আলোড়ন চাকমাকে অক্ষত অবস্থা ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান। একই সাথে তারা অপহরণকারীদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের দাবি আহ্বান জানিয়েছেন।
মানববন্ধনে “অবিলম্বে আলোড়ন চাকমাকে নি:শর্ত মুক্তি দাও; চিহ্নিত অপহরণকারী জেএসএস (সন্তু) দলের জিকো, অভি ও কাঞ্চনা চাকমাদের গ্রেফতার কর; জিডি প্রত্যাহারে বাধ্য করে প্রশাসন কি অপরাধীদের আড়াল করতে চাচ্ছে?; সংস্কৃতিক কর্মী আলোড়ন চাকমার নিঃশর্ত মুক্তি চাই; মেধাবী ছাত্র আলোড়ন চাকমাকে মুক্তি দিন” ইত্যাদি লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।