রাঙামাটিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৫ এপ্রিল ২০২৪
শহীদ বিপুল-সুনীল-লিটন-রুহিনদের আদর্শের চেতনায় জেগে উঠুন; জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে সামিল হোন, লড়াই সংগ্রাম জোরদার করুন” এই আহ্বানে রাঙামাটিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৫ এপ্রিল ২০২৪) সকাল ১০টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রাঙামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে সদর উপজেলার বন্দুকভাঙা এলাকায় এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরুতে ‘আমরা করবো জয়…’ গানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা ও ইউপিডিএফের পতাকা উত্তোলন করেন নান্যাচর উপজেলার প্রধান সংগঠক সুকীর্তি চাকমা।
এরপর পূর্ণস্বায়ত্বশাসন আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। নিরবতা পালন শেষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামে রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা সভাপতিত্বে ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক ঝিমিত চাকমা সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর নান্যাচর উপজেলা ইউনিটের প্রধান সংগঠক সুকীর্তি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি ধর্মশিং চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বারিঝে চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নিশি চাকমা ও বন্দুকভাঙা এলাকার জনপ্রতিনিধি সুচিত্র চাকমা।

সভায় ইউপিডিএফ সংগঠক সুকীর্তি চাকমা বলেন, পাহাড়ে নিপীড়িত-নির্যাতিত ও অধিকার হারা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যুব সমাজের গুরুত্ব অপরিসীম। যুব সমাজকে বাদ দিয়ে সমাজ ও জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তাই বর্তমান সমাজকে পরিবর্তনের জন্য যুব সমাজকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং শহীদ বিপুল, সুনীল ,লিটন ও রুহিনদের আত্মত্যাগের চেতনাকে ধারণ করে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সাজেকসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন ও কথিত উন্নয়নের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদ ও ভূমি বেদখল চলমান রয়েছে। পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নামে জুরাছড়ি-বিলাইছড়ি সীমান্তবর্তী দুটি গ্রামের বাসিন্দাদের সেনাবাহিনী উচ্ছেদের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এই ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে যুব সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
যুব নেতা ধর্মসিং চাকমা বলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম জন্মলগ্ন থেকে আপোষহীনভাবে ভূমি বেদখল, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই যুব সমাজকে আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে সরকার আমাদের কর্মি, সমর্থককে খুন, গুম, অপহরণসহ নানা নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রেখেছে। সমানতালে চালানো হচ্ছে বিভিন্ন মাদক, জুয়ায় আসক্ত রেখে যুব সমাজকে ধ্বংস করে দেয়ার প্রক্রিয়া।
তিনি বলেন, সরকারে এই নীলনক্সার বিরুদ্ধে ছাত্র-যুব সমাজকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কোনভাবেই সরহারের এই চক্রান্তে পা দেয়া যাবে না। তিনি পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জোরদার করার জন্য যুবক সমাজকে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা বারিঝে চাকমা বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে দুই শাসন বিদ্যমান রয়েছে। সমতলের চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আলাদা শাসন ব্যবস্থা চলছে। এখানে সেনাশাসন জারি রেখে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনে সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। আন্দোলনে যুক্ত ছাত্র-যুব নেতাদের উপর দমন-পীড়নসহ খুন-গুম করা হচ্ছে। বিগত ২০১৭ সালের নান্যাচরে সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্যাতন চালিয়ে ছাত্রনেতা রমেল চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তরুণ নেতা মিঠুন, তপন, এল্টনসহ সর্বশেষ গত বছর ১১ ডিসেম্বর বিপুল, সুনীল, লিটন ও রুহিনকে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি পাহাড়ে জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষা ও ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-যুব সমাজকে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী নিশি চাকমা বলেন, পাহাড়ে ছাত্র-যুব সমাজের পাশাপাশি নারী সমাজের ভূমিকাও অপরিসীম। নারী সমাজকে বাদ দিয়ে সমাজ পরিবর্তন কিংবা আন্দোলন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনী, সেটলার ও স্কুলের শিক্ষক দ্বারা প্রতিনিয়ত নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস গং কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণের শিকার হয়ে গুম হয়েছেন। যা দেশে ও দেশের বাইরে এখনো আলোচিত একটি ঘটনা হয়ে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পাহাড়ের নারী সমাজকে নিপীড়ন-নির্যাতন ও ধর্ষণের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য সচেতন হতে হবে। নিজেদের ইজ্জ্বত-সম্ভ্রম রক্ষার্থে নিজেদেরকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে।
জনপ্রতিনিধি সুচিত্র চাকমা বলেন, সমাজকে পরিবর্তনের জন্য যুব সমাজ, ছাত্র সমাজ ও নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি সবাইকে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করার আহ্বান জানান।
সভার সভাপতি ও যুব ফোরাম নেতা প্রিয়তন চাকমা উপস্থিত সকলকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলকে জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।