রাঙামাটির কুদুকছড়িতে শহীদ মিটন চাকমার স্মরণে তিন সংগঠনের স্মরণসভা

শহীদ মিটন চাকমার স্মরণে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে তিন সংগঠন স্মরণসভার আয়োজন করে।
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
ইউপিডিএফ সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ মিটন চাকমার স্মরণে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে স্মরণসভা করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, রাঙামাটি জেলা শাখা।
আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর ২০২৪) বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি জেলা সভাপতি তনুময় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক দীপায়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ সংগঠক বাবলু চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ধর্মশিং চাকমা। এছাড়া এতে আরো উপস্থিত ছিলেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি রিপনা চাকমা।
সভার শুরুতে শহীদ মিটন চাকমাসহ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আত্মবলিদানকারী সকল শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
স্মরণসভার প্রথমে শহীদ মিটন চাকমার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি জীবনী পাঠ করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রাঙামাটি উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল চাকমা।
স্মরণসভায় ইউপিডিএফ সংগঠক বাবলু চাকমা বলেন, কমরেড মিটন চাকমার সাথে পিসিপিতে আমরা একসাথে কাজ করেছি। পার্টিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও একসাথে কাজ করেছি। তিনি পাহাড়ে নিপীড়িত মানুষের বাঁচার সনদ পূর্ণস্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পার্টিতে যুক্ত হয়েছিলেন। সংঘাত সৃষ্টিকারী নির্মুলপন্থী সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ইউপিডিএফ কখনো সংঘাত চায় না, ইউপিডিএফ ঐক্য চায়। প্রকান্তরে জেএসএস প্রায় সময় ইউপিডিএফকে নির্মূলের সময়সীমা নির্ধারণ করে সংঘাত জিইয়ে রেখে আসছে। কিন্তু ২৭ বছরেও ইউপিডিএকে নির্মূল করতে পারেনি। জেএসএস শুধু মিটন চাকমাকে নয়, রূপক, অনিমেষসহ অনেক প্রতিভাবান নেতৃত্বকে হত্যা করেছে। নিজের আঞ্চলিক পরিষদের গদি রক্ষার্থে শাসকচক্রের ক্রীড়নক হয়ে সন্তু লারমা তার বাহিনীকে দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
বাবলু চাকমা বলেন, দেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর পাহাড়ে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ নামের ছাত্রদের একটি প্লাটফর্ম “এগত্তর” বা ঐক্যের দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে বড় দুটি সমাবেশ করেছে। ছাত্রদের এই এগত্তর’র দাবিকে জেএসএস ভয় পাওয়ার কারণে তারা এই প্লাটফর্মকে নানা তকমা লাগিয়ে দিয়ে তাদেরকে আন্দোলনে বাধা সৃষ্টি করছে। যারা ঐক্যের কথা বলছে জেএসএস তাদেরকে ইউপিডিএফ ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে হেনস্থা-হয়রানি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি সবাইকে নিঃস্বার্থবাদী শহীদ মিটন চাকমার আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণায় উব্ধুদ্ধ হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
যুবনেতা ধর্মশিং চাকমা বলেন, মিটন চাকমা ব্যক্তি হিসেবে অমায়িক ও ভদ্র ছিলেন। তিনি যদি ব্যক্তিস্বার্থের চিন্তা করতেন তাহলে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারতেন। কিন্তু তিনি চলমান পুঁজিবাদী চিন্তার বাইরে গিয়ে সামগ্রিক স্বার্থে কাজ করেছেন। তাই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের মুক্তির জন্য ইউপিডিএফের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
ছাত্রনেতা তনুময় চাকমা বলেন, মিটন চাকমার সাথে ২০২১ সালে প্রথম দেখা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন। আমরা পিসিপিতে থাকাকালীন একসাথে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছি।

তিনি আরো বলেন, জেএসএস লড়াই সংগ্রামে পটু না হলেও মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা সৃষ্টি করতে খুবই পারদর্শী। ইদানিং ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে নানা ধরণের মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। জেএসএস আঞ্চলিক পরিষদের গদি রক্ষার্থে ও ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন না করে ভাই হত্যায় মেতে উঠেছে শাসকগোষ্ঠীর মনোবাসনা পূরণের জন্য। তিনি সবাইকে জেএসএসের মিথ্যা প্রোপান্ডার বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন।
সভা শেষে শহীদ মিটন চাকমার সংগ্রামী জীবনের ওপর স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।