লংগদুতে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পিসিপি’র সংবর্ধনা

লংগদু প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির লংগদুতে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উক্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিয়েছে বৃহত্তর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রাঙামাটি জেলা শাখা।
আজ শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২) সকালে লংগদুতে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এতে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পিসিপি জেলা শাখার সহ-সভাপতি নেপচুন চাকমা সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় অন্যান্যর মধ্য বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ লংগদু ইউনিটের প্রধান সংগঠক চন্দন চাকমা, ডিওয়াইএফ এর জেলা সভাপতি ছদরক চাকমা, এইচডব্লিএফ জেলা সদস্য রিমি চাকমা, পিসিপি নান্যাচর উপজেলা শাখার সাধারন সস্পাদক লুইস চাকমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরুতে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের আত্মোৎসর্গকারী সকল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন। পরে পিসিপি’র দলীয় সঙ্গীত ‘পাহাড়ি ছাত্র-ছাত্রী দল’ গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
অনুষ্ঠানে ইউপিডিএফ সংগঠক চন্দন চাকমা বলেন, একটা জাতিকে আত্ম সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য তার নিজস্ব অধিকার থাকা দরকার। পাহাড়ি জনগণের অধিকার না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা আজ খুবই নাজুক। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত রাত-বিরাতে তল্লাশি, সাধারণ জনগণকে হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, খুন-গুম-অপহরণসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
তিনি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে সকল আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলকে জনগণের কাতারে এসে আন্দোলনে সামিল হওয়ার জন্য আহবান জানান।
সভায় নেপচুন চাকমা বলেন, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এক সময় স্বাধীন অঞ্চল ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে আজ আমাদের পরাধীন হয়ে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য হচ্ছে পাহাড়ি জাতির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া এবং সামরিক শাসন জারি রেখে পাহাড়ি জাতিসত্তাদের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দেয়া। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও বহিরাগত সেটলার বাঙালিদের কর্তৃক প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের জায়গা জমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এযাবৎকালে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ডজনের অধিক গণহত্যা চালিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ও ন্যুনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই বললেই চলে। সরকারের অন্যায়-অবিচারের সমালোচনা করলেই হয় মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, নয় খুন-গুম করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের এসব ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
তিনি, সরকার ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
রিমি চাকমা বলেন, বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে নারীদের শুধু ঘরের কোনায় বসে থাকলে চলবে না। আমাদের নারীরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়। ঘরে বাইরে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের ধষর্ণ, ধষর্ণের পর হত্যা, নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসব ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না হওয়াতে অপরাধীরা পুনরায় ঘটনা ঘটাবার সাহস পাচ্ছে, দেশের নারী নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
যুব নেতা ছদরক চাকমা বলেন, যেকোন দেশের ছাত্ররা জাতিকে সঠিক পথ চলার দিক নিদের্শনা দেবে। ১৯৫২ সালের মাতৃভাষা দাবিতে সালাম, বরকত, রফিক, সফিক, জব্বার আত্মোৎসর্গ করেছিল। আমাদেরকেও নিজেদের ভাষার ও অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে, প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
লুইস চাকমা বলেন, আজকের ছাত্ররাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই ছাত্রদেরকে আমাদের জাতির অধিকারের জন্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পতাকা তলে সামিল হতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন