ফিরে দেখা
শনখোলা পাড়া, জালিয়া পাড়া ও মানিকছড়িতে পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ১৪ বছর

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
আজ ১৭ এপ্রিল ২০২৫ খাগড়াছড়ির বর্তমান গুইমারা উপজেলাধীন (আগে রামগড় উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল) শনখোলা পাড়াসহ ৫টি গ্রামে, জালিয়া পাড়া ও মানিকছড়ি উপজেলার মহামুনি পাড়ায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ১৪ বছর পূর্ণ হলো।
২০১১ সালের ১৭ এপ্রিল ভূমি বেদখলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে সেটলাররা উক্ত ৬টি গ্রামে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৯৪টি বাড়ি ও একটি বৌদ্ধ বিহার পুড়ে ছাই করে দেয়, ব্যাপক লুটপাট চালায় এবং জালিয়া পাড়ায় যাত্রীবাহী বাসে হামলা চালিয়ে পাহাড়ি যাত্রীদের মারধর করে রক্তাক্ত করে। এ হামলায় আশীষ চাকমা নামে এক ছাত্র নিঁখোজ হয়ে যায়। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সেদিন সকালে সেটলাররা সংঘবদ্ধভাবে শনখোলা পাড়ায় পাহাড়িদের জমিতে ঘর তুলতে যায়। তারা কয়েকটি ঘরও নির্মাণ করে ফেলে। পাহাড়িরাও সংঘবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ করলে সেটলাররা তাদের ওপর হামলা চালাতে উদ্যত হয়। এ সময় পাহাড়িরা তাদের প্রতিরোধ করলে তা সংঘর্ষের রূপ নেয়। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে পরে তিনজন সেটলার মারা যায়।
এ ঘটনার পর প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সেটলাররা সেদিন দুপুর ১টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত উত্তর শনখোলা পাড়া, সলুডং পাড়া, রেম্রং পাড়া, তৈকর্মা পাড়া, পদাছড়া এবং মানিকছড়ির মহামুনি পাড়ায় হামলা চালিয়ে ৯৪টি বাড়ি ও দাইমা সুখা বৌদ্ধ বিহার পুড়ে ছাই করে দেয়।
হামলাকারী সেটলাররা জালিয়া পাড়ায় যাত্রীবাহী বাস আটকিয়ে পাহাড়ি যাত্রীদের উপরও হামলা চালায় এবং ব্যাপক মারধর করে। সেটলারদের হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয় ১৩ বছরের শিশু মিপ্রু মারমা, গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জ্যোতি রঞ্জন চাকমাসহ আরো অনেকে। পরে মিপ্রু মারমার রক্তাক্ত ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ পায়।
এ সময় সেখানে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকলেও তারা যাত্রীদের রক্ষায় এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সন্ধ্যার দিকে সেটলাররা মানিকছড়ি উপজেলা সদরে মিছিল বের করে এবং উপজেলা সদরের মহামুনি পাড়ায় পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং আরো কয়েকটি স্থানে দোকানপাট ও ঘরবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
সেটলারদের এ হামলায় চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি ফেরার পথে জালিয়া পাড়া থেকে নিঁখোজ হয়ে যায় চট্টগ্রামের শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র আশীষ চাকমা। সেটলাররা তাকে গুম করে ফেলে। আজ পর্যন্ত তার কোন খোঁজ মেলেনি।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।