সন্তু গ্রুপের ‘চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের’ কথা আর জনগণ বিশ্বাস করছে না

0


লংগদু প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২৩ আগস্ট ২০২৫

রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার বড়কলক উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকটি গ্রামের মুরুব্বীদের সাথে এক মিটিঙে জেএসএস সন্তু গ্রুপের জনৈক নেতা বলেছেন, “এখন চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের উপযুক্ত সময়।”

তবে তাদের এমন কথা আর জনগণ বিশ্বাস করতে চায় না।

মিটিঙে ওই নেতার উক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উপস্থিত মুরুব্বীরা ইউপিডিএফসহ সকলকে নিয়ে একসাথে আন্দোলন করার প্রস্তাব দিলে মিটিঙে সন্তু গ্রুপের নেতা এই বলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রশ্নটি এড়িয়ে যান যে, “ইউপিডিএফের সাথে সমঝোতা করা হলে তারা সেই সমঝোতা লঙ্ঘন করে।”

গতকাল ২২ আগস্ট ২০২৫ উক্ত মিটিঙটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাগলীছড়া, কুকিছড়া, কিজিংছড়া, পেরাছড়া, উত্তর বড়কলক ও বড়কলক গ্রামের কয়েকজন মুরুব্বী উপস্থিত থাকতে বাধ্য হন।

মিটিঙে সন্তু গ্রুপের পক্ষে লংগদু উপজেলা শাখার সম্পাদক মনি শংকর চাকমা, তাদের ছাত্র সংগঠনের উপজেলা সভাপতি সুজয় চাকমা এবং সশস্ত্র গ্রুপের কমান্ডার ঢেবা ও দীপ্ত উপস্থিত ছিলেন।

সন্তু গ্রুপের নেতাদের বক্তব্য হলো: “সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করবে না। এখন আমরা উদ্যোগী হয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন করার কাজ হাতে নিয়েছি। চুক্তিটি বাস্তবায়নে যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

তারা সবকিছু মোকাবিলা করতে প্রস্তুত বলে উপস্থিত মুরুব্বীদের জানান এবং বলেন, “এখন চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করার উপযুক্ত সময়। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।”

জেএসএস নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে মিটিঙে উপস্থিত বড় কলক গ্রামের এক মুরুব্বী নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি নিউজকে বলেন, “অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিটিঙে যেতে হয়েছে। তাদের মিটিঙে যাওয়া মানে হলো অযথা সময় নষ্ট করা। তারপরও কী করবো, না গিয়ে তো উপায় নেই। জীবনের মায়া তো সবার আছে।”

তিনি আরও বলেন, “গত ২৭ বছরে তারা চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করেনি। তারা শুধু মুখে আন্দোলনের কথা বলে, কিন্তু কাজ করে উল্টো। কেউ যদি রাঙ্গামাটি যাবে বলে উল্টো বাঘাইহাটের দিকে যাত্রা করে, তাহলে কে তার কথা বিশ্বাস করবে? সন্তু গ্রুপ আন্দোলনের কথা বলছে, অথচ তাদের নেতারা আঞ্চলিক পরিষদে আরামে বসে আছে, আর তাদেরকেই মেরে ফেলছে যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, এবং যাদেরকে তারা তাদের চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে মিত্র হিসেবে পাবে। যারা সত্যি চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করবে তারা কখনই এটা করতে পারে না।”

তার কথায় সায় দিয়ে অপর এক মুরুব্বী বলেন, “সন্তু গ্রুপের নেতাদের মুখ থেকে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করার কথা শুনতে শুনতে কানে ঘা হয়েছে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, তারপরও তারা আন্দোলন করবে না। তারা আসলে এসব কথা বলে আমাদের বিভ্রান্ত করতে চাইছে। আমি তাদের কথা একদম বিশ্বাস করি না।”

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, “সরকারের সাথে থেকে, সেনাবাহিনীর সাথে ওঠাবসা করে কি আন্দোলন করা যায়? স্বজাতির ভাইকে মেরে ফেলে, নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিনা কারণে যুদ্ধ করে তারা কীভাবে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করতে চায়? যতসব পাগলামী!”

”ইউপিডিএফ সমঝোতা লঙ্ঘন করে” সন্তু গ্রুপের নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপিডিএফের লংগদু উপজেলা ইউনিটের সংগঠক বিশাল চাকমা বলেন, “সন্তু গ্রুপের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত সব নেতা মিথ্যা বলায় পারদর্শী। আমরা নই, সন্তু গ্রুপই বার বার সমঝোতার শর্ত লঙ্ঘন করেছে। ২০০০, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০১৮ সালের সমঝোতাগুলো তারাই লঙ্ঘন করেছে।”

সর্বশেষ ২০১৮ সালে সন্তু গ্রুপের সাথে তিন দফা সমঝোতা হয় বলে তিনি জানান এবং বলেন, “শর্ত ছিল এক পক্ষের সাংগঠনিক অঞ্চলে অন্যপক্ষ যাবে না। কিন্তু দেড় কি দুই বছরের মাথায় সেই শর্ত ভঙ্গ করে পানছড়ি ও দীঘিনালায় তারা আমাদের সাংগঠনিক এলাকায় প্রবেশ করে আমাদের উত্যক্ত করতে থাকে। শুরু তাই নয়, পরে নাড়েইছড়িতে জীবন ত্রিপুরাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করার মাধ্যমে তারা নতুন করে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত শুরু করে।”

সন্তু গ্রুপ চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন করলে ইউপিডিএফ এখনও তাদেরকে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলে বিশাল চাকমা জানান। “কিন্তু তারা (সন্তু গ্রুপ) তো সরকারের দালালি ও সেনাবাহিনীর পদলেহন, আর নিজের ভাইকে গুলি করে মারা ছাড়া কিছুই করে না”।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More