সাজেকবাসীর নিরাপত্তা ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ

0
সাজেকবাসীর নিরাপত্তা ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটি।

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২১ জুন ২০২৪

সাজেকবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙ্গে দেয়া, মো. নাঈম-এর খুনীদের আড়াল করতে ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দসহ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে দেয়া মামলা প্রত্যাহার, প্রকৃত খুনী ও তাদের আশ্রয় দাতাদের গ্রেফতার এবং সাজেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হয়রানি বন্ধের দাবিতে সাজেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

আজ শুক্রবার (২১ জুন ২০২৪) দুপুর ১২টার সময় সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির উদ্যোগে সাজেকের উজো বাজারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব নতুন জয় চাকমার সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য বাবু ধন চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ৩৬নং সাজেক ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার দয়া ধন চাকমা ও সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মি,নতুন জয় চাকমা।

এতে সংহতি জানিয়ে আরো বক্তব্য রাখেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা কমিটির সভাপতি নিউটন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি বিশাখা চাকমা।

বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর একটি সশস্ত্র দল সাজেক বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান করে বাজার থেকে মালামাল ক্রয় বন্ধ করে দেয়াসহ পুরো এলাকাজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে ভুক্তভোগী বিক্ষুব্ধ জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ১৮ জুন সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বিক্ষোভের সময় জনতা সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করলে এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা ভারী অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে মো. নাঈম নামে শান্তি পরিবহন বাসের এক হেলপার হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। সন্ত্রাসীদের এ হামলায় দু’জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১২/১৩ জন আহত হন।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মো. নাইম গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নিহত হওয়ার পরও খুনিদের গ্রেফতার না করে উল্টো ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিহত মো. নাঈম-এর চাচা বাবুল হোসেনকে বাদী করে সাজেক থানায় একটি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছৈ। যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিহত মো. নাঈম-এর প্রকৃত খুনীদের আড়াল করা ও ঠ্যাঙাড়েদেরকে নিরাপদ আশ্রয় করিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

সাজেক ইউপির ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার দয়া ধন চাকমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্রভাবে বাঘাইহাট বাজারে অবস্থান করলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো এখন আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর নানা ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সাজেক ইউনিয়নের গত দুই বছর আগে বাস্তবায়িত প্রকল্প সেনা জোনে জমা দেয়ার নির্দেশ প্রদানসহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হয়রানিমুলক কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়েছে। আমরা এই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

সভাপতির বক্তব্যে সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব নতুন জয় চাকম বলেন, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী সাজেক এলাকার মুরুব্বি ও সাধারণ জনগণকে প্রাণ নাশের হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে। তাদের এমন হুমকিতে জনগণ আজ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশ থেকে তিনি ৬টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১। শান্তি গাড়ির হেল্পার মো. নাঈম হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত খুনীদের গ্রেফতার করতে হবে; ২। মো. নাঈম হত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত খুনীদের রক্ষা করতে ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীদের আশ্রয় নিশ্চিত করতে ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দের নামে ও অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেই মিথ্যা মামলা আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্য প্রত্যাহার করতে হবে; ৩। সাজেক গণ অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় কারবারী, মুরু্ব্বি ও সর্বস্তরের গণ মানুষের উপর  প্রতিনিয়ত যে প্রাণ নাশের হুমকি তা বন্ধ করে প্রত্যেকের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; ৪। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হয়রানিমুলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে স্বাভাবিকভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকলাপ পরিচালনার সুবন্দোবস্তু করতে হবে; ৫। ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীকে প্রশ্রয়দানকারী বাঘাইহাট সেনা জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল খায়রুল আমিন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মদ শিরিন আক্তারকে প্রত্যাহার করতে হবে ও ৬। ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দেয়া এবং সাজেক এলাকায় কোন প্রকার ঠ্যাঙারে বাহিনীদের নিয়ে আসা বন্ধ করতে হবে।

উপরোক্ত দাবি পুরণ করা না হলে পর্যটন অবরোধ, সড়ক ও নৌপথ অবরোধ, অবস্হান ধর্মঘটসহ আরো কঠোর কর্মসুচি পালন করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More