সাজেকে কলেজ নির্মাণে প্রশাসনের বাধা, নিষেধাজ্ঞা দিয়ে লাগানো হয়েছে বনবিভাগের সাইনবোর্ড

0

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

রাঙামাটির সাজেক ইউনিয়নের উজোবাজার এলাকায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে “সাজেক কলেজ’ নামে একটি কলেজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে কলেজটির নির্মাণ কাজ প্রায় সম্পন্ন হওয়ার পথে। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে উপজেলা প্রশাসন বনবিভাগকে দিয়ে কলেজ নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গেছে, আজ শুক্রবার (১৩ জুন ২০২৫) দুপুর ২টার সময় বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার সাজেক ইউনিয়নের কার্যালয়ে এসে ইউপি সদস্য ও বাঘাইহাট বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে সাজেক কলেজ নির্মাণ বিষয়ে আলাপ করেন। এতে তিনি এক মাসের জন্য কলেজ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা এবং বনবিভাগ কর্তৃক সাইনবোর্ড লাগানোর নির্দেশনা দেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, “সাজেক কলেজ নির্মাণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোন প্রকার বরাদ্ধ দেওয়া যাবে না। বিগত সময়ে বাস্তবায়িত সকল প্রকল্পের হিসাব তদন্ত হবে। কলেজ নির্মাণে কোন বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।”

এরপর বনবিভাগের লোকজন এসে নির্মাণাধীন কলেজের সামনে খুঁটির ওপর একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে যান। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে “এটি সরকারের সংরক্ষিত বনভূমি। সংরক্ষিত বনভূমিতে সরকারের অনুমতি ব্যতীত যেকোন স্থাপনা নির্মাণ আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ। এ স্থানে যেকোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হল – আদেশক্রমে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা পা: চ: উ: বনবিভাগ, রাঙ্গামাটি”।

নির্মাণাধীন কলেজের সামনে লাগানো বনবিভাগের সাইনবোর্ড।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ইউএনও’র কথাবার্তা মোটেই সুবিধা মনে হয়নি। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্হান- এই পাঁচটি হচ্ছে একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। এর কোন একটির ব্যত্যয় ঘটলে নাগরিকদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। নাগরিকদের অধিকার পূরণে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের কর্মচারীদের নৈতিক দায়িত্বও বটে। কিন্তু বাঘাইছড়ির ইউএনও বনবিভাগকে ব্যবহার করে সুকৌশলে কলেজ নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন এবং সাজেকবাসী ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করার পাঁয়তারা করছেন, যা আমাদের কাম্য ছিল না।

তিনি আরো বলেন, সাজেক এলাকাবাসী তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে কলেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। সরকার-প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেখানে এলাকাবাসীর এ মহৎ উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা সেখানে বার বার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বর্তমান কলেজটির নির্মাণ কাজের তিন ভাগের দুই ভাগ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। এ সময়ে এসে ইউএনও’র নির্দেশ বা পরামর্শে বনবিভাগের লোকজন নির্মাণাধীন কলেজের সামনে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়ে গেছে ‘সরকারের সংরক্ষিত বনভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না’ বলে। যা সাজেকবাসীকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে, বলেন তিনি।  

জানা গেছে, ইতিপূর্বেও বাঘাইহাট সেনা জোনের জোন এফ.এস মো. শরীফ কলেজ নির্মাণ কাজে বাধা প্রদানের চেষ্টা করেছেন। তিনি কয়েকজন লোককে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর হুমকিও দিয়েছিলেন।

এখন এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সাজেকে শত কোটি টাকার পর্যটন স্থাপনা ও মুসলিমবিহীন অঞ্চলে বিলাসবহুল মসজিদ নির্মাণ করা গেলে কলেজ নির্মাণ করা যাবে না কেন? যেখানে ১৭ হাজার ভোটার, ৫০ হাজার মানুষের বসবাস সেখানে ফরেস্ট আইন কেবলমাত্র কলেজ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হচ্ছে কেন?

এলাকাবাসীর সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, সাজেক ইউনিয়নে আজ পর্যন্ত যতগুলো পাড়া গ্রাম গড়ে উঠেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তদুপরি যতগুলো সেনাক্যাম্প স্হাপন করা হয়েছে সবই তো বনবিভাগের সংরক্ষিত এলাকায়। তাহলে সাজেক কলেজ নির্মাণে কেন এই প্রতিবন্ধকতা? যেখানে নতুন বাংলাদেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কথা কথা বলা হচ্ছে, সেখানে সাজেকবাসীর সাথে এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন?

তাই, সাজেক এলাকাবাসী অবিলম্বে সাজেক কলেজ নির্মাণে বাধা দূর করে প্রত্যন্ত সাজেকবাসীর ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More