সাজেকে কলেজ নির্মাণে প্রশাসনের বাধাদানের প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

0


সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

সাজেকে কলেজ নির্মাণে প্রশাসনের বাধা ও বনবিভাগ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞাস্বরূপ সাইনবোর্ড টাঙানোর প্রতিবাদে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছে সাজেক এলাকাবাসী। 

আজ সোমবার ( ১৬ জুন ২৫) সকাল ৯টার সময় সাজেকের উজোবাজারে এ মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫ শতাধিক লোক অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে সাজেক ইউপির চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমার সভাপতিত্বে ও সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব বাবুধন চাকমার  সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, সাজেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য পরিচয় চাকমা, শিক্ষক সুমন চাকমা, সাজেক কার্বারী এসোসিয়েশনে সভাপতি ও সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটির আহব্বায়ক নতুন জয় চাকমা।


নতুন জয় চাকমা বলেন, সাজেকের জনগণ কখনো সেনাবাহিনীর কাছে, কখনো বা বনবিভাগের কাছে জিম্মি। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের মানুষ শোষিত বঞ্চিত, অবহেলিত। বর্তমানে সাজেকবাসীর উদ্যোগে সাজেক কলেজ নির্মাণে সেনা-প্রশাসনের ইন্ধনে ও সহায়তায় বনবিভাগ বাধা প্রদান করছে। তারা কলেজ নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। এ তথাকথিত বনআইন সাজেকবাসীর প্রতি যেন কুঠারাঘাত। এ আইনে হুমকি দিয়ে সাজেকে ঘর, স্কুল, কলেজ নির্মাণে বাধা প্রদান করছে প্রশাসন। অথচ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস ও পাহাড়ি ঘর-বাড়ি উচ্ছেদ করে সাজেকে পর্যটন, সড়ক নির্মাণ, ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এসবের জন্য বন আইন যেন মৃত।  কিন্তু এ মৃত বন আইন তখনই জীবিত হয় যখন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনে কোন কিছু করতে যায়।

তিনি অতীতের ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আমরা ২০১০ সালে দেখেছি বন বিভাগ তথাকথিত আইনের ধারা দেখিয়ে গঙ্গারামে বুদ্ধমূর্তি স্থাপনেও বাধা দেয়। অথচ ২০২০ সালে কোন বাধা ছাড়াই সাজেক রুইলুই পাহাড়ে বিলাসবহুল মসজিদ নির্মাণ করা হয়। কী আজব প্রশাসন! কী বৈষম্যমূলক আইন। এ বৈষব্যমূলক আইন ও হয়রানি থেকে সাজেকের জনগণ মুক্তি চায়।

তিনি অবিলম্বে সাজেক কলেজ নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারপূর্বক সাজেকবাসী ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ সৃষ্টির জন্য অর্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।


সুমন চাকমা বলেন, সাজেক এলাকার সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাজেক কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কেন কলেজ নির্মাণে বাধা দিচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চল হিসেবে নাগরিকদের শিক্ষা ও সুচিকিৎসার জন্য সরকারের এগিয়ে আসা দরকার সেখানে কলেজ নির্মাণে বাধা দেয়া হচ্ছে। এটা সাজেকবাসীকে উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখার চক্রান্ত ছাড়া কিছুই নয়। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা বিষয়টি সুনজরে দেখবেন।

পরিচয় চাকমা বলেন, সাজেক এক সময় ঘন বনজঙ্গল ছিল। এখানে বন আইন অমান্য করে সরকার-প্রশাসন প্রাকৃতিক বন উজাড় করে রাস্তা নির্মাণ, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন ও সেনা ক্যাম্প নির্মাণ করেছে। এসব সড়ক, স্থাপনা নির্মাণকালে কোথায় ছিল বন আইন? বনবিভাগের আইন কি শুধু পাহাড়ি জনগণকে নিপীড়ন-হয়রানির জন্য? এ আইন যদি এলাকার সর্বসাধারণের চাওয়া সাজেক কলেজ নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এলাকার জনগণ তা মানবে না। তিনি অবিলম্বে কলেজ নির্মাণে বাধা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।


সভাপতির বক্তব্যে চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, জনগণের উদ্যোগে সাজেক কলেজ নির্মাণের শুরুতে বাঘাইহাট জোন থেকে এফএস মো. শরীফ কর্তৃক বাধা প্রদান করা হয়। তিনি কয়েকজনকে মামলার ভয়ও দেখিয়েছেন। কিন্তু তার হুমকি তোয়াক্কা না করে এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে কলেজ নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এর পর গত ২০ মে বাঘাইহাট বনবিভাগ থেকে আমাকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে প্রতিবেদন দেয়, যাতে কলেজ অপসারণ করি। বনবিভাগের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সরাসরি জোনের নির্দেশ, আমরা অসহায় বলে জানান। আবার এ মাসে গত ১৩ তারিখ দুপুর ২টা সময়ে বাঘাইছড়ি ইউএনও শিরীন আক্তার সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে এসে ইউপি পর্ষদ ও বাঘাইহাট বন বিভাগে কর্মকর্তাদের সাথে সাজেক কলেজ নির্মাণ নিয়ে আলাপ করে এক মাসের জন্য সাজেক কলেজ নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা ও বনবিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন ইউএনও।


তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয়, ইউএনও সাজেক কলেজ নির্মাণের জন্য ইউপি থেকে কোন বরাদ্ধ দেওয়া যাবে না বলেও নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি বিগত সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের বাস্তবায়িত সকল প্রকল্প থেকে কলেজ নির্মাণে কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিনা তাও তদন্ত করা হবে বলে ইউএনও শিরীন আক্তার বলেছেন।

তিনি কলেজ নির্মাণে প্রশাসনের এমন বাধা এলাকার জনগণ মানতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন এবং বলেন, কোন উপায় না পেয়ে আজকে কলেজ নির্মাণে প্রশাসনের বাধার বিরুদ্ধে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এ বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আজকের মধ্যে মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টাকে একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করবো।


তিনি অবিলম্বে কলেজ নির্মাণে প্রশাসন ও বনবিভাগের বাধা ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সাজেকবাসীর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে, সাজেক কলেজ নির্মাণে প্রশাসন ও বনবিভাগের বাধা-নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আজ রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানা গেছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More