সাজেকে সু্ইমিংপুল, পর্যটনের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদ ও ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

0
সাজেকে সুইমিংপুল, পর্যটনের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদ ও ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্থানীয় কয়েকটি সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিরা। 

সাজেক প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল ২০২৪

রাঙামাটির সাজেকে সুইমিংপুল, পর্যটনের নামে পাহাড়ি (ত্রিপুরা, বম, লুসাই) উচ্ছেদ ও ভূমি বেদখলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল ২০২৪) সকালে ‌‘ভূমি রক্ষা কমিটি, পরিবেশ রক্ষা কমিটি, জুমচাষী কল্যাণ সমিতি, কার্বারী এসোসিয়েশন ও জনপ্রতিনিধি’ ব্যানারে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

সকাল ১০টার সময় সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট বনানি বনবিহার গেইট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সাজেকের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেতকাবা দ্বপদা চৌমুহনীতে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিল ও সমাবেশে তারা পর্যটনের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদ ও ভূমি বেদখলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।


সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সাজেক ইউনিয়নের কার্বারি এসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা।

কার্বারী এসোসিয়েশনের সদস্য প্রবীন চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সাজেক ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার পরিচয় চাকমা, কার্বারী ধারজ চাকমা, ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার দয়াধন চাকমা ও জুমচাষী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বীর কমল চাকমা (কার্বারী)।

সমাবেশে মেম্বার পরিচয় চাকমা বলেন, আজকে আমরা এখানে সমাবেশে মিলিত হয়েছি সাজেকের পর্যটন এলাকায় পাহাড় কেটে যে সুইমিংপুল নির্মাণ করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে এবং সাজেকে যে ৭টি স্থানে ইসলামী নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড লাগাানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।


তিনি বলেন, গতকাল বাঘাইছড়ি ইউএনও পর্যটন এলাকায় গেছেন এবং সুইমিংপুল বন্ধ করে দিয়ে রিসোর্ট মালিককে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন। এ সময় তিনি সুইমিং পুল বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনাও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমাদেরকে সাজেক রক্ষা করতে হবে এবং সাজেককে রক্ষার জন্য লড়াই করতে হবে।

বিভিন্ন জায়গার নাম পরিবর্তন করে ইসলামী নাম বসানোর বিষয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেসব জায়গায় বাঙালির কোন অস্তিত্ব নেই সেসব জায়গায় বাঙালি নাম দিয়ে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।

তিনি আগামীতেও এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশে সামিল হতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

ধারাজ কার্বারী তার বক্তব্যে বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে এ অঞ্চলে জুমচাষ করে বসবাস করে আসছি। কিন্তু এসব জায়গার নাম কিভাবে বাঙালির নামে হবে? রক্ত দিয়ে হলেও আমাদেরকে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে।

তিনি সাজেককে বাঁচাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ধারাজ কার্বারী।

মেম্বার দয়াধন চাকমা বলেন, আমরা উচ্ছেদ হতে হতে বর্তমানে কাজলং শেষ সীমানায় এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এখন এখান থেকেও আমাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, নামে-বেনামে জায়গা-জমি দখল করা হচ্ছে। বাঙালির কোন অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও তারা বিভিন্ন জায়গার নাম পরিবর্তন করে বাঙালি নাম বসিয়ে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে সেখানে বাঙালি পুনর্বাসন করা। কাজেই, আমাদের আর ভয়ে চুপচাপ বসে থাকলে হবে না। আমাদেরকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।

বীর কমল চাকমা বলেন, এই সাজেকে আমরা যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছি। কিন্তু আমরা এখনো এসব জায়গার মালিক হতে পারছি না।

তিনি জায়গার নাম পরিবর্তন করে ইসলামী নামের সাইনবোর্ড লাগানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, কোন একটা স্থানের নাম বসাতে হলে সে স্থানে তার স্মৃতি, ঐতিহ্য থাকতে হয়। কিন্তু যেসব স্থানের নাম পরিবর্তন করে বাঙালি নাম দেওয়া হয়েছে সেখানে তো বাঙালির কোন অস্তিত্বই নেই।

সমাবেশের সভাপতি ও কার্বারি এসোসিয়েশনের সভাপতি নতুন জয় চাকমা বলেন, সাজেকে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে পাহাড় কেটে সুইমিং পুল নির্মাণ করা হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য খুবই ভয়াবহ। যে কোন সময় পাহাড় ধস হতে পারে।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সাজেকের জনগণ তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়ে এখানে বসবাস করছি। এই সাজেকে সুষ্ঠু পরিবেশে বসবাস করার জন্য আমাদের সকল অন্যায়-অবিচার প্রতিহত করতে হবে। সাজেকে মানবকল্যাণ বিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতার আগে সাজেকে কোন বাঙালির বসতি ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি? বিভিন্ন ইসলামী নাম দিয়ে এখানে আমাদের জায়গা দখল করা হচ্ছে। তাই সব বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিবেশ ও জায়গা-জমি রক্ষা করতে হবে।

নতুন জয় চাকমা বলেন, পৃথিবীতে মানবজাতি যতক্ষণ টিকে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের প্রজন্ম যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এখানে বসবাস করতে পারে সেই পরিবেশ আমাদেরকে তৈরি করে দিতে হবে। তাই শুধু রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছাড়া কোন একটা জাতি টিকে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা বসে আছেন ও যারা পুঁজিপতি তারা সাধারণ জনগণের কথা ভাবেন না। তারা শুধু নিজেদের স্বার্থটাই দেখেন। তাই আমরা যে পাহাড়ে বসবাস করছি সেই পাহাড়কেই আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমরা যদি নিশ্চুপ থাকি তাহলে শুধু পাহাড় ধ্বংস নয়, জাতিগতভাবে আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।

তিনি সকলকে অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে ও পরিবেশ সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সমাবেশে সাজেক ইউনিয়নের মহিলা মেম্বার সুমিতা চাকমা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ এলাকার কয়েক শ’ লোক অংশগ্রহণ করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More