একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় কুটিরের জায়গাকে নিয়ে সেনাবাহিনীর অপপ্রচার!

0

ধুতাঙ্গ মৌন অরণ্য কুটির ও কুটিরের জায়গা নিয়ে সেনাবাহিনীর অপপ্রচার ও কুটিরের চিত্র।

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

রাঙামাটির লংগদু উপজেলাধীন পাগলিছড়া মৌনে (পাহাড়ে) স্থানীয় এলাকাবাসী গত এক বছর আগে ‘ধুতাঙ্গ মৌন অরণ্য কুটির’ নামে একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় কুটির নির্মাণ করেন। ঐ কুটিরে শ্রীমৎ পবিত্র ভান্তে নামে এক বৌদ্ধভিক্ষু ধ্যান-সাধনা করে থাকেন। মূলত ভান্তের ধ্যান-সাধনার সুবিধার্থে স্থানীয়রা কুটিরটি নির্মাণ করে দেন।

ইতোমধ্যে কুটিরটি সম্প্রসারণ ও আরো কিছু স্থাপনা নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী মাটি কেটে জায়গা প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু সেনাবাহিনী এখন কুটির ও কুটিরের ওই জায়গাটিকে ‘ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ মাঠ’ উল্লেখ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ নিয়ে গত ৩ জানুয়ারি ২০২৪ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সংবাদ মাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রদান করেছে এবং তাদের ওয়েবসাইটেও খবরটি দেওয়া হয়েছে।

ধুতাঙ্গ মৌন অরণ্য কুটির 

কুটিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান

এ বিষয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাগলিছড়া গ্রাম থেকে কুটিরটির দূরত্ব আনুমানিক ১ কিলোমিটার। গত বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে সেনাবাহিনীর লংগদু জোনের কমাণ্ডার লে. কর্নেল হিমেল মিয়া (পিএসসি) তার দলবল নিয়ে পাগলিছড়া গ্রামে যান। এরপর তিনি কুটিরটি দেখতে যাবেন জানিয়ে গ্রামের এক বাসিন্দাকে সাথে নিয়ে কুটিরের স্থানে যান। এ সময় ভান্তে কুটিরে ছিলেন না, তিনি কাজের জন্য রাঙামাটি সদরে অবস্থান করছিলেন। জোন কমাণ্ডার ওই গ্রামবাসীর সামনে তিনি ভান্তেকে চেনেন বলে জানান এবং কুটিরে আরো কী কী করা দরকার সে বিষয়ে তাকে পরামর্শও দেন।

এক পর্যায়ে জোন কমাণ্ডার তার সঙ্গে থাকা ক্যামেরা দিয়ে বিহার ও বিহারের আশে-পাশের জায়গাগুলোর ছবি তোলার পর সেখান থেকে চলে যান।

ধুতাঙ্গ মৌন অরণ্য কুটিরের স্থাপনা নির্মাণের জন্য মাটি কাটছেন স্থানীয়রা।

পরদিন (৩ জানুয়ারি) সেনাবাহিনী যখন কুটির ও কুটিরের জায়গাটিকে “ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও প্রশিক্ষণ মাঠ’ হিসেবে ক্যাপশনযুক্ত করে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (“Bangladesh Army” নামের ফেসবুক পেইজে) প্রচার করে তখন ভান্তে ও এলাকাবাসী তা দেখে অবাক হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে তারা জোন কমাণ্ডারকে ফোন করে আপত্তি জানিয়ে বলেন, যে জায়গাটি ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ মাঠ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে তা তো সত্য নয়। এটা তো ধর্মীয় কুটিরের জায়গা, তা আপনিও দেখে এসেছেন। তখন জোন কমাণ্ডার তাদেরকে ‘এ নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নেই, কোন সমস্যা হবে না’—এমন আশ্বাস প্রদান করেন বলে জানা গেছে। তবে এতে এলাকাবাসীর সংশয় কাটেনি। তারা কুটিরকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও কুটিরের জায়গাটি নিয়ে সেনাবাহিনীর অপ্রচারের বিষয়ে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং কুটিরের জায়গাটি দখল করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী এ ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More