খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বিষয়ে ইউপিডিএফের প্রতিবেদন প্রকাশ

0


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

 গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলাধীন মারমা অধ্যুষিত রামসু বাজারে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর মানবাধিকার পরিবীক্ষণ সেল।

আজ সোমবার (৬ অক্টোবর ২০২৫) প্রকাশ করা এই প্রতিবেদনে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা হামলার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। হামলার জন্য স্থানীয় সামরিক প্রশাসন ও সেটলারদের দায়ি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে হামলা রোধে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৭ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। এগুলো হলো:

১। অবিলম্বে হামলাকারী সেনা-সেটলারদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং হামলায় নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান, আহতদের (গুইমারা ও খাগড়াছড়িতে) সুচিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ব্যবসায়ীদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদানসহ স্ব স্ব স্থানে পুনর্বাসন করা।

২। উগ্রসাম্প্রদায়িক সেটলারদেরকে সেনাবাহিনীর মদতদান বন্ধ করা এবং সেটলারদেরকে সম্মানজনকভাবে সমতলে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৩। পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট সরকারগুলোর চালু করা পাহাড়ি বিদ্বেষী রাষ্ট্রীয় নীতি বাতিল করা।

৪। গুইমারা হামলার পরবর্তী যেভাবে মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলছে তা অতি দ্রুত বন্ধ করা।

৫। সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের শাস্তি প্রদান করা এবং হামলা থেকে পাহাড়িদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ ও গুইমারা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সামসুদ্দিন রানাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা।

৬। জাতিসংঘকে জড়িত করে হামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ” তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদনে হামলার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাতে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সিঙ্গিনালায় ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মারমা কিশোরী তিন জন বাঙালি যুবক কর্তৃক সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। সেদিন রাতেই “জুম্ম ছাত্র জনতা” নামে একটি প্লাটফর্ম পরদিন (২৪ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরে বিক্ষোভের ঘোষণা দেয়।

একই দিন (২৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা মামলা করতে খাগড়াছড়ি সদর থানায় যান এবং রাতভর থানায় অবস্থান করার পর ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ করে। এরপর সকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থল সিঙ্গিনালায় গিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় চয়ন শীল (১৯), পিতা- বাপ্পী শীল নামে একজনকে গ্রেফতার করে। বাকী দু’জন আসামী হয় পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অথবা রহস্যজনক কারণে তাদেরকে গ্রেফতার এড়াতে সাহায্য করা হয়।

জুম্ম ছাত্র জনতা ২৪ সেপ্টেম্বর কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি সদরের মুক্তমঞ্চে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং ধর্ষণে অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতার ও যথাযথ বিচারের দাবিতে পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ ও ২৬ সেপ্টেম্বর যৌন নিপীড়ন বিরোধী মহাসমাবেশের ডাক দেয়।

তাদের ঘোষিত কর্মসূচি মোতাবেক ২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলাব্যাপী স্বতঃস্ফুর্তভাবে আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালিত হয়। কিন্তু সেদিন রাত সাড়ে ৮টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুর বাজার থেকে সেনাবাহিনী জুম্ম ছাত্র জনতার সংগঠক ও বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক উক্যনু মারমাকে জোরপূর্বক টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নির্যাতন করে খাগড়াছড়ি সেনা ব্রিগেড ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

এ ঘটনা জানাজানি হলে উক্যনু মারমাকে আটকের প্রতিবাদে পানখাইয়া পাড়া, সিঙ্গিনালাসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত লোকজন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ফলে রাত ১০টার দিকে সেনাবাহিনী খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট থেকে উক্যনু মারমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই লোকজন পানখাইয়া পাড়ায় ছুটে যায়। সেখানে বিক্ষুব্ধ জনতার সামনে উক্যনু মারমা বক্তব্য দেন এবং পরদিন (২৬ সেপ্টেম্বর) মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

উক্যনু মারমাকে আটক ও হেনস্তার ঘটনা ছাত্র জনতাকে প্রবলভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ২৬ সেপ্টেম্বর আয়োজিত মহাসমাবেশে বিপুল সংখ্যক ছাত্র জনতা অংশ নেন। উক্ত সমাবেশ থেকে উক্যনু মারমা ২৭ সেপ্টেম্বর পূর্ণ দিবস সড়ক অবরোধ ঘোষণা করেন।

খাগড়াছড়ি সদরে হামলার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে ছাত্র জনতা। শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ চলাকালে এক পর্যায়ে দুপুরে ১২টার দিকে খাগড়াছড়ি সদরের সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এলাকায় টমটম ও মোটর সাইকেল নিয়ে কয়েকজন সেটলার যুবক উস্কানি সৃষ্টি করলে এতে পিকেটারদের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে তারা চলে গেলেও কিছুক্ষণ পর সংঘবদ্ধ হয়ে ফিরে এসে অবরোধ পালনকারীদের ওপর হামলা চালালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। খেজুড় বাগান (উপজেলা পরিষদ) এলাকায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেটলাররা সেখানে একজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এছাড়া আরো কয়েকজন আহত হন। আহতদের  কয়েকজন হলেন দীঘিনালার বড়াদাম গ্রামের রিকন চাকমা ওরফে বারিজে (তিনি একজন পিকআপ চালক), খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা মারমা পাড়ার বাকুলু মারমা পিতার নাম থৈইরি মারমা এবং একই গ্রামের কালাইয়া মারমা পিতার নাম থুইহ্লা প্রু মারমা। এদের মধ্যে রিকন চাকমাকে সেটলাররা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। বর্তমানে তিনি চিকৎসাধীন রয়েছেন।

এমতাবস্থায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন বেলা ২টা থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ঘটনাস্থল খেজুড় বাগান এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু সেখানে সংঘর্ষ থামলেও সেটলাররা ১৪৪ ধারা জারির মধ্যে মহাজন পাড়ায় গিয়ে আক্রমণ চালায় এবং পাহাড়িদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের চেষ্টা করে।

এরপর সেটলাররা সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি বাজারের দক্ষিণ পাশে য়ংড বৌদ্ধ বিহারে হামলার চেষ্টা করে। তবে এলাকার জনগণ প্রতিরোধ করলে বিহারের সামনে জড়ো হওয়া জনতার ওপর সেটলাররা হামলা শুরু করে দেয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টা চালায়। সেনা পুলিশের উপস্থিতিতেই সেখানে সেটলাররা ৩ জন পাহাড়িকে (মারমা) কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এরা হলেন- কুমিয়া ত্রিপুরা (২৫), মংসাঅং মারমা (২২) ও মংহ্লা মারমা। সেটলার বাঙালিরা সেখানে পাহাড়িদের দোকানপাটেও ভাঙচুর চালায়।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে এবং পূর্বের ধর্ষণের বিচার দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতা ঐদিন রাতে তাদের ফেসবুক পেইজে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।

গুইমারায় ভয়াবহ হামলার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুম্ম ছাত্র জনতার ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে গুইমারা এলাকার ছাত্র জনতা রামসু বাজার এলাকায় টাউন হলের সামনে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ পালন শুরু করে। তাদের শান্তিপূর্ণ অবরোধ পালনকালেই সেনাবাহিনী অবরোধকারী ছাত্র জনতার ওপর বিনা উস্কানিতে হামলা চালালে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এভাবে হামলার সূত্রপাত হয়। কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর বহিরাগত সেটলার ও সেনা সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়েরা সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং রামসু বাজারে যৌথভাবে হামলা চালায়।

সেদিন গুইমারায় কী ঘটেছিল সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, জুম্ম ছাত্র জনতার অবরোধ চলাকালে সকাল সাড়ে ১০টার সময় গুইমারা ব্রিগেড থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল সদস্য সেখানে এসে উপস্থিত হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির কথা বলে ছাত্র জনতাকে অবরোধ তুলে নিতে চাপ দেয়। তারা অভিযুক্ত একজনকে আটক করে রিমাণ্ডে নেয়া হয়েছে বলে অবরোধকারীদের জানায়। তবে অবরোধকারীরা সেটা যথেষ্ট নয় এবং লোকদেখানো বলে মন্তব্য করে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। এমতাবস্থায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবরোধকারী ছাত্র জনতার ভিতর ঢুকে পড়ে এবং লাঠিচার্জ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এরপর সেনাবাহিনীর সাথে বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এমতাবস্থায় গুইমারা বাজার ও জালিয়া পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সেটলার বাঙালিদের নিয়ে আসা হয়। একই সাথে সেনাসৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র দলকেও সেখানে আনা হয়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী ও ঠ্যাঙাড়েরা বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়, অন্যদিকে সেটলাররা রামসু বাজারে গিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালানোর পর দোকানপাট ও বসতবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুহুর্তের মধ্যেই রামসু বাজার এলাকা মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়। মানুষ নিজেকে রক্ষায় যে যেদিকে পারে সরে যেতে থাকে। অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সেটলারদের একটি অংশ গুইমারা বাজারের পাশে (দক্ষিণ-পূর্বে) মারমা অধ্যুষিত আমতলিতে হামলার চেষ্টা চালায়। তবে সেখানে অন্য বাঙালিরা তাদেরকে বাধা দেয়। ফলে আমতলিতে পাহাড়ি বসতিগুলো সেটলার হামলা থেকে রক্ষা পায়।

উহ্লামে মারমা (১৪) নামে ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তার বাবা কোলে করে নিয়ে যাওয়ার সময় ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে হামলার ভয়াবহতা প্রকাশ পায়। ছাত্রীটি সেটলারদের আক্রমণে মাথায় আঘাত পেয়ে আহত হয়েছিলেন। হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় আঘাত করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

প্রতিবেদনে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে বলা হয়, বর্বরোচিত এ হামলায় ৩ জন পাহাড়ি ঘটনাস্থলে নিহত হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন অর্ধশত পাহাড়ি, যাদের অনেকে গুরুতর জখম নিয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেক আহত ব্যক্তি রয়েছেন যারা ভয়ে নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাননি এবং হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে নিজেদের মতো করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন নারীও রয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন একজন মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।

হামলায় নিহত তিন জন হলেন:

১. থোয়াইচিং মারমা (২৫), পিতা- হ্লাচাই মারমা, গ্রাম- বটতলা পাড়া, হাফছড়ি, গুইমারা, তিনি পেশায় একজন ড্রাইভার;

২. আখ্র মারমা (২৪), পিতা- আপ্রু মারমা, গ্রাম -সাইংগুলি পাড়া, বড়পিলাক, গুইমারা; এবং

৩. আথুইপ্রু মারমা (২৬), পিতা- নাম থোয়াইহ্লাঅং মারমা, গ্রাম লিচু বাগান, হাফছড়ি, গুইমারা।

এছাড়া আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা কয়েকজনের নামও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছ।

এতে বলা হয়, সেটলারদের অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রামসু বাজারের ১৫টি প্লটের ৫০টির অধিক দোকান, ১৫টি বসতবাড়ি, ১৬টি ভাড়া বাসা, ১টি বেসরকারি অফিস, ১টি হলুদের গোডাউন (বাঙালি মালিকানাধীন), ১৭টি মোটর সাইকেল ও ১টি মাহিন্দ্র (থ্রি হুইলার) গাড়ি। ভাঙচুর করা হয় অনেক বসতবাড়ি। বাজারে অগ্নিসংযোগের আগে সেটলাররা দোকান ও বাড়িঘরে ব্যাপক লুটপাট চালায়। তারা লুণ্ঠিত মালামাল ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে যায় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। রামসু বাজার ও আশে-পাশের বসতবাড়িতে অগ্নিসযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাতের মধ্যে মরদেহ দাহ করতে প্রশাসনের চাপ সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গুইমারা উপজেলা প্রশাসন রাতের মধ্যেই মরদেহ সৎকার করতে নিহতদের আত্মীয়স্বজনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এতে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। পরে প্রশাসনের চাপের মুখে মধ্যরাতে ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ না করে তারা মরদেহগুলো দাহ করতে বাধ্য হন।

হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, গুইমারায় রামসু বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গত ২৮ সেপ্টেম্বরের হামলা, খুন, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ছিল পূর্বপরিকল্পিত। গুইমারা বাজারের একেবারে কাছে হওয়ায় রামসু বাজারটি অনেক ব্যবসায়ীর ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠেছিল। এই বর্ধিঞ্চু বাজারটিকে তারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করত। কারণ আশেপাশের অনেক পাহাড়ি গ্রামের লোকজন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস এই বাজার থেকে সংগ্রহ করতে পারত। তাদের গুইমারা বাজারে যাওয়া লাগত না।

অপরদিকে গুইমারা সেনা ব্রিগেডের একেবারে কাছে পাহাড়িদের একটি বাজারকে সেনারা ভালো চোখে দেখত না। তারা “নিরাপত্তার” কারণে তাদের ক্যাম্পের চারপাশে কেবল বাঙালিদের বসতি রাখতে চায়। এ কারণে রামসু বাজারটি এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও সেনাদের চক্ষুশূল হয়ে দাঁড়ায়। তারা মারমা অধ্যুষিত এই বাজারটি ধ্বংস করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। ২৮ সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধের দিনটিকে তারা হামলার মোক্ষম সময় বলে ধরে নেয়।

রামসু বাজারকে টার্গেট করার উদ্দেশ্য হলো: প্রথমত, গুইমারায় উঠতি মারমা ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া। দুই, রামেসু বাজারকে গুইমারা বাজারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠাকে রোধ করা। তিন, রামেসু বাজার ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে মারমাদের উচ্ছেদ করে তাদের জমিজমা দখল করা এবং এভাবে এলাকাটিকে একটি বাঙালি মুসলিম সেটলার অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত করা। চার, গুইমারা ব্রিগেডের “নিরাপত্তা ঝুঁকি” কমানো।

প্রতিবেদনে হামলার জন্য সেনা-সেটলারকে দায়ি করে এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য তুলে ধরা হয়েছে।  

প্রতিবেদনে রামসু বাজারে হামলা-অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িতদের নামও প্রকাশ করা হয়েছে। 

এছাড়া আইএসপিআরের বিবৃতি বিষয়ে পাল্টা জবাব ও হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন সংগঠন-ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

* বিস্তারিত প্রতিবেদনটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ইংরেজি ভার্সন এখানে।  



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More