নুনছড়িতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির ভাঙার ষড়যন্ত্র অব্যাহত

খাগড়াছড়ি॥ খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে আনুমানিক ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে মাইসছড়ি ইউনিয়নের নুনছড়ি দেবতা পুকুর এলাকায় সদ্য নির্মিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, আজ সোমবার সেনাবাহিনীর একটি দল এলাকার কয়েকজন মুরুব্বীকে সঙ্গে নিয়ে নুনছড়ি দেবতা পুকুরে গিয়ে গ্রামের পাহাড়ি যুবকদের মাধ্যমে মন্দিরটি ভাঙার চেষ্টা চালায়। তবে যুবকরা মন্দির ভাঙতে অস্বীকার করায় সেনাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর শুক্রবার মহালছড়ি জোনের সেনা কর্মকর্তারা এলাকাবাসীদের উক্ত মন্দির ভেঙে ফেলার প্রথম নির্দেশ দেয়। তবে এলাকাবাসী তাদের মন্দির ভাঙতে পারবেন না বলে আর্মিদের সাফ জানিয়ে দেন।
এরপর গত ২৮ অক্টোবর রবিবার এলাকার হেডম্যান ক্ষেত্র মোহন রোয়াজা, হেডম্যান পাড়ার কার্বারী তেজেন্দ্র রোয়াজা, গুইমারা ইউপির ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার কৈশব ত্রিপুরা, নুনছড়ি পুকুর পাড়ার কার্বারী কুঞ্জ মোহন ত্রিপুরা ও গ্রামের মুরুব্বী বিনাচান ত্রিপুরাকে স্থানীয় বিজিতলা ক্যাম্পে ডাকা হয়।
সেখানে উপস্থিত মহালছড়ি জোন কমান্ডার মোস্তাক আহমেদ তাদেরকে সোজাসুজি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোমাদের মন্দির অবশ্যই ভাঙতে হবে।’
এ কথা বলার পর তিনি তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ৪-৫ জন সেনা সদস্যের হাতের বন্দুক দেখিয়ে মন্দির না ভাঙতে চাইলে পরিণতি কী হতে পারে সে ব্যাপারে ইঙ্গিত করে তাদেরকে কড়া সুরে বলেন, ‘না ভাঙলে দেখে নাও এগুলো কী।’
তারপর তিনি তাদের হাতে জোর করে ১০ হাজার গুঁজে দেন এবং এ দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেন।
গতকালের ঘটনার পর আজ সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মন্দিরটি ভাঙার উদ্দেশ্যে ক্ষেত্র মোহন রোয়াজাসহ উক্ত পাঁচ মুরুব্বীকে সঙ্গে নিয়ে নুনছড়ি যায়।
তারা প্রথমে মন্দির কমিটির সভাপতি রতন ত্রিপুরার বাসায় যায়। অবশ্য এ সময় তিনি বাসায় উপস্থিত ছিলেন না। সেনারা বাড়িতে থাকা তার স্ত্রী ও গ্রামের মহিলা কার্বারী বৃহ ত্রিপুরাকে হুমকি দেয় এবং বলে, ‘আমরা তাকে বলেছি গতকাল ক্যাম্পে যাওয়ার জন্য, কিন্তু যায়নি। আর আজ বাসায় নাই।’
এরপর সেনারা গ্রাম থেকে ৭-৮ জন যুবককে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত মন্দিরে যায় এবং তাদেরকে মন্দির ভাঙার নির্দেশ দেয়। এ সময় মন্দিরের পুরোহিত ৭২ বছর বয়সী চিন্তা কুমার ত্রিপুরাও ছিলেন।
যুবকরা মন্দির ভাঙতে অস্বীকার করে আর্মিদের বলে, ‘আমরা মন্দির ভাঙতে পারবো না। আপনারা যা করার করতে পারেন।’
এরপর সেনারা আর তাদেরকে বেশী জোরাজুরি না করে সেখান থেকে ফিরে গিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুরপাড়া গ্রামে যান।
বিকাল সাড়ে ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেনারা সেখানে অবস্থান নিয়ে ভাত রান্নার আয়োজন করছে বলে জানা গেছে।
নুনছড়ি এলাকাবাসী নির্মিত মন্দিরটি ভেঙে না দেয়ার জন্য এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
তারা মনে করেন মন্দিরটি ভাঙা হবে একটি চরম গর্হিত ও অন্যায় কাজ। আর এ কাজ আর্মিরা নিজেরা কিংবা কোন পাহাড়িকে দিয়ে যেন না করেন এলাকাবাসী সেই অনুরোধ করেছেন।
নুনছড়ির জনৈক মুরুব্বী সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করে একটি মন্দির বানিয়েছি, আর আর্মিরা এখন সেটা ভেঙে দিতে চাইছে। তারা আমাদের কেন শান্তিতে ধর্ম পালন করতে দিচ্ছে না তা আমি বুঝতে পারি না।’
অন্য একজন মুরুব্বী বলেন আমরা যেখানেই মন্দির বা উপাসনালয় নির্মাণ করি না কেন তারা (আর্মিরা) এসে বলে এখানে আমাদের ক্যাম্প ছিল, এখানে আমাদের বাঙালিদের কবরস্থান ছিল, গ্রাম ছিল। তাই তোমাদের মন্দির ভাঙতে হবে।
তিনি বলেন আমরা যুগ যুগ ধরে এখানে বসবাস করছি, এ জমি আমাদের। এখানে আমরা জুম চাষ করেছি। এখানে আমাদের জুম ঘর ছিল। এগুলো আমাদের জুমের জমি। আর তারা জোর করে সেখানে ক্যাম্প করেছে।
তিনি আরো বলেন এখনো অনেক আর্মি ক্যাম্প ও সেটলারদের ঘরবাড়ি-গ্রাম রয়েছে যেখানে এক সময় পাহাড়িদের ভরপুর আবাস ছিল, মন্দির ছিল। জোর করে পাহাড়িদেরকে সে সব জায়গা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
‘আমাদের এ সব জমিও সরকারকে ফেরত দিতে হবে’ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
——————
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।