পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের রামগড় উপজেলা শাখার নতুন কমিটি গঠিত
রামগড় : বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর রামগড় উপজেলা শাখার ২১ সদস্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৯ অক্টোবর ২০১৮) দুপুর ১২টায় রামগড় উপজেলা সদর এলাকায় অনুষ্ঠিত উপজেলা শাখার ২য় কাউন্সিলে এই কমিটি গঠন করা হয়। এতে নরেশ ত্রিপুরা সভাপতি ও প্রবীর ত্রিপুরা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।
“পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বেদখল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হোন, সেনা কর্তৃক শিক্ষা-ধর্মীয়সহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উপর হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান” এই আহ্বানে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে পিসিপি রামগড় উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও প্রবীর ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর রামগড় ইউনিটের সমন্বয়ক অপু ত্রিপুরা, পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি অমল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)-এর রামগড় উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি বিষু ত্রিপুরা প্রমূখ। এছাড়াও পিসিপি জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক দিপংকর ত্রিপুরাসহ জেলা মানিকছড়ি-লক্ষ্মীছড়ি ও মাটিরাঙ্গার পিসিপি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সিল অধিবেশন শুরুতে নিপীড়িত জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে আত্মবলিদানকারী শহীদ রূপক-মিঠুন-তপন-এলটন-পলাশ চাকমা, মংশে মারমা ও কাথাং ত্রিপুরাসহ সকল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
সভায় বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছরের পরও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি। পাহাড়ি জনগণ আজ সরকার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে জিম্মি। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সামাজিক-রাজনৈতিক-শিক্ষা-ধর্মীয় সংস্কৃতি চর্চা করার স্বাধীনতা তারা পায়নি। সেনাবাহিনী অপারেশন উত্তরণের নামে পাহাড়ি জনগণের উপর শাসন-শোষণ, খুন-গুমসহ নানা নিপীড়ন চালাচ্ছে।
তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আশ্বাস বাণী শোনালেও বাস্তবে তার উদ্দেশ্য ভিন্ন। অসম্পূর্ণ চুক্তির ২১ বছর পূর্ণ হতে চললেও বাস্তবায়নের রূপ শুধু কথায় কথায় থেকে গেছে। মূলত চুক্তিকে ঝুলিয়ে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি জিইয়ে রাখাই হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্যে।
তারা বলেন, পাহাড়ি জনগণের শিক্ষা-ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান বেদখল করে নতুন করে সেনা-বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনে পাঁয়তারা চলছে। সম্প্রতি রামগড় উপজেলা নাঙেল আদামে নামক গ্রামে এক বিধবা নারীর বাড়ি ঘর ভাংচুর-লুটপাট, এলাকাবাসীর উদ্যোগে নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ভেঙ্গে দিয়েছে বিজিবি সদস্যরা। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের নব্য পাক সেনা হায়েনারা গুইমারা কুকিছড়ায় বুদ্ধ মূর্তি ও বিহার ভাংচুর চালিয়ে ক্যাম্প স্থাপনের চেষ্টা চালিয়েছিল। ধর্মীয় গুরু ও জনগণের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেনা-সরকার তা আরো নতুন করে নির্মাণে করতে দিতে বাধ্য হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেনারা নুনছড়ির দেবতা পুকুর পাড়ায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে, ইতিমধ্যে মন্দিরটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন মহালছড়ি জোন কমা-ার। পাহাড়িদের উপর নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাগড়াছড়ি গিরীফুল, মাইসছড়ি, ন্যান্যাচরসহ বিভিন্ন স্থানে নতুন করে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
বক্তারা বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। পাহাড়ি দালালদের দিয়ে প্রতিনিয়ত গুম-খুন-হত্যা-অপহরণ-চাঁদাবজি ও লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ আদায়সহ নানান অপকর্ম চালিয়ে কতিপয় সেনা-প্রশাসনের স্বার্থ ও সরকারের লক্ষ্য হাসিল করছে। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী। সকল বাধা বিপত্তি ও সেনা-প্রশাসনের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে আন্দোলন ছাত্র সমাজকে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে পূর্ণস্বায়ত্তশানের আন্দোলনকে বেগবান করতে হবে।
কাউন্সিল অধিবেশন থেকে বক্তারা, পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, নতুন স্থাপিত সেনাক্যাম্প সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার, গুইমারা কুকিছড়ায় বৌদ্ধ বিহার ও বুদ্ধ মূর্তি ভাংচুরের সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, পাহাড়িদের ভূমি বেদখল-নারী নির্যাতন বন্ধসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সেনা নিয়ন্ত্রণের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবি জানান।
বক্তব্য প্রদান শেষে কাউন্সিল অধিবেশনে উপস্থিত সকলের সর্বসম্মতিক্রমে নরেশ ত্রিপুরাকে সভাপতি, প্রবীর ত্রিপুরাকে সাধারণ সম্পাদক ও পরান ত্রিপুরাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ১৭ জন কার্যকারী সদস্যসহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন কমিটির সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি অমল ত্রিপুরা।
——————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।