বনবিভাগের ধুরুং বিটের বাগান সাবাড় করছে সেটলার-মুখোশরা, বনবিভাগ অসহায়
বিশেষ প্রতিবেদক, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নে বনবিভাগের ধুরুং বিট-এর অবস্থান। এলাকাটি খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত। উক্ত ধুরুং বিটের আওতায় ৫০০ একর ভূমিতে বনবিভাগ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে একটি বন-বাগান গড়ে তুলেছে। বর্তমানে গাছগুলি বিক্রি বা আহরণের উপযুক্ত হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেটলার বাঙালি আর সেনাবাহিনী মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তরা মিলে জোরপূর্বভাবে বনবিভাগের এই বাগানের গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। আর এ কাজে মূল হোতা হিসেবে লৌহা কামাল নামে এক সেটলার বাঙালির নাম উঠে আসছে, যিনি মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিকছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী স্থানে সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে পূনর্বাসিত সেটলার বাঙালিরা দীর্ঘদিন থেকে বনবিভাগের ওই বাগান থেকে বিভিন্ন সময় গাছ চুরি করে আসছে। কিন্তু বনবিভাগ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বর্তমানে প্রায় মাসখানেক ধরে ওই বাগানের ওপর রীতিমত ডাকাতি চলছে। সেটলার ও নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তরা মিলে প্রকাশ্য গাছ কেটে বাগান সাবাড় করে দিচ্ছে। বর্তমানে সেখানে নব্যমুখোশ বাহিনীর ১০/১২ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অবস্থান করে বাগানে গাছ ডাকাতির কাজে সেটলারদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, সেনাবাহিনী ও আওয়ামী লীগ নেতারা এই মুখোশ বাহিনীকে তাদের স্বার্থের কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার ও মোতায়েন করে থাকে। মুখোশ বাহিনীকে মোতায়েন করে বনবিভাগের বাগান সাবাড় করাও তাদের একটি স্বার্থের কাজ।
বনবিভাগ ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে ওই বাগানে প্রতিদিন ৫০/৬০ জনের মতো শ্রমিক গাছ কাটে আর মুখোশ বাহিনীর দুর্বৃত্তরা সশস্ত্রভাবে তাদের নিরাপত্তা দেয়। মুখোশ দুর্বৃত্তরা মাঝে মাঝে ফায়ার করে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। ফলে তাদের ভয়ে সেখানে শ্রমিকরা বাদে অন্য কেউ যেতে চায় না। প্রতিদিন শ্রমিকদের গাছ কাটার কাজ শুরুর সাথে সাথে সশস্ত্র মুখোশ দুর্বৃত্তরা সেখানে অবস্থান নেয় এবং দিনের কাজ শেষ না হাওয়া অবধি অবস্থান করে। প্রতিদিনের কাটা গাছ প্রতিদিন চালান করে দেয়। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপই নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, এই পুরো কাজটি পরিচালনা করছে লৌহা কামাল। তার বাড়ি মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছোলা ইউনিয়নের সাপমারায়। আর তাকে সহযোগিতা করছে ফটিকছড়ির গাছ ব্যবসায়ী বাবুল। তারা উভয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্যাডার হিসাবে এলাকায় পরিচিত। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মুখোশ দুর্বত্তদের ভাড়ায় নিয়োগ দিয়ে তারা এই বাগান ধ্বংসের কাজটি করছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের এক কর্মকর্তা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, “আমাদের জনবল অভাব, সে কারণে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না। অপরাধীরা সশস্ত্রভাবে এসে বাগানের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে আমরা সেখানে যেতে পারি না।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই বিষয়ে আমরা সেনাবাহিনী ও প্রশাসনকে অবগত করেছি। তাদের সহযোগীতা পেলে অপরাধীদের আটক কিংবা প্রতিরোধ করতে পারবো।”
এদিকে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বনবিভাগের এই বন-বাগান রক্ষার জন্য সরকার ও প্রশাসনকে জরুরী ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার পরিবেশবাদী ও সচেতন মহল। অন্যথায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের বিনিময়ে অর্জিত কোটি কোটি টাকায় এই দুর্বৃত্তরা সমাজে অন্যায়-অপকর্ম আরো বাড়িয়ে তুলবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন