সিএইচটিনিউজ.কম ডেস্ক:
মাথায় হলুদ রঙের ছোট্ট একটি স্কুল। স্কুল বললে অবশ্য পুরোটা বোঝা যাবে না। বলতে হবে- অনলাইন স্কুল। বান্দরবানের কানাপাড়ার আশপাশের পাহাড়ের শিশুরা এখানে ইন্টারনেটের সহায়তায় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করছে।
ঢাকা থেকে একজন শিক্ষক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনলাইন স্কুলে শিশুদের ক্লাস নিচ্ছেন। গ্রামীণফোনের উদ্যোগে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য এই অনলাইন স্কুল। ১৬ মার্চ এই স্কুলের উদ্বোধন করেছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। এই স্কুলে শিক্ষা দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে জাগো ফাউন্ডেশন।
বান্দরবানের এই অনলাইন স্কুলে এখন মোট শিক্ষার্থী ৪০ জন। বেশির ভাগই এখানে পড়তে এসেছে আশপাশের পাহাড়গুলো থেকে। অধিকাংশের বয়স চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে। এই শিশুরা এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। সাধারণত এই বয়সের পাহাড়ি শিশুরা আরেকটু বড় হয়েই কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু এই অনলাইন স্কুলের কল্যাণে তারা এখন পড়াশোনা শিখছে।
স্কুলের শ্রেণীকক্ষে বসার জন্য কোনো বেঞ্চ নেই। শিশুরা বসে মেঝেতে, সুশৃঙ্খলভাবে। তাদের সামনে বড় আকারের কম্পিউটারের মনিটর রাখা। সেখানেই মনিটরে দেখানো চিত্র, ভিডিও আর কার্টুনের মাধ্যমে চলে পাঠদান। শ্রেণীকক্ষে রাখা এই মনিটরের এক কোনে দেখা যায় অনলাইন শিক্ষককে। তিনি ঢাকায় বসে এই শিশুদের অনলাইন ক্লাস নেন। শ্রেণীকক্ষে সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পড়ানোর জন্যও একজন স্থানীয় শিক্ষক আছেন। তাঁর নাম সুখানন্দা। অনলাইনে শিক্ষকেরা শিশুদের পড়ানোর সময় তা বুঝতে সহায়তা করেন সুখানন্দা।
সুখানন্দা জানান, বিনা বেতনের এই স্কুলে শিশুরা পাচ্ছে সপ্তাহে একবার পুষ্টিকর খাবার। এ ছাড়া তাদের পরিষ্কার পরিছন্নতার বিষয়গুলোও খেয়াল রাখা হচ্ছে। এখানকার অনেক বাবা-মা তাদের শিশুদের স্কুলে দিতে ইচ্ছুক।
এদিকে, অনলাইন স্কুলে শিশুরা পড়াশোনা করছে জেনে অভিভাবকেরাও খুশি।
অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বান্দরবানের কানাপাড়ার আশপাশে স্কুল নেই। এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আধুনিক শিক্ষা দিতে এখানে অনলাইন স্কুল তৈরির উদ্যোগ নেয় গ্রামীণফোন। শিশুরা প্লে গ্রুপ সমমানের পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে এখানে। প্রাথমিক পড়াশোনার ধাপ অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে শেষ করতে পারবে শিশুরা। এখানে প্রচলিত পড়াশোনার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
অনলাইনে নতুন পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে জাগো ফাউন্ডেশনের ভাষ্য, অনলাইন স্কুলে অন্যান্য স্কুলের মতো শিক্ষা দেওয়া হয়। তবে এখানে ব্যবহার করা হয় ভিজ্যুয়াল প্রযুক্তি। কোনো কিছু দেখানো হলে শিশুরা তা ভালো করে মনে রাখে এবং পড়াশোনায় বেশি আগ্রহী হয়। যে বিষয় শিক্ষকেরা পড়ান মনিটরে সেই ছবি দেখানো হয়। আর শিশুরা তা দেখে শিখতে পারে।
অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে শিক্ষাপদ্ধতি ও প্রতি জেলায় এ ধরনের অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠার আশা প্রকাশ করেন জাগোর প্রতিষ্ঠাতা করভি রাকসান্দ।
গ্রামীণফোনের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান মার্কাস অ্যাডাক্টসন জানিয়েছেন, বান্দরবানের অনলাইন স্কুল এ অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আধুনিক শিক্ষা দেবে, যা ভবিষ্যতে তাদের বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। সবার জন্য ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে গ্রামীণফোন যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে পথে এ ধরনের সামাজিক উদ্যোগ তা এগিয়ে নেবে বলেই মনে করেন তিনি।
সৌজন্যে: প্রথম আলো