লামায় মথি ত্রিপুরাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকায় তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

পার্বত্য চট্টগ্রামে ধরপাকড়, ভূমি বেদখল ও নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হাওয়ার আহ্বান

0
42

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ০৩ মার্চ ২০২৩

লামায় ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্য মথি ত্রিপুরাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে ঢাকায় তিন সংগঠনের বিক্ষোভ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক অব্যাহত ধরপাকড়, পাহাড়িদের ভূমি বেদখল ও নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের বিরদ্ধে সোচ্চার হাওয়ার আহবান জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)। আজ শুক্রবার (৩ মার্চ ২০২৩) বিকাল ৩টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তিন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই আহবান জানান।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় ধরপাকড়, অব্যাহত ভূমি বেদখল ও নারী ধর্ষণ বন্ধ কর” এই স্লোগানে লামা সরই ভূমি রক্ষা কমিটির সদস্য মথি ত্রিপুরাকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতারের প্রতিবাদ ও অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে উক্ত সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিকো ত্রিপুরা সভাপতিত্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধ্জন ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অংকন চাকমা ও ঢাকা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রনেল চাকমা এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য রূপসী চাকমা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ফয়জুল হাকিম।

সমাবেশে মসংহতি জানিয়ে ফয়জুল হাকিম বলেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পুলিশ মথি ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করেছে।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিজ বংশপরম্পরায় জমি, ভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে হচ্ছে। সেখানে ৮০’র দশকে সমতল থেকে বাঙালিদের নিয়ে গিয়ে পাহাড়ি বাঙালি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে শাসকশ্রেণী তাদের স্বার্থ আদায় করছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘১১ দফা’ নির্দেশনা বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে সেখানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করেছে। ফলে পাহাড়ি জনগণ সভা-সমাবেশ করতে পারছে না, সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদেরকে হত্যা, গুম, অপহরণ ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে ওপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘১১ দফা’ নির্দেশনা বাতিল, পাহাড় থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার, মাইকেল চাকমাসহ গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারদের নিকট ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা।

সংহতি জানিয়ে রংধ্বজন ত্রিপুরা বলেন, পুলিশ কর্তৃক মথি ত্রিপুরাকে আটকের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে সেখানকার প্রশাসন ভূমিদস্যুদের পক্ষালম্বন করছে এবং প্রশাসন লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজকে মদদ দিয়ে পাহাড়িদের ৪০০ একর ভূমি বেদখল করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই কারণে ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজজের দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার না করে তাদের নির্দেশে এক নাটকীয় ঘটনা তৈরি করে মথি ত্রিপুরাকে আটক করেছে।

তিনি লামা সরইয়ে রেংয়েন ম্রো পাড়া, লাংকম ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়াবাসীদের কিছু হলে এ সম্পূর্ণ দায় স্থানীয় প্রশাসনকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন এবং মথি ত্রিপুরাকে নিঃশর্ত মুক্তিসহ অবিলম্বে তিন পাড়াবাসীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সমাবেশে জিকো ত্রিপুরা বলেন, শাসকগোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামে একদিকে অন্যায় ধরাপাকড় চলাচ্ছে, অন্যদিকে ভূমিদস্যুদের পাহারা দিয়ে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা গঠিত নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানী পাহাড়িদের ভূমি কেড়ে নেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদে পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

পিসিপি নেতা অংকন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক অন্যায় ধরপাকড় প্রতিনিয়ত চলছে। মিথ্যা মামলা দায়ের করে জনসাধারণকে হয়রানি ও শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এ ধরপাকড়, নির্যাতন, দমন-পীড়নের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি কারাগারে পরিণত হয়েছে। সেকারণে আজ পাহাড়ি জনগণ ভয়, আতঙ্ক,  অনিরাপদ ও অনিশ্চিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রূপসী চাকমা পাহাড়ে নারী ধর্ষণের চিত্র ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মন্তব্য করে বলেন, পানছড়ি, লামা ফাসিয়াখাঁলী পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে নারীদের ওপর কি রকম ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। পানছড়িতে জনি বড়ুয়া গংরা বাগান থেকে তুলে নিয়ে দুই দিন ধরে গণধর্ষণ, নির্যাতন করে ছাত্রীর মাথায় চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা মধ্যযুগীয় নিপীড়নের সাথে তুলনা করা যায়। পাহাড়ে এই বর্বরতার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে এখনো গ্রেফতার করা হয়নি।

সমাবেশ থেকে বক্তারা, পুলিশ কর্তৃক অন্যায়ভাবে মথি ত্রিপুরাকে আটকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু, লামা ও পানছড়িতে ধর্ষণের ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারে প্রতি আহ্বান জানান।

সমাবেশের আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি পল্টনের জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

Print Friendly, PDF & Email

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.