বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন

লামায় ম্রোদের ‘জিম্মি’ করে ‘পাড়াবন’ উজাড়ের অভিযোগ

0
লেমুপালং মৌজায় পুরাতন দেওয়ান পাড়া। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

উসিথোয়াই মারমা, বান্দরবান

বান্দরবানের লামা উপজেলায় ম্রো জনগোষ্ঠীর সংরক্ষণে থাকা একটি প্রাকৃতিক বন থেকে অবৈধভাবে দুই দশক ধরে গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ‘ব্যক্তি মালিকাধীন’ বাগানের কথা বলে গাছ কাটা হলেও গোষ্ঠীবদ্ধ পাড়াবাসীর অধীনে থাকা এমন বন কারোর বিক্রির সুযোগ নেই।

উপজেলার সরই ইউনিয়নের লেমুপালং মৌজায় ১৩টি ম্রো পাড়াবাসীর অভিযোগ, মৌজার পূর্বে কালা পাহাড়, পশ্চিমে পালং খাল, উত্তরে উপর শীলঝিরি ও দক্ষিণে বমু খাল সীমানা চৌহদ্দির কাটা গাছ টানা হচ্ছে হাতি দিয়ে। সেই হাতির বিষ্টায় দূষিত হয়ে পড়েছে পাহাড়িদের পানীর জলের উৎস ঝিরি। দূষিত পানি পান করে এরই মধ্যে চার শিক্ষার্থী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।         

তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও কাঠ ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ‘জোত-পারমিটের’ মাধ্যমে মৌজাপ্রধান হেডম্যানের কাছ থেকে ওই বাগান আজীবনের জন্য কেনা হয়েছে এবং বৈধভাবেই গাছ কাটা হচ্ছে এবং হাতি দিয়ে কাঠ টানা হচ্ছে।

লেমুপালং মৌজায় পুরাতন দেওয়ান পাড়া বনের গাছ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। সেই গাছ নিয়ে যাওয়ার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।  ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এ বিষয়ে এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন এবং কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। 

‘হেডম্যান গাছ বিক্রি করতে পারেন না’

লেমুপালং মৌজা বেশ দুর্গম এলাকায়। জেলা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে সুয়ালক-লামা সড়কের পাশে সরই ইউনিয়ন। সরইয়ের কেয়াজু বাজার থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্বে এই লেমুপালং মৌজার এলাকা। এটি সরই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে।

পাড়াবাসীর অভিযোগ, দুই দশকের বেশি সময় ধরে এখান থেকে গাছ কেটে নিচ্ছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার মোরশেদ আলম চৌধুরী। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের কমিটির সদস্য। তার বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম।

কথিত চুক্তির কথা বলে মোরশেদ আলমের লোকজন এই গাছ কাটছে বলে অভিযোগ করেছেন ম্রোরা। একসময় লেমুপালং মৌজার হেডম্যান ছিলেন চন্টু ম্রো। তিনি নিরক্ষর ছিলেন। বলা হচ্ছে, তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে আজীবনের জন্য এই চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়েছে। 

চন্টু ম্রোর ছেলে কাইনওয়াই ম্রো এখন লেমুপালং মৌজার হেডম্যান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বনের গাছ না কাটার জন্য মোরশেদের লোকজনকে নিষেধ করা হলেও তারা আমার বাবার সঙ্গে একটা চুক্তির কথা বলে। কিন্তু কী চুক্তি, কত বছরের চুক্তি আমি বা আমরা কিছুই জানি না। অনেকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু আমলে নেয় না।“

হেডম্যান সংগঠনের নেতারা বলছেন, পাড়াবন গোষ্ঠীর সকলের। প্রথাগত বিধি-বিধানে, কোনো ব্যক্তি সেই বনের গাছ বিক্রি করতে পারেন না। হেডম্যান মৌজার বন সংরক্ষণ করবেন। মৌজার বন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণই তার মূল দায়িত্ব। কেউ এ ধরনের কিছু করলেও তার কোনো বৈধতা নেই।

তবে মৌজা বা পাড়াবাসীর কারও ঘরের প্রয়োজনে বনের গাছ কাটতে হলে হেডম্যানের অনুমতির প্রয়োজন হয়।

সম্প্রতি লেমুপালং মৌজায় গিয়ে দেখা যায়, চাইল্য ঝিরির পাশে তিনটি ম্রো পাড়া। তার মধ্যে পুরাতন দেওয়ান পাড়ায় ২৪ পরিবার, নতুন দেওয়ান পাড়ায় ১০ পরিবার এবং বাক্কা পাড়াতে রয়েছে আরও ১০টি পরিবার।

দুই বছর আগে তিন পাড়ার মাঝখানে শিশুদের জন্য একটি বেসরকারি স্কুল গড়ে তুলেছেন পাড়াবাসী। সেই স্কুলের মাঠে দেখা হয় দুই পাড়ার ১০-১২ ম্রোর সঙ্গে। কথা হলে জানান, তারা সবাই জুমচাষি।

ঝিরির উপর তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

স্কুলের সামনে এক পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে কাটা গাছ। তিন-চারটা স্তূপে আড়াইশর বেশি গাছ। গাছগুলো লম্বায় ৬ ফুট, কোনটা আবার ৮ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত। গাছের মধ্যে রয়েছে কড়ই, জলপাই, জারুল, চাপালিশ, গর্জন, গোদা, গামারি ও সেগুন।

পাড়াবাসী জানান, সেখান থেকে ট্রাকে ভরে পাশে লুলাইন বাজার হয়ে সরই রাস্তা দিয়ে লোহাগাড়া নিয়ে যাওয়া হয় এসব কাঠ। গাড়ি চলাচলের জন্য দুটি ঝিরিতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ঝিরির পাশ দিয়ে কেটে বানানো হয়েছে গাড়ি চলাচলের রাস্তাও।

তাদের আরও অভিযোগ, এলাকায় কারও কারও ব্যক্তিগত গাছের বাগান আছে। কিন্তু বাইরের ব্যবসায়ীর কাছে কেউ গাছ বিক্রি করতে পারেন না। বাধ্য হয়েই মোরশেদ কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে হবে। একে তো দাম অর্ধেক; তারপর আবার টাকা দেওয়া হয় ধাপে ধাপে।

বিক্রি করা বাগান থেকে মা গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার পর গাছের গোড়া থেকে নতুন গাছ গজিয়ে উঠে। সেই গাছ বড় হওয়া পর্যন্ত রাখা হয়। এরপর বাগানের মালিককে কোনো টাকা না দিয়ে আবার কেটে নিয়ে যায় মোরশেদের লোকজন। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। কাজ করতে আসা কয়েকজন শ্রমিক ও ট্রাক চালকের হাতে সবসময় অস্ত্রও থাকে বলে অভিযোগ করেন পাড়াবাসী।

পুরাতন দেওয়ান পাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) চওরেন ম্রো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লেমুপালং মৌজার প্রাকৃতিক বন থেকে ২০-২৫ বছর ধরে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এই মোরশেদ কোম্পানি। প্রাকৃতিক বনের গাছগুলো টানার জন্য এ বছর একটা হাতিও নিয়ে আসা হয়েছে। এর আগে কোনো কোনো বছর ৩-৪টা পর্যন্ত হাতি নিয়ে আসা হয়। ছেড়ে দেওয়া হাতি অনেক সময় পাড়াবাসীর খামার ও টংঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না।

“সামাজিকভাবে ব্যবহারে জন্য পাড়ায় ৩০ একরের মত একটা পাড়াবন রয়েছে। সেখান থেকেও গাছ কেটে নিয়ে যায়। পরে চার হাজার টাকায় পাঁচ বছরের জন্য পাড়াবনের গাছ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। এরপর কোনো উপায় না পেয়ে আবার ৩০ হাজার টাকায় সব গাছ বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। পাড়াবনে এখন আর বড় কোনো গাছ নাই। শুধু ছোট ছোট লতাগুল্ম ও বাঁশঝাড় রয়েছে।”

জঙ্গলের ভেতর একটা ঝিরির আগায় গাছ টানার কাজের ব্যবহার করা হাতি । ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

পুরাতন দেওয়ান পাড়ার আরেক বাসিন্দা য়ংরুং ম্রো অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ঘর তৈরি করার জন্য বন থেকে কিছু গাছ কেটে নিয়ে আসা হয়। পরে কোম্পানির কাছে খবর গেলে আর কোনো গাছ কাটতে দেয় না। কোম্পানির লোকজনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে গাছ কাটতে হয়।

“নিজের এলাকার বন থেকে ঘরের প্রয়োজনে গাছ কাটার জন্য সবাইকে মোরশেদ কোম্পানির লোকজনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কাটতে হয়। শুধু গাছ নয়, ঝিরির পাথরও তুলে নিতে চেয়েছিল তারা। এলাকাবাসীর বাধায় পাথর তুলে নিতে পারেনি”, বলেন য়ংরুং ম্রো।

প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাস হলেই ৫০-৬০ জনের বহিরাগত শ্রমিক গাছ কাটার জন্য চলে আসে। তারা মে-জুন মাসের বর্ষার আগ পর্যন্ত একটানা গাছ কাটে। শ্রমিকদের রাতে থাকার জন্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছয়-সাতটা টংঘর রয়েছে। তবে বর্ষকালে গাছ কাটা বন্ধ থাকে।

প্রতিটা মৌসুমে হাজার হাজার ঘনফুট প্রাকৃতিক বনের গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন মেনপ্রে ম্রো।

নতুন দেওয়ান পাড়ার এই বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে, ২০১৫ সালে একবার বাধা দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরই হেডম্যানের মুহুরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অপহরণ, হত্যাচেষ্টা ও মাদকের তিনটি মামলা দেওয়া হয়। এরপরে আর কেউ বাধা দেওয়ার সাহস করেনি। আজ পর্যন্ত এভাবে চলছে।

হাতির বিষ্টায় দূষিত পানির উ

পুরাতন দেওয়ান পাড়া, নতুন দেওয়ান পাড়া এবং বাক্কা পাড়ার মাঝখানে যে স্কুলটি গড়ে তোলা হয়েছে তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে একটি ঝিরি। হাতির বিষ্টায় সেটির একটি বড় অংশই দূষিত হয়ে গেছে। পাহাড়িদের খাবার পানির উৎস এই ঝিরি। দূষিত পানির প্রভাবে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব এড়াতে এরই মধ্যে ঝিরির পানি পান বারণ করে দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

তারপরও কোনো উপায় না পেয়ে দুই সপ্তাহ আগে গরমের মধ্যে চার শিক্ষার্থী সেই ঝিরির পানি পান করতে বাধ্য হয়। পরে তারা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় বলে জানান স্কুল শিক্ষক থংয়া ম্রো।

থংয়া ম্রো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অন্য পাড়ায় সরকারি স্কুল রয়েছে। কিন্তু পাহাড় বেয়ে এতদূর গিয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব না হওয়ায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। স্কুলে মোট ৪০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

“স্কুলের সামনে বেশ কয়েকটি বড় বড় আম ও কাঁঠাল গাছ রয়েছে। আগে আরও ঘন ছিল। সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে। বাকি গাছগুলোও কেটে নিয়ে যেতে চাইছিল। এলাকাবাসী বাধা দিয়ে রেখেছে।”

জঙ্গলাকীর্ণ চাইল্যা ঝিরির সামনের পথ ধরে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার হাঁটার পর দেখা যায়, প্লাষ্টিক দিয়ে ঘেরা এক টংঘর। ভেতরে ৮-১০ জন থাকার মত জায়গা। টংঘরে দেখা হয় রেজাউল করিমের সঙ্গে। তিনি নিজেকে হাতির মাহুতের সহকারী হিসেবে পরিচয় দেন।

রেজাউল করিম জানান, হাতি দেখভাল করার জন্য মাসিক চুক্তিতে তাকে কয়েকদিন আগে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া এলাকায়। হাতির মাহুত ঈদে বাড়িতে গেছেন। আরও কয়েক দিন পর ফিরবেন। হাতিকে দেখাশোনার জন্য তিনি আগেভাগে এসেছেন।

ঝিরির আরেকটু সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেঁধে রাখা হয়েছে গাছ টানার হাতিটিকে। হাতির নাম ইউসুফ বাহাদুর। হাতির জন্ম, বড় হওয়া ও প্রশিক্ষণ বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতি এলাকায়। এর আসল মালিক সিলেট জেলার বাসিন্দা মোমিন মিয়া। তার কাছ থেকে সুরুজ নামের এক ব্যক্তি ভাড়ায় নিয়ে এসেছেন এই হাতি।

মাহুতের সহকারী জানান, গাছ টানার জন্য হাতির দৈনিক ভাড়া সাড়ে চার হাজার টাকা। ঝিরির আগা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে স্কুলের মাঠ পর্যন্ত দৈনিক চারবার করে গাছ টানতে পারে। একবারে ২০ ফুট পর্যন্ত গাছ বহন করতে পারে এই হাতি।

পুরাতন দেওয়ান পাড়ার বাসিন্দা ও সরই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মেনওয়াই ম্রো বলেন, গাছ কাটায় বাধা দেওয়ার পর তিনটি মামলা হয়েছিল। পাঁচ বছর মামলা চালানোর পর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২০২০ সালে মামলা খারিজ হয়ে যায়।

“এলাকার অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর ও জুমচাষি। কোথাও অভিযোগ করলে হয়রানি ও মামলার ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। কোথাও অভিযোগ দিয়েছি শুনলে আমাদের উপর চাপ আসবে। কোথাও কোনও খবরে কাগজ উঠলে আরও ক্ষেপে যাবেন তিনি (মোরশেদ)।

‘তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা’

প্রাকৃতিক বনের গাছ কাটা ও পাড়াবাসীদের হয়রানির অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মোরশেদ আলম চৌধুরীর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

তার ব্যবসার কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মো. রফিক সাংবাদিকদের বলেন, মোরশেদ আলম চৌধুরী হজ করার জন্য সৌদি আরবে রয়েছেন। তিনি তার অধীনে ১২ বছর ধরে চাকরি করছেন। গাছ কাটার শ্রমিকদের পরিচালনা করছেন।

বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে ‘জোত-পারমিটের’ মাধ্যমে হাতি দিয়ে কাটা গাছ টানা হচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “আগের মৌজার হেডম্যান আমাদের মালিকের কাছে আজীবনের জন্য গাছ বিক্রি করেছেন।”

মোরশেদ আলম চৌধুরীর ভাই, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ভাই সেখান থেকে গাছ কাটেন আমি জানি। তিনি বৈধভাবে কাঠের ব্যবসা করেন।”

তার ভাইয়ের গাছের ব্যবসা নিয়ে কিছু মানুষ ‘মিথ্যা তথ্য’ ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খোরশেদ আলম। 

তবে এভাবে পাড়াবন বা গাছ বিক্রির কোনো বিধি-বিধান নেই বলে জানান বান্দরবান হেডম্যান-কারবারি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ও বেতছড়া মৌজার হেডম্যান হ্লাথোয়াইহ্রী মারমা।

তিনি বলেন, “প্রচলিত বিধি অনুযায়ী, হেডম্যান মৌজার বনের সম্পদ ও ভূমি সংরক্ষণ করেন। কোনো হেডম্যান চাইলে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে মৌজার বন বিক্রি করে দিতে পারেন না। প্রথাগত বিধিতে এটা কোথাও নেই। কেউ যদি না জেনে, বা জেনেও করে থাকেন এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এটার কোনো বৈধতা পাবে না।”

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরিফুল হক বেলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার জানা মতে, লেমুপালং মৌজায় বন বিভাগের কোনো বন নেই। তারপরও মঙ্গলবার তদন্তের জন্য সেখানে বন বিভাগের একটি দল পাঠানো হয়েছে। তারা ফিরে এসে একটা প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আমরা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে দেখছি।”

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তফা জাবেদ কায়সার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাছ কাটার বিষয়টি সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। ডলুঝিরি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বন বিভাগ। রেঞ্জ কর্মকর্তাকে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ অন্যায়ভাবে সেরকম কিছু করে থাকলে বন বিভাগও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে।

ইউএনও আরও বলেন, “হাতি ব্যবহারেও একটা লাইসেন্স থাকা লাগে। গাছ টানার কাজে হাতিটাকে কোথায় থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, কে কীভাবে নিয়ে এসেছে তা তদন্তের সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।“

এদিকে গাছ কাটার শ্রমিকদের হাতে অস্ত্র থাকার বিষয়টি নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি বলে জানান লামা থানার ওসি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, “অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More