বান্দরবান প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
লামা উপজেলায় ম্রো সম্প্রদায়ের বেদখলকৃতি জায়গা প্রশাসনের বুঝিয়ে দেয়ার পরও ভোগদখলে যেতে দিচ্ছে না রূপসী পাড়া এলাকার চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। গত দু’দিনে ২০ ম্রো পরিবারকে এলাকা থেকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া ভূমিদস্যুরা নিজেদের খামারবাড়িতে আগুন দিয়ে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজনকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে বলেও নাইক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান চুমপং ম্রো অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এলাকায় পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লামা প্রেস ক্লাবে গতকাল ২৭ নভেম্বর বিকালে উপজেলার নাইক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান চুমপং ম্রো সাংবাদিকদের অভিযোগ করে জানান, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে নাইক্ষ্যং মৌজার গহীন পাহাড়ের ম্রো সম্প্রদায়ের ২১৯টি পরিবারের লোক বংশানুক্রমে বসবাস করে আসছে। তারা পাহাড়ি জামিতে জুমচাষসহ বিভিন্ন ফলদ, বনজ বাগান সৃজন করে ভোগদখলে আছে। সম্প্রতি ২১৯ পরিবার ম্রো সম্প্রদায়ের ভোগদখলীয় জায়গা রুপসীপাড়া ইউনিয়নের জাহিদুল মাষ্টার, আবদুর রশিদ শেখ ও রশিদ পিসির নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ ভূমিদস্যুচক্র জবরদখল করে ম্রোদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে আসছে। জবরদখলে বাধা দিলে ভূমিদস্যুরা তাদের গৃহপালিত গরু-ছাগল দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এবং বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এসব ঘটনায় সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ নভেম্বর ভূমিদস্যু জাহিদুল মাষ্টার থেকে ভবিষ্যতে কারও জমি দখল করবে না মর্মে মুচলেকা নিয়ে ম্রো সম্প্রদায়ের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি ম্রোদের বুঝিয়ে দেয়া হয়।
ওদিকে বেদখল হয়ে যাওয়া জমি বুঝে পেয়ে পরদিন অর্থাত ২৬ নভেম্বর নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে জাহিদুল মাষ্টার বহিরাগত বিপুলসংখ্যক লোকজন জড়ো করে হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০টি ম্রো পরিবারকে এলাক থেকে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় জাহিদুল মাষ্টার গং নিজের দুটি খামার ঘরে আগুন দিয়ে ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজনকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে বলেও চুমপং হেডম্যান অভিযোগ করে জানান। এ ঘটনা পুরো উপজেলায় আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রশাসন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে পাহাড়ি বাঙালিদের মধ্যে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল। এ বিষয়ে লামা থানার এসআই মো. মঞ্জুর আলম জানান, ভূমিদস্যু জাহিদুল মাষ্টার মাত্র ৪ একর ৮০ শতক জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও জোরপূর্বক প্রায় ৫০০একর জমি দখলে নিয়েছিল। জাহিদুল মাষ্টার ভবিষ্যতে কারও জমি দখল করবে না মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়েছে। তার জবরদখলকৃত বিপুল পরিমাণ জমি ছেড়ে দেয়ার করণে শেষ চেষ্টা হিসেবে নিজের দুটি খামার ঘরে আগুন লাগানোর নাটক সাজিয়ে সহজ-সরল ম্রোদের ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছে।
সূত্র : দৈনিক আমার দেশ, ২৮ নভেম্বর ২০১০