আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে চবিতে পিসিপি’র শ্রদ্ধা নিবেদন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াইয়ে আপোষহীন সংগ্রামের ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
আজ মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরোপয়েন্ট থেকে মাতৃভাষা শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিতের দাবিসহ বিভিন্ন সংবলিত প্ল্যাকার্ড ও স্লোগান মাধ্যমে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি কাটা পাহাড় হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।

শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পিসিপি চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সোহেল চাকমা ও সহ-সভাপতি থুইলাপ্রু মারমা প্রমূখ।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে চবি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীতে এক আলোচনা সভা করা হয়। আলোচনা সভায় পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন চাকমা বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নিউটন চাকমা এবং মহানগর শাখার সহ-সভাপতি থুইলাপ্রু মারমাসহ অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক।
আলোচনা সভা শুরুতে ভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আত্মউৎসর্গকারী সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় পিসিপি চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাংলা ছাড়াও ৪৫টির অধিক জাতিসত্তার ভাষা রয়েছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ এ ভাষাগুলোর সংরক্ষণ ও বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন। শিশুর সার্বিক বিকাশ সাধনের জন্যেও মাতৃভাষার গুরুত্ব অত্যাধিক।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যেকটি জাতির নিজ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব ভাষার বর্ণমালা রয়েছে, যেগুলো আমাদের ভাষার স্বাতন্ত্রিকতাকে উর্দ্ধে তুলে ধরে। আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে ভাষা ও বর্ণমালার সংরক্ষণ যেমন প্রয়োজন তেমনি অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সর্বদা আন্দোলন জারি রাখতে হবে। সকল জাতিকে নিজ মাতৃভাষার চর্চার পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়েও আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

পিসিপি’র মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা বলেন, ২০০০ সাল থেকে মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিতসহ শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পিসিপি’র আন্দোলন শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সভা সমাবেশ, স্মারকলিপি পেশ, ছাত্র ধর্মঘট, ক্লাশ বয়কট, সংখ্যালঘু জাতির মাতৃভাষায় প্রতীকী ক্লাশ অনুষ্ঠান, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের থেকে বিরত ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এ আন্দোলনের ফলে ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ৫টি ভাষায় (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাদরি ও গারো ভাষায় প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রম শুরু করেছিল। আজ ৫ বছর অতিক্রম হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি ও শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলো উপর ভাষাগত, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন জোর করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি, ভাষার আধিপত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সকল জাতিসত্তার নিজ নিজ মাতৃভাষার শিক্ষা লাভের অধিকার নিশ্চিতসহ পিসিপি’র শিক্ষা সংক্রান্ত পাঁচ দফা দাবির আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন