কাউখালীতে বিভিন্ন গ্রামে ৬ গ্রামবাসীর বাড়িতে সেনা-মুখোশদের তল্লাশি, মোবাইল ফোন ছিনতাই

কাউখালী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সেনাবাহিনী ও তাদের সৃষ্ট মুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক ৬ গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশি ও ৯টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর ২০২১) দিবাগত মধ্যরাতে এ তল্লাশির ঘটনা ঘটে।
যাদের বাড়িতে তল্লাশি করা হয়েছে তারা হলেন – হাজাছড়ি গ্রামের ১। আনন্দ সেন চাকমা (৭৩),২। রাম চন্দ্র চাকমা (৬২), ৩। বিমল কান্তি কার্বারী (৬০) সর্ব পিতা- চন্দ্র কেতু চাকমা, ৪। রশি কুমার চাকমা ( ৭৫) পিতা- বাত্যা চাকমা, শুকনাছড়ি গ্রামের ৫। প্রাঞ্জল চাকমা (৫০), পিতা- বীরেন্দ্র চাকমা এবং পানছড়ি গ্রামের ৬। মিন্টু চাকমা (৩৮) পিতা- ছোট গালা চাকমা।
তল্লাশি করে সেনারা তাদের বাড়ি থেকে অবৈধ কোন কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। তবে তারা রশি কুমার চাকমা ও তার পুত্রবধুর কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন, বিমল কার্বারীর কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন, রাম চন্দ্র চাকমার ১টি এবং তার পুত্র ও পুত্র বধুর ২টি মোবাইল ফোন, আনন্দ সেনের ১টি মোবাইল ফোন এবং মিন্টু চাকমার শ্যালক ও তার সহধর্মীনির কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
জানা গেছে, সেনারা পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি প্রাঞ্জল চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে এবং অন্যদের বাড়ি তল্লাশির সময় তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। তল্লাশি শেষে আজ (১০ ডিসেম্বর) ভোরে সেনা সদস্যরা তাকে পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে এই শর্তে ছেড়ে দেয় যে, ‘ভবিষ্যতে তাকে সেনাবাহিনী ও মুখোশদেরকে বিভিন্ন জাত বিরোধী তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে, পানছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন থেকে চাঁদা আদায় করে দিতে হবে এবং মুখোশদের গণচাঁদা উত্তোলনে সহযোগিতা করতে হবে’।
সেনাদের সাথে তাদের সৃষ্ট ৭/৮ জন পাহাড়ি সন্ত্রাসীও ছিল। তারা সবাই নব্য মুখোশ ও জুম্ম রাজাকারের সদস্য। তাদের মধ্যে দাগী সেনা স্পাই মিল্টন তঞ্চঙ্গ্যা, এবঙ চাকমা ও পান্ডব চাকমা (রণয়)-কে স্পষ্টভাবে চিনতে পেরেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এদিকে একই দিনে ঘাঘড়ার কজইছড়ি ও লেভাপাড়া এলাকায় ৬০/৭০ জনের একদল সেনাসদস্য রাতে অবস্থান করে। তবে তারা কারো বাসায় তল্লাশি চালায়নি বলে জানা গেছে।
২৩ অক্টোবর ২০২১ হতে গতকালের অপারেশনসহ দেড় মাসের মধ্যে কাউখালীতে মধ্যরাতে ৪টি সেনা অভিযান সংঘটিত হলো। এসব ঘটনায় বাড়ি বাড়ি তল্লাশিসহ ৫ জন নিরীহ লোককে “অস্ত্র ও গাঁজা” গুজে দিয়ে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। সন্ত্রাসী ধরার নামে রাত বিরাতে জনগণের ঘুম হারাম করায় সেনাবাহিনীর ব্যাপারে এলাকায় ব্যাপক নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে এলাকার একাধিক জনপ্রতিনিধি ও মুরুব্বী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু স্বদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের যে ভূমিকা তা মোটেই সুখকর নয়। দাগী বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের নিয়ে তারা রাতের আঁধারে যেভাবে জনগণের মনে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে তাতে এ বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। লোকজনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। যদিও তাতে সেনা অফিসারদের চাকরির প্রমোশন হচ্ছে। যেভাবে বাড়ি বাড়ি তল্লাশীর সময় পরিবারের সদস্যদের মোবাইল, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে- এ তো রীতিমতো ডাকাতি! নিম্ন রুচীর কাজ।”
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন