কাউখালীতে সেটলার বাঙালিরা ইউপিডিএফ-এর অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
রাঙামাটির কাউখালীতে আজ ২১ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২:৩০ টার সময় সেটলার বাঙালিরা ইউপিডিএফ-এর কাউখালী উপজেলা শাখা অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে।
জানা যায়, আজ ছিল কাউখালী বাজারের হাটবার৷ সকাল সোয়া ১১টার দিকে কাউখালী সদর থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে যাত্রী আনতে শামুকছড়িতে যাচ্ছিল৷ এ অটোরিক্সার ড্রাইভার ছিল সুলতান নামে এক বাঙালি। পথিমধ্যে কাউখালী কলেজের কয়েকজন বাঙালি ছাত্র অটোরিক্সাটি থামিয়ে ড্রাইভারকে তাদেরকে কলেজে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। ড্রাইভারটি তাদের কথা না শুনলে বাঙালি ছাত্ররা অসন্তুষ্ট হয় এবং ড্রাইভারকে হুমকি দেয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়৷ এ সময় দু‘জন পাহাড়ি ছাত্র (মারমা) তাদের মধ্যেকার সৃষ্ট ঝগড়া মিটমাট করে দিতে এগিয়ে আসলে বাঙালি ছাত্ররা তাদের সাথেও ঝগড়াতে লিপ্ত হয় এবং এক পর্যায়ে একজন পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর করে৷ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউখালী কলেজে পাহাড়ি ও বাঙালি ছাত্রদের মধ্যে কিছুটা বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারামারি শুরু হয়৷ এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে সেটলার বাঙালিরা দুপুর ১২:৩০ টার দিকে ইউপিডিএফ-এর কাউখালী উপজেলা শাখা অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ আগুনে অফিস সম্পুর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়৷ ফলে অফিসে গুরুত্বপূর্ণ দলিল, আসবাব পত্র সহ সকল জিনিষপত্র পুড়ে যায়৷ অফিস পুড়ে দেয়ার সাথে জড়িত কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে৷ তারা হলো-ওসমানগণি, মোহাম্মদ আলী, শিপন, রুবেল, সোহাগ, আনোয়ারুল, জয়নাল, আব্দুল্লাহ, আখতার ও সোহেল।
সেটলার বাঙালিরা অফিস পুড়ে দিয়েও ান্ত না হয়ে বাজারে আসা লোকজনের উপর হামলা চালিয়ে সামপ্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টা চালায়৷ সেটলারদের হামলায় আহত কয়েকজন হলেন, রেসি মারমা (৫০) পিতা- থৈঅং মারমা, গ্রাম- হারাঙ্গী পাড়া, থৈয়াঅং মারমা (৪৫) পিতা- মৃত. অজ্ঞাত, গ্রাম- কচুখালী, পাইথু মারমা (৬০) স্বামী- উলাঅং মারমা, গ্রাম- ঘিলাছড়ি৷ এর মধ্যে রেসি মারমা কাউখালী সদর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রয়েছেন৷ বাকীরা প্রাথমিক চিকিত্সা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন।
ঘটনার পর উদ্ভুত পরিস্থিতি বিষয়ে বিকাল ২:৩০ টার দিকে উপজেলা প্রশাসন কাউখালী সদর থানায় এক জরুরী বৈঠকে বসেন৷ এতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অংগ্য মারমার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ইউপিডিএফ-এর একটি প্রতিনিধি দল উক্ত বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন৷ এতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: গোলাম মোস্তফা ছাড়াও ঘাগড়া জোন কমান্ডার হাসান, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল কান্তি বড়ুয়া, কাউখালী উপজেলা চেয়ারম্যান অংসাপ্রু চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান অর্জুন মনি চাকমা, ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: খোকন, কলমপতি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্যজাই মারমা, জেলা পরিষদ সদস্য কাউখালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অংসাপ্রু মারমা উপস্থিত ছিলেন।
ইউপিডিএফ প্রতিনিধি দলটি ইউপিডিএফ-এর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে অবহিত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান৷ বৈঠকে সকলে ইউপিডিএফ-এর অফিস পুড়ে দেয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে অংগ্য মারমা জানিয়েছেন।
ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর রাঙামাটি জেলার প্রধান সংগঠন শান্তিদেব চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিঠুন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কণিকা দেওয়ান পৃথক পৃথক বিবৃতিতে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং ইউপিডিএফ-এর অফিসে অগি্নসংযোগের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।