মাতৃভাষায় শিক্ষার দাবিতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম
সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার সহ শিক্ষাসংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পাহাড়িছাত্র পরিষদ আজ ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পন করেনি। এছাড়াপাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তিন পার্বত্যচ ট্টগ্রামের জেলা সদর সহ বিভিন্ন উপজেলায়ও ছাত্র-ছাত্রী সহ বিভিন্ন সংগঠন ওব্যক্তি শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ থেকে বিরত থাকে।
পাহাড়িছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা ও সহ সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমাএক যুক্ত বিবৃতিতে পিসিপি’র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবকঅর্পণ থেকে বিরত থাকার জন্য ছাত্র-ছাত্রী সহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগণেরপ্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, ২১ শেফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করলেও পার্বত্যচট্টগ্রাম সহ সারাদেশে ৪৫ টির অধিক সংখ্যালঘু জাতিসত্তাসমূহ এখনো নিজ নিজমাতৃভাষায় পড়াশুনা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তাদের ভাষাসমূহ দিন দিন হারিয়ে যেতেবসেছে। সরকার জাতিসত্তাগুলোর ভাষা বিকাশের ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা বরং পাঠ্য পুস্তক সহ বিভিন্নভাবে জাতিসত্তাসমূহকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনকরে চলেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, যে দেশে মাতৃভাষার স্বীকৃতি ওপ্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে, সে দেশে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ভাষার কোনস্বীকৃতি ও মর্যাদা নেই। শুধু তাই নয়, জাতিসত্তাগুলোর ভাষা, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে।স্কুল-কলেজে জাতিসত্তাসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করাহয়েছে। এতে বিভিন্ন জাতিসত্তার বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধজাগার পরিবর্তে একজন ছাত্রের মনে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। স্কুল-কলেজ ওবিশ্ববিদ্যালয়ের মতো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়েও বেশির ভাগছাত্রছাত্রী দেশের বিভিন্ন জাতিসত্তা সম্পর্কে নিদারুণ অজ্ঞতা ও ভুল ধারণানিয়ে আসে। এটা দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠারজন্য মোটেই সহায়ক নয়।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, আন্তর্জাতিকমাতৃভাষা দিবসের অর্থ হলো প্রত্যেক জাতি বা জাতিসত্তার নিজ মাতৃভাষাকেরক্ষা, সংরক্ষণ, বিকাশের অধিকারের স্বীকৃতি; নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভেরঅধিকারের নিশ্চয়তা। বাংলাদেশ বহু জাতি, বহু ভাষা ও বহু সংস্কৃতি সমৃদ্ধ একবৈচিত্র্যময় দেশ। এ দেশে বাঙালি ছাড়াও যেমন অন্য অনেক জাতি রয়েছে, তেমনিবাংলা ছাড়াও আরো বহু ভাষা রয়েছে। কিন্তু সে সব ভাষা আজ অনাদরে হারিয়ে যেতেবসেছে। এ ভাষাগুলোর সংরক্ষণ, সমৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয়পৃষ্ঠপোষকতা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে সে ধরনের দৃষ্টিগ্রাহ্য কোন উদ্যোগআজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। বরং বাংলা ভাষার আগ্রাসনে দেশের অন্যান্য ভাষাগুলোরঅস্তিত্ব হারিয়ে যেতে বসেছে।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় ভাষা শহীদদের প্রতিশ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমরা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাজানাই। তাদের মহান আত্মত্যাগ কেবল একটি ভাষার জন্য ছিল না, তারা মাতৃভাষারমর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াইকরে অকাতরে নিজের জীবন উৎসর্গকরেছিলেন। তাই যতদিন এদেশে বাংলা ছাড়াও অন্য ভাষাগুলোর মর্যাদা প্রতিষ্ঠাহবে না ততদিন সেই বীর শহীদদের মহান আত্মত্যাগ কোনভাবেই পূর্ণতা পেতে পারেনা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ অমর একুশের চেতনাকে ধারণ করে এদেশে সকল জাতিসত্তারভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবে। যতদিনপর্যন্ত এ অধিকার পূরণ হবে না ততদিন পর্যন্ত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এইসংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে নেতৃদ্বয় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শিমুল চাকমার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।