গুইমারা সহিংসতায় নিহতদের লাশ রাতের আঁধারে দাহ করতে বাধ্য করা চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন : তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
খাগড়াছড়ির গুইমারায় সাম্প্রদায়িক হামলায় সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত ৩ জনের মরদেহ রাতের আঁধারে দাহ করতে বাধ্য করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পাহাড়ের তিন সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের জন্য গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমার স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মৃত ব্যক্তিকে দাহ করার ক্ষেত্রে পাহাড়িদের বিশেষ কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতি রয়েছে। কিন্তু সেনা ও পুলিশ প্রশাসন নিহতদের পরিবার ও গ্রামবাসীকে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতি পালনের সুযোগ না দিয়ে রাতে আঁধারে দাহ করতে বাধ্য করেছে। এতে নিহতদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি অনুসরণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটি স্পষ্টতই মানবাধিকার লঙ্ঘন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে এভাবে নাগরিকদের অধিকার হরণ এবং সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় সামাজিক রীতি ও প্রথা এভাবে ভূ-লুণ্ঠিত করা– কখনই মেনে নেয়া যায় না।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ডাকা শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচী পালনের সময় গুইমারায় অবরোধপালনকারীদের ওপর চড়াও হয় সেনাবাহিনী। আক্রমণের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেনাবাহিনী বিনা উষ্কানিতে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন থোয়াইচিং মারমা (২৫), আখ্র মারমা (২৪) ও আথুইপ্রু মারমা (২৬) নামের তিন জন। এছাড়াও আহত হয় অনেকে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫) খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণে জড়িত সকল অপরাধীকে গ্রেফতার-শাস্তির দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ডাকা টানা দ্বিতীয় দিনের সড়ক অবরোধ চলাকালে গুইমারার রামেসু বাজার এলাকায় অবরোধ পালনকারী ছাত্র জনতার ওপর সেনাবাহিনী ও সেটলাররা একসাথে হামলা চালায়। এতে সেনাবাহিনীর গুলিতে তিন জন নিহত ও কয়েকজন গুরুতর জখমসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। এছাড়া সেনাবাহিনীর প্রত্যেক্ষ সহযোগিতায় সেটলার বাঙ্গালিরা রামেসু বাজার ও আশেপাশের পাহাড়িদের বসতবাড়ি, দোকানপাট ও যানবাহন আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
এখানে আরও উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে সেনাদের শারিরীক নির্যাতনের পর তৎকালীন পিসিপি নান্যাচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রমেল চাকমার মৃত্যু হলে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতি ছাড়াই পেট্রোল ঢেলে লাশ দাহ করতে বাধ্য করেছিল সেনা ও পুলিশ বাহিনী।
তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হত্যাকাণ্ড, দোকানপাটে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগে জড়িত সেটলার-সেনাদের বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও আহত-নিহতের পরিবারগুলোকে ন্যায্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।