জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে দীঘিনালাবাসীর লিখিত আবেদন, হয়রানির প্রতিকার দাবি
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৩

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায় ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প স্থাপনকালে উচ্ছেদকৃত ২১ পরিবার, সাধনাটিলা বনবিহার এলাকাবাসী ও ৫ নং বাবুছড়া ইউনিয়ন ও ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের জনগণের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথকভাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এতে তারা সেনাবাহিনী কর্তৃক হয়রানির প্রতিকারসহ বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার রাঙামাটিতে মানবাধিকার কমিশনের গণশুনানি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের বরাবরে তারা এসব আবেদন করেন।
বাবুছড়ায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদকৃত ২১ পরিবারের করা আবেদনে বলা হয়, আমরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, ক্ষতিগ্রস্ত ২১ পরিবার। আমাদের জীবন উদ্বাস্তু জীবন। পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধে ৬০ দশকে রাঙ্গামাটি জেলা থেকে বিভিন্ন পাড়া-খান, মৌজা ও ইউপি থেকে ৫১ নং দীঘিনালা মৌজায়, ০৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়নে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য হয়েছি। ১৯৮৩/৮৯ সনে বিরাজমান পরিস্থিতির কারনে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিই। ১৯৯৭ সালে ০২ ডিসেম্বর ‘শান্তিচুক্তি’র পরে বাংলাদেশ সরকার আমাদেরকে পুনর্বাসন করে নিজ জায়গায় ফেরত নিয়ে আসে। আমাদের নিজস্ব জায়গায় স্থায়ী বসবাস করার সময় ১৫/০৫/২০১৪ সালে সেনা ও বিজিবি আমাদের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে এবং তখনকার সময়ে ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। আমাদের উপর মানসিক, আর্থিক ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। বিনা কারণে গ্রেপ্তার, কর্তব্যরত সেনা গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক জনপ্রতিনিধি, কার্বারী, মুরুব্বীসহ সাধারণ মানুষকে চেক পোষ্টে ডেকে নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখা অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ, হুমকি ভয় প্রদর্শন করা হচ্ছে। এসবের প্রতিকারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এতে তারা ৪ দফা দাবি জানান। এগুলো হলো-১। আমাদের বাস্তভিটা ও ধান্য জমি ফেরত দিতে হবে; ২। ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; ৩। হয়রানি, উচ্ছেদমূলক হুমকি, ভয় প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে ও ৪। জনপ্রতিনিধি, কার্বারী-মুরুব্বী বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে অপদস্ত, তাচ্ছিল্য ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
বাবুছড়া ইউনিয়ন ও দীঘিনালা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সেনা হয়রানির শিকার জনগণের পক্ষে করা আবেদনে বলা হয়, বিগত ২০১৯ খ্রিঃ হতে আমাদের এই এলাকায় পাহাড়ি বাসিন্দাদেরকে ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। বাজার থেকে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী নিতে চাইলে বাবুছড়া সেনা চেক পোষ্টে আটকানো হয়। গৃহ নির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বাবুছড়া সাবজোন ও দীঘিনালা জোন থেকে পূর্বানুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন বাবুছড়া ইউনিয়নে ০৩ নং ওয়ার্ডে বেলতলী সংঘ রত্ন বৌদ্ধ বিহারের সংস্কার কাজের জন্য অনুমতির আবেদন করা হলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেননি। গত ৩০-০১-২০২২ খ্রিঃ তারিখে সাধনাটিলা বন বিহার, চিন্তামনি বৌদ্ধ বিহার, থলিপাড়া বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে সেনা কর্তৃপক্ষ উক্ত বিহারগুলোকে কোনো ধরনের উন্নয়ন মূলক কাজ করা যাবে না বলে মৌখিক নির্দেশনা জারি করে। ০৫ নং বাবুছড়া ইউনিয়নে ৩৭ টি গ্রামে প্রায় ২৬,৫০০ জন এবং ০৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়নে ০১ নং ওয়ার্ডে ১০ টি গ্রামে প্রায় ৮,০০০ জন অধিবাসীকে অদ্ভুত বৈষম্যমূলক নিয়মে বেড়াজালে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে আমরা ৩/৪ বছর ধরে বিনা কারণে চরম হয়রানী ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১। যত দ্রুত সম্ভব ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ড ও ০৫ নং বাবুছড়া ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের বাধা প্রদান বন্ধ করা হোক; ২। ব্যক্তিগত ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের জন্য বাধ্যতামূলক সেনা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণের অবৈধ, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী নিয়ম বাতিল করা হোক ও ৩। বাবুছড়া বাজারের উত্তরে গৃহ নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণে বাধা তুলে নেওয়া হোক।
বাবুছড়া সাধনাটিলা বনবিহার এলাকায় বসবাসকারী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সাধনা টিলা বনবিহার নির্মাণ ও সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক বাধা প্রদান ও হয়রানি বন্ধের আবেদন জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিগত ১৯৮৪ সালের আগে আমাদের বংশ পরস্পরার জুম চাষ করে আসছিল বর্তমানে সাধনা টিলা নামক জায়গাতে। ১৯৮৬/৮৯ সালে সাধনা টিলা নামক জায়গার লোকজন ত্রিপুরা রাজ্যে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেই। ১৯৯৭ সালে ০২ ডিসেম্বর ‘শান্তিচুক্তি’র ফলে বাংলাদেশ সরকার নিজ নিজ জায়গায় আমাদের নিয়ে আসে। বর্তমান সরকার সেই সময়ে প্রতি পরিবারকে ৫.০০ (পাঁচ) একর করে জায়গা বন্দোবস্তি করে দেয়। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জায়গাটিতে বসবাস করে আসছি। বিগত ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে সাধনা টিলা বন বিহার নামে জায়গাটি দান করি এবং বিহারটি স্থাপিত হয়। তখনকার সময়ে বিহার নির্মাণ কাজ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছিল। বৌদ্ধ মন্দির, ভিক্ষুনিবাস, দেশনালয় এর কাজ চলার সময়ে সেনাবাহিনী কর্তৃক বাধা প্রদান করা হয়। ১২০ ফুট বৌদ্ধ মন্দিরটি যথাসময়ে নির্মাণ করা না গেলে ক্রয়কৃত মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে এবং এলাকাবাসী ধর্মীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এই এলাকায় পাহাড়ি বাসিন্দাদেরকে ঘর-বাড়ি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা প্রদান হচ্ছে। বাজার থেকে সাধনা টিলা বন বিহার নির্মাণ সামগ্রী নিতে চাইলে বাবুছড়া সেনা চেক পোষ্টে আটকনো হয় ৷ গৃহ নির্মাণ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য বাবুছড়া সাবজোন ও দীঘিনালা জোন থেকে পূর্বানুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে আমরা ৩৪ বছর ধরে বিনা কারণে চরম হয়রানি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে জোর দাবি জানাচ্ছি।
আবদেনপত্রে উল্লেখিত তাদের দাবিগুলো হলো- ১। যত দ্রুত সম্ভব সাধনা টিলা বন বিহারের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের বাধা প্রদান বন্ধ করা হোক; ২। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন কাজের জন্য বাধ্যতামূলক সেনা কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণের অবৈধ, বৈষম্যমূলক এবং স্বেচ্ছাচারী নিয়ম বাতিল করা হোক ও ৩। বাবুছড়া বাজারের উত্তরে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণে বাধা তুলে নেওয়া হোক।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন