ঢাকায় ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর সংবাদ সম্মেলন, ১০ দফা দাবি ও বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা

0

ঢাকা : ইউনাইটেড ওয়ার্কার্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডব্লিউডিএফ) ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিকদের বেতন ভাতা ও সকল সুবিধাদি প্রদানসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে এবং আগামী ১৭ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে নারী নির্যাতন বিরোধী সমাবেশ ও শ্রমিক এলাকায় সাংগঠনিক সফরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

আজ ৮ আগস্ট ২০১৮, বুধবার সকাল ১১:৩৫ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংগঠনটি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয় এবং তাদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে ক্ষমতাসীন সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যায়িত করে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করা হয়েছে। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ও সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের উৎপাত, দমন-পীড়নের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে খ্যাতনামা আলোকচিত্রী শহীদুল আলমকে গোয়েন্দা সংস্থার অপহরণ ও নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তার নিঃশর্ত মুক্তি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগের দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা।

পাহাড় ও সমতলে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নেমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের একদিন আগে ২৮ জুলাই পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলায় ৯মাইল নামক এলাকায় এক ত্রিপুরা জাতিসত্তার ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও এর বাইরে অবস্থানকারী সাধারণ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে, প্রতিবাদ জানায়। বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু যেভাবে সবাইকে নাড়া দিয়েছিল, ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনাও অনুরূপভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঝড় তোলে। দেশের দুই প্রান্তে ঘটে-যাওয়া দুটি মর্মান্তিক দুঃখজনক ঘটনা যেন পাহাড় ও সমতলের প্রতিবাদী জনতাকে একই মোহনায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সেনাসৃষ্ট সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কর্তৃক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দুই নেত্রী অপহৃত হলে (১৮ মার্চ’১৮), তার প্রতিবাদে দেশের সকল প্রগতিশীল ছাত্র-নারী সংগঠন সামিল হয়। সম্মিলিত প্রবল আন্দোলনের মুখে দুর্বৃত্তরা অপহৃত দুই নারী নেত্রীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এটা নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য বিজয়, তা আমাদের ঐক্য সংহতির সোপান তৈরি করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলে ধরে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজধানী ঢাকাবাসী যেভাবে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুণ্ডামি প্রত্যক্ষ করেছে, তার উৎপত্তিস্থল হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, যা এখন ক্যান্সারের মত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে! বছরের পর বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ও সেটলাররা জোর জবরদস্তি চালাচ্ছে। তা যাতে দেশে এবং বাইরে প্রকাশ না পায়, সেজন্য আশির দশকে যেভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সেন্সর ছিল, এখনও অঘোষিতভাবে তা জারি আছে। সে কারণে সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশবাহিনী বলে পরিচিত সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের অপকর্ম দেশের লোকজন জানে না। ঢাকায় স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত আক্রমণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সরকার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিতে ইতস্তত করে না, আর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষা-ভাষী জাতিসত্তাসমূহকে তো সরকার নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করে না, ‘বাঙালি জাতীয়তা’ চাপিয়ে দিয়েছে, তাদের দমন করতে শাসকগোষ্ঠী কতটা কঠোর ও বর্বর নীতি অনুসরণ করবে, তা সহজেই অনুমেয়।
‘পার্বত্য চুক্তি’ সম্পাদন, জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনীর আত্মসমর্পণের পরও জারি রয়েছে তথাকথিত “অপারেশন উত্তরণ”। শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা হয়েছে সংবিধান বিরোধী দমনমূলক ‘১১দফা নির্দেশনা”, তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে ফৌজি শাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি জনগণের ওপর সেনা-সেটলাররা পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে, হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তাদের বাস্তুভিটা থেকে বিতাড়িত করছে, জমিজমা বেদখল করছে। সাম্প্রতিক কালে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায়, সেখানে সেনাবাহিনীর মধ্যকার একটি চক্র প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আসন (২৯৮ নং খাগড়াছড়ি, ২৯৯ নং রাঙ্গামাটি ও ৩০০ নং বান্দরবান) উপহার দেবে বলে ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে। সেনাবাহিনীর মত একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা যদি এভাবে একটি দলের পক্ষ হয়ে নির্বাচনের পাতানো খেলায় নেমে পড়ে, স্থানীয় বখাটে যুবক দুর্বৃত্তদের ভাড়া করে জনগণের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়, তাহলে সেখানকার পরিস্থিতি অশান্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে একশ্রেণীর সেনা কর্মকর্তা অনিয়ম দুর্নীতি ও গুণ্ডামিতে হাত পাকিয়ে দেশের জনগণের ওপর ছোবল দিতে উদ্যত হয়। বিভিন্ন ঘটনা থেকে তা অভিজ্ঞমহলের বুঝতে অসুবিধে হবে না’।

সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে – ওভার ডিউটির ভাতা যথাযথভাবে প্রদান করতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তম সামাজিক উসব ‘বৈসাবি’ বৌদ্ধ-হিন্দু ও খৃস্টান ধর্মাবলম্বীদের স্ব স্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সময় ছুটি ও ভাতা প্রদান করতে হবে; ন্যায্য বাসা ভাড়া, শিক্ষা-চিকিসা ভাতা প্রদান করতে হবে; ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওভার-টাইম খাটানো বন্ধসহ কারখানায় নারীদের সম্মান নিরাপত্তার বিধান করতে হবে; মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ভাতা নিশ্চিত করতে হবে; ‘বাঙালি জাতীয়তা’ নয়, স্ব স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিতে হবে; অবিলম্বে ইউপিডিএফ সংগঠক মিঠুন চাকমার চিহ্নিত খুনীদের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান; অন্যায়ভাবে আটক বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি, ইউপিডিএফ-এর সভাপতিসহ নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সেনাসৃষ্ট নব্য মুখোশবাহিনী ভেঙে দিতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি ও সমাধানের লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব ইউপিডিএফ-এর সাথে সংলাপে বসে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি মেনে নিতে হবে এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানকে পদত্যাগ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রারম্ভিক বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের সভাপতি সচিব চাকমা। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির অর্থ সম্পাদক শান্তি বাবু চাকমা এবং সদস্য বাবলু চাকমা ও সুখময় চাকমা।

সংবাদ সম্মেলনের পুরো লিখিত বক্তব্যটি পড়তে ক্লিক করুন :UWDF Press conference Text 8 Aug ’18

———————–
সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More