দীঘিনালায় ‘স্বাধীন রাজ্য’কে জেলায় রূপান্তরের পরিণতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অস্তিত্বের লড়াই” শীর্ষক আলোচনা সভা
দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১ আগস্ট ২০২৩

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে “জেলায় উন্নীতকরণ” উপলক্ষে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় “স্বাধীন রাজ্য’কে জেলায় (১৮৬০-১৯৪৭) রূপান্তরের পরিণতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অস্তিত্বের লড়াই” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ১ আগষ্ট ২০২৩, মঙ্গলবার, দুপুর দেড়টায় দীঘিনালার পুকুরঘাট এলাকায় ‘ইতিহাস অনুসন্ধানে নতুন প্রজন্ম’ ব্যানারে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে সচেতন হোন, আওয়াজ তুলুন” শ্লোগানে আয়োজিত আলোচনা সভায় রুপেশ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ৪ নং দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা, ইউপিডিএফ এর সংগঠক সুজয় চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সহ সভাপতি মিঠুন চাকমা।
চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সঠিক ইতিহাস অনুসন্ধানের জন্য ছাত্র সমাজের বিশেষ ভূমিকা পালন করা দরকার। এক সময়ে একটি স্বাধীন জাতিকে আজ যে পরাধীনতার মধ্যে দিনযাপন করতে হচ্ছে, কেন এই পরিণতি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস আমাদের জানা থাকতে হবে। নিজেদের সম্পর্কে জানা না থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না।

তিনি আরো বলেন, আজকে এই বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমাদের ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরোপ করেছে। জাতিগতভাবে আমরা নিপীড়ন-নির্যাতন শিকার হচ্ছি, আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, আজ ছাত্র-যুব সমাজের মধ্যে জাতীয় চেতনাবোধের অভাব রয়েছে।
তিনি বলেন, পাহাড়িরা আসল ঔষধ চিনেন না বলেই আজ জাতির এই দুর্দশা। যে জাতির সংগ্রাম নেই সেই জাতি কিভাবে আর্দশবান হবে? আমাদেরকে আদর্শিক সংগ্রাম বেছে নিতে হবে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লার্মা জাতিকে আন্দোলনে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর মতো সবাইকে বলতে হবে “করেঙ্গা মরেঙ্গা”। তাহলে আরো বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস রচনা করতে পারবো। মনে রাখতে হবে সংগ্রাম করলে কিছু হলেও আদায় করা যায়। তিনি উপস্থিত ছাত্র-যুব সমাজকে নিজ জাতির ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করার পরামর্শ দেন।
সুজয় চাকমা বলেন, ব্রিটিশরা কেন স্বাধীন পার্বত্য রাজ্যকে তথাকথিত ‘জেলায় উন্নীতকরণ’ করেছে সে সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। কারণ জাতির ইতিহাস বিকৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হলে আগে ইতিহাস জানতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষগণ এ অঞ্চলের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্র্যতা রক্ষার জন্য বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছেন। কিন্তু ধুরন্ধর বিট্রিশ ঔপনিবেশিকরা সেই লড়াই থামাতে নানা কূটকৌশল প্রয়োগ করেছে। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়ে ১৮৬০ সালের ১ আগস্ট এই স্বাধীন পার্বত্য রাজ্যকে জেলায় রূপান্তর ঘটিয়ে নিজেদের শাসনকার্য পাকাপোক্ত করেছে। তারা আমাদের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে শাসন-শোষণ চালিয়ে সর্বশেষ ১৯৪৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অন্যায়ভাবে ধর্মান্ধ ইসলামী রাষ্ট্র পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়ে গেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক কর্তৃক এমন ট্রাজেডি আমরা কখনো ভুলে যেতে পারি না।
মিঠুন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে ছাত্র সমাজ সচেতন হতে হবে। আজ থেকে ১৬৩ বছর আগে ১৮৬০ সালের ১ আগস্ট ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা যে স্বাধীন রাজ্যকে জেলায় রূপান্তর করেছে তার ইতিহাস জানতে হবে। তার আগে তো এ অঞ্চলটি স্বাধীন রাজ্য হিসেবে বিবেচিত ছিল। ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সীমানা তা সংকুচিত হতে হতে আজ ৫,০৯৩ বর্গমাইলে এসে দাঁড়িয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের জায়গা। এসব বিষয়ে ছাত্র সমাজকে অনুসন্ধান করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশের পর পাকিস্তানী শাসন-শোষণ এরপর বাংলাদেশ শাসকগোষ্ঠির দমন-পীড়নে পাহাড়ি জাতিসত্তার অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। প্রতিনিয়ত অন্যায়-অবিচার, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন ইত্যাদি ঘটনা ঘটেই চলেছে। জাতির এই দুর্বিষহ সময়ে ছাত্র-যুব সমাজকে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তিনি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে ছাত্র-যুব সমাজকে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন