পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এদিন : লোগাং গণহত্যা

0

লোগাং গণহত্যা:
১৯৯২ সালের ১০ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটলাররা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং গুচ্ছগ্রামে বর্বর গণহত্যা সংঘটিত করে। শান্তিবাহিনী কর্তৃক এক বাঙালি রাখাল বালককে হত্যার মিথ্যা অভিযোগে তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। এতে কয়েকশত পাহাড়ি হতাহত হয়। অনেকে নিঁখোজ হয়ে যায়। সেদিন শিশু, বৃদ্ধ, নারী কেউই রেহাই পায়নি। অগ্নিসংযোগ করে ছাই করে দেওয়া হয় ৭ শতাধিক ঘরবাড়ি।

লোগাং হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শোক র‌্যালি। ছবি: রাডার, ১৯৯২
লোগাং হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে শোক র‌্যালি। ছবি: রাডার, ১৯৯২

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি (বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু) উৎসবের ৩দিন আগে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পাহাড়িরা। বর্জন করা হয় বৈ-সা-বি উৎসব।

এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের ফলে বৈ-সা-বি’র আনন্দ উৎসব শোক সাগরে পরিণত হয়। ১৩ এপ্রিল’৯২ উৎসবের মূল দিন (মূল বিঝু) খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হাজার হাজার লোকের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা থেকে আগত রাজনৈতিক  সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, লেখক-সাংবাদিকরাও আনন্দ উৎসবের পরিবর্তে আপামর জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়। খাগড়াছড়ির হাজার হাজার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সেদিন বাঁধ ভাঙা পানির মতো রাজপথে নেমে প্রথম সরকারের বর্বরতার প্রতিবাদ জানান। স্বতঃস্ফুর্তভাবে বৈ-সা-বি উৎসব বর্জন করা হয়। নিহতদের সম্মান জানাতে রান্না করা পাজন (মূল উৎসবের দিন হরেক রকমের সবজি দিয়ে তৈরি খাদ্য বিশেষ) চেঙ্গী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।

বৈ-সা-বি উপলক্ষে ঢাকা থেকে আগত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, লেখক-সাংবাদিকরা ১২ এপ্রিল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যাবার পথে পানছড়ি উপজেলা সদরে সেনাবাহিনী তাদের বাধা প্রদান করে।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: রাডার, ১৯৯২
হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: রাডার, ১৯৯২

এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ এপ্রিল’৯২ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় লোগাং অভিমুখে ঐতিহাসিক পদযাত্রা। হাজার হাজার নারী-পুরুষ এতে অংশ নেন। ঢাকা থেকে আসা রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র নেতা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী-লেখকরাও পাহাড়ি জনগণের সাথে সংহতি জানিয়ে এই পদযাত্রায় অংশ নেন। সেনাবাহিনীর সকল বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে লোগাং পোড়াভিটায় গিয়ে তারা ফুল দিয়ে নিহতদের সম্মান জানান।

লোগাং গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত ডজনের অধিক গণহত্যা ও দুই ডজনের অধিক সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কোন ঘটনারই আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। ফলে এ ধরনের বর্বর ঘটনা এখনো ঘটেই চলেছে।

কাজেই, পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত সকল গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র-যুব সমাজ তথা সর্বস্তরের জনগণকে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
————————-

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More