পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রামে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৪ জুলাই ২০২৩

মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ কর, ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী ভেঙে দাও” এই শ্লোগানে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় ও ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যার বিচার, রাজনৈতিক দমনপীড়ন-গ্রেফতার বন্ধ এবং ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমার সন্ধানদান ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে’ চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পাহাড়ের তিন গণসংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।

আজ শুক্রবার (১৪ জুলাই ২০২৩) বিকাল ৪ টায় নগরীর ডিসি হিল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাব ঘুরে চেরাগী পাহাড় মোড়ে এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সোহেল চাকমা’র সভাপতিত্বে ও চবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ভূবন চাকমা’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী জেসি চাকমা ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সংগঠক সাইফুর রুদ্র।

বক্তারা বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার দেশের আলোচিত ঘটনাগুলোকে আড়াল করার জন্যে নতুন নতুন নাটক মঞ্চস্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই শাসকগোষ্ঠী জনগণের কাছে ধর্ণা দিতে এ রকম নানা কূটকৌশল গ্রহণ করে। সম্প্রতি দেখা গেছে, এক একর জমি লিখে দেয়ার শর্তে ২০২০ সালে লংগদুতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রহিমকে (৪৬) তিন মাসের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার বহির্ভূত নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।

তারা আরো বলেন, পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের শাসন জারি রাখতে তথাকথিত বন্দুক যুদ্ধের নাটক সাজিয়ে কয়েক দশক ধরে হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা দিয়ে পাহাড়িদের গ্রেফতার, হয়রানি ও আটকের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। এছাড়া বিভিন্ন ভূঁইফোড় কোম্পানি ও সংগঠন কর্তৃক ভূমি বেদখল করে পাহাড়ি উচ্ছেদ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা এখন পার্বত্য চট্টগ্রামের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। বান্দরবানে ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি ভোগদখলের পাঁয়তারা, নব্য মুখোশ দিয়ে বম জাতিসত্তাদের উপর নির্মম গণহত্যা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে কাঁচপুর শ্রমিক এলাকা থেকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা অপহরণের শিকার হন। এরপূর্বে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন তৎকালীন সেনাবাহিনীর লে. ফেরদৌস গঙ কর্তৃক কল্পনা চাকমা অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। আজ পর্যন্ত সেই অপহরণের বিচার ও তাদের কারোর সন্ধান মেলেনি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা অবাধে অপরাধ সংঘটিত করা হচ্ছে। অথচ দেশের জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্যে গত ১০ জুলাই ইউরোপিয় ইউনিয়নের ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম বাংলাদেশে এসেছে এবং নির্বাচনে ৬ সপ্তাহ তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করে সেখানকার পরিবেশ ও মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায়। সমাবেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষণ টিমকে পার্বত্য চট্টগ্রামে যাওয়ার  আগ্রহ প্রকাশ করায় অগ্রিম অভিনন্দন জানানো হয়। একই সাথে তারা যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান করতে পারে সেই দাবি উত্থাপন করা হয়।

সমাবেশ থেকে বক্তারা, অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর মদদে সংঘটিত হওয়া ডজনের অধিক গণহত্যা ও ঠ্যাঙারে বাহিনী দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার, মাইকেল ও কল্পনা চাকমা’র সন্ধানদান এবং ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনের কারান্তরীণ নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তিসহ ধর্ষক আব্দুর রহিমের জামিন বাতিল করে যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখঅর দাবি জানান।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More