প্রশাসন সশস্ত্র গ্রুপটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?

0

খাগড়াছড়ি॥ খাগড়াছড়ির পেরাছড়া ও স্বনির্ভর বাজারের পশ্চিমে চেঙ্গী নদীর পাড়ে অবস্থানরত সশস্ত্র গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না সে বিষয়ে জনমনে বিরাট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, গত পরশু রাত থেকে নব্য মুখোশ বাহিনীর একটি সশস্ত্র গ্রুপ পেরাছড়ার নীলকান্ত পাড়া ও দয়ারাম কার্বারী পাড়ায় (১২ নং রাবার বাগানের সীমানা) অবস্থান করে।

তাদের অপর একটি সশস্ত্র গ্রুপ গতকাল সকালে আলুটিলার দিক থেকে চেঙ্গী নদী অতিক্রম করে পেরাছড়া হয়ে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়ক অতিক্রম করে সিঙ্গিনালার সীমানায় আম বাগানে অবস্থান নেয়।

একই সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য তাদের পাশাপাশি নীলকান্ত পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, মহিলা কুটির ও ১২ নং যৌথ খামারে অবস্থান করে এবং খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে টহল বাড়িয়ে দেয়।

নীলকান্ত পাড়ায় অবস্থান নেয়া মুখোশ গ্রুপটি দয়ারাম পাড়ার বাসিন্দা বিশ্বমনি চাকমা (৪০) ও নীলকান্ত পাড়ার বাসিন্দা সুমতি রঞ্জন চাকমাকে (৪০) অপহরণ করে। এর প্রতিবাদে এলাকার জনগণ খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়ক অবরোধ করলে সন্ত্রাসী মুখোশরা তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়।

সন্ত্রাসী গ্রুপটির ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এক নেতা জানান, তিনি গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সন্ত্রাসীদের অবস্থান ও অপহরণের বিষয়ে এসপি আলী আহমদ, ওসি শাহদাত হোসেন টিটো এবং ডিএসবি-সহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে অবহিত করেন।

কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে তাদের কেউ সাড়া দেননি বলে উক্ত নেতা জানান।

তিনি বলেন, এসপি আমাকে এসএমএস করে অপহৃতদের নাম ও ঠিকানা পাঠাতে বলেন এবং আমি তা পাঠাই।

আমি তাদেরকে বলি যে যারা সশস্ত্রভাবে অবস্থান করছে তারা মিঠুন চাকমার খুনী, তাদেরকে গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু তারা কিছুই করেনি।

এদিকে গতকাল রবিবার রাত থেকে স্বনির্ভরের পশ্চিমে চেঙ্গী নদীর পাড়ে ভোলানাথ পাড়ায় নব্য মুখোশদের একটি সশস্ত্র দল অবস্থান করছে। এর নেতৃত্বে রয়েছে শ্যামল কান্তি চাকমা ওরফে জলেয়্যা। সে একজন অস্ত্র চোরাকারবারী। গত বছর অস্ত্রসহ একটি সেনা চেকপোস্টে ধরা পড়ার পরও উপরের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দিয়ে সামরিক যানে করে খাগড়াছড়িতে তাদের আস্তানায় পৌঁছে দেয়া হয়েছিল।

পিসিপি নেতা জানান আজও তিনি সশস্ত্র মুখোশ সন্ত্রাসীদের চেঙ্গী নদীর পাড়ের একটি গ্রামে অবস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে অবহিত করেছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

কিন্তু এতে প্রশাসনের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে সশস্ত্র মুখোশদের ব্যাপারে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেককে তাদের বিরুদ্ধে নানা কটূ মন্তব্য করতে শোনা গেছে।

একজন মন্তব্য করে বলেন জাদ’ মাধা খেইয়্যাগুন এইচ্যনদে তা বাবদাগিলোই। (জাতির মাথা-খাওয়া লোকগুলো তাদের বাপদের নিয়ে এসেছে।)

অন্যজন বলেন আমাকে তাদেরকে ভাত দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমি তাতে থুথু ছিটিয়ে দিয়েছিলাম। আর একজন মুসকি হেসে বলেন তিনি তরকারিতে ইচ্ছে করে লবণ বেশী দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও একজন বলেন, ‘ইগুনে ফুগুদি কানান্দি পহ্র দেগদন্দে পারাপাং। সুগে থেবার ভগবান্নো মানা গরেত্তে।’ (এরা বোধ হয় নিজেদের মরণের পথ বেছে নিয়েছে। সুখে থাকতে তাদের ইচ্ছে হচ্ছে না।)
——————
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More