বাঘাইহাট বাজার খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করো, না হলে আমার ব্যবস্থা আমি করবো: জোন কমান্ডার

0

sajekসাজেক (রাঙামাটি)॥ তোমরা  বাঘাইহাট বাজার খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করো, না হলে আমার ব্যবস্থা আমি করবো। প্রয়োজনে আমার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবো।

গতকাল শনিবার (৭ জানুয়ারী) বাঘাইহাট জোন কমান্ডার আলী হায়দার সিদ্দিকী স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার, মুরুব্বী, দোকানদার ও বাঙালিদের সাথে এক মিটিঙে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।

তিনি সাজেকে মালামাল পরিবহনের ওপর তার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পর সৃষ্ট সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য তাদেরকে ক্যাম্পে ডাকেন।

বৈঠকে উপস্থিত এক জনপ্রতিনিধি সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, কমান্ডার সাহেব বাঘাইহাট বাজার খুলে দেয়ার জন্য তিন দিন সময় দেয়ার পরও কেন এখনও বাজার বন্ধ রয়েছে তা জানতে চান।

সাজেক চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা এর জবাবে তাকে বলেন ‘বাজার খুলে দেয়ার মালিক আমরা নই। যারা বয়কট করছে তারা বাজারে না গেলে আমাদের কী করার আছে?’

এরপর আলী হায়দার সিদ্দিকী ক্ষুদ্ধ স্বরে বলেন, উজো বাজার হলো ইউপিডিএফের বাজার। তোমরা জুয়েলকে (সাজেকে ইউপিডিএফের সংগঠক) ভগবান মনে করো। তোমরা যা করবে করো, পর্যটনের গাড়ি পুড়ে ফেলে দাও। আমি আমার কাজ করবো। প্রয়োজনে আমার সিদ্ধান্ত (বাঘাইহাট বাজার বয়কট সম্পর্কে) চাপিয়ে দেবো।’

সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জোন কমান্ডারকে তার পূর্বের বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘স্যার, আপনি বলেছিলেন সাধারণ জনগণ আপনার শত্রু নয়। যারা অস্ত্রধারী তারাই আপনার শত্রু। কিন্তু যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তার জন্য তো সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, তারা তো না খেয়ে মরে যাবে।’

এ কথা শুনে কমান্ডার চুপ হয়ে যান।

মিটিঙ থেকে ফেরার পথে বাঘাইহাট বাজারের ব্যবসায়ীরা পাহাড়িদের বলেন, মালামাল পরিবহণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের ও গাড়ি আটকানোর ইচ্ছে তাদের নেই। বাঘাইহাট জোন কমান্ডারের প্রতি ইঙ্গিত করে তারা বলেন, বাধ্য হয়ে ও চাপে পড়ে তাদেরকে তা করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন আগে বাঘাইহাট জোন সাজেকে গাড়িতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য সহ মালামাল পরিবহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে।

পরে জনগণের প্রতিবাদ ও চাপের মুখে কিছুটা শিথিল করা হলেও পাহাড়ি অধ্যুষিত উজো বাজারের জন্য মালামাল ও সাজেক থেকে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী পরিবহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা এখনও বহাল রয়েছে।

উক্ত বৈঠক ও সাজেকের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলাপ কালে এক মুরুব্বী মন্তব্য করেন: ‘চাকমা ভাষায় একটি কথা আছে “যার কামে যারে সাজে, আর কামে লাধি মারে” (যার যা কাজ তা করলে তাকে মানায়, কিন্তু পরের কাজ করতে চাইলে অসম্মানিত হতে হয়)। সিও সাহেব যা করছেন তা তার কাজ নয়, সেজন্য তিনি এখন সবার কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার সামনে ভয়ে অনেকে অনেক কথা বলেন না, কিন্তু পিছনে তারা তার সম্পর্কে অনেক কটু কথা বলে থাকেন। আমার মতে তার এমন কাজ করা উচিত নয় যাতে সাজেকের জনগণের মধ্যে তার ইমেজ ক্ষুণ্ণ হয়।’

মালামাল পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সাজেকের জনগণ তার ওপর অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ বলে তিনি জানান।

অপরদিকে বাঘাইহাটের বাঙালিরাও অনেকে তার ওপর অসন্তুষ্ট। বাজারের এক মুদি দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত আমরা এখানে ভালোই ছিলাম। পাহাড়ি বাঙালি কোন ভেদাভেদ ছিল না, সবাই মিলেমিশে ছিলাম। কিন্তু ঐ বছর জরুরী অবস্থার সময় আর্মিরা জোরপূর্বক পাহাড়িদের জায়গায় বহিরাগত বাঙালিদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করার পর থেকে যতসব সমস্যা হচ্ছে। এতে পাহাড়িরা স্বাভাবিকভাবে বাঙালিদের ওপর ক্ষেপে গেছে।’

তিনি বলেন ‘আসলে সব সমস্যার মূলে হলো আর্মিরা। তাদের ভুলের কারণেই বাঘাইহাটের সব বাঙালিকে খেসারত দিতে হচ্ছে।’
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More