বান্দরবানে ৮ বম গ্রামবাসীকে হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে চট্টগ্রামে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৩

বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-রুমা সীমান্তবর্তী খামতাং পাড়ায় বম জাতিসত্তার ৮ জনকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং উক্ত ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পাহাড়ের তিন সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল ২০২৩) বিকাল ৪.০০ টায় নগরীর ডিসি হিল থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব এলাকা ঘুরে চেরাগি পাহাড় মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুদেব চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রোনাল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী দয়াসোনা চাকমা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বান্দরবানে সেনাবাহিনীর মদদে নিরীহ ৮ বম গ্রামবাসীকে তুলে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে ব্রাশ-ফায়ারে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা ও রাষ্ট্রের জন্যে এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এ হত্যাকাণ্ড একদিকে যেমন বাংলাদেশের আইন রক্ষাকারী বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করেছে তেমনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাশাসনের ভয়াল রুপ উন্মোচিত করে দিয়েছে।

বক্তব্য রাখছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অঙ্কন চাকমা।

একদেশে দ্বৈতশাসন নীতি চলতে পারে না হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তারা আরো বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছরের সেনাশাসনে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মদদে যে ডজনের অধিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার একটির বিচারও আমরা পাইনি। এজন্য বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও আইনের প্রতি আমরা আস্থাশীল থাকতে পারি না।

একই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বসবাস করেও পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন কিভাবে রাষ্ট্রীয় নীতি হয়ে দাঁড়ায় প্রশ্ন তুলে বক্তারা বলেন, জাতিগত নিপীড়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি পদক্ষেপ বরাবরই পাহাড়িদের জাতিগত সংকটকে আরো প্রকট করে তুলেছে। প্রতিনিয়ত ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশি, রাস্তা-ঘাটে অস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় সেনা টহল, নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর খবরদারি, সেটলার দিয়ে, নব্য মুখোশ-সংস্কারদের লেলিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে।

কক্তারা বলেন, সেনাবাহিনীর কম্বিং অপারেশনের কারণে গত বছর নভেম্বর থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৫৭৬ জন বম জাতিসত্তার মানুষ ভারতের শরনার্থী হতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয় পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় সরকারের ভূমিকা পালন করছে, তেমনি অন্যদিকে পরিণত হয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। পাহাড়ের সাজেক-নীলগিরি-নীলাচল পর্যটন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কোম্পানি ও হোটেল-মোটেলের মালিক এখন সেনাবাহিনী। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন কোম্পানি, ভূঁইফোড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, দাতব্য সংস্থা ইত্যাদির নামে-বেনামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন ছাড়াও নিরীহ নিরপরাধ পাহাড়িদের হত্যা, গুম, অপহরণের মতো নিকৃষ্টতর কর্মকান্ডগুলো বিচারহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে বান্দরবানের ৮জন বম গ্রামবাসীকে হত্যার ঘটনা তার অন্যতম দৃষ্টান্ত।

বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামকে বন্দী রাখা হয়েছে অভিযোগ করে বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এক ঘৃণ্য ও আতঙ্কের নাম। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন চাই না, জাতিগত নিপীড়নের ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসুন, পাহাড়িদের ন্যায্য অধিকার পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দিন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যাগুলোর বিচারের দাবি করে বক্তারা অবিলম্বে গত ৭ এপ্রিল বান্দরবানের রোয়াংছড়ি-রুমা সীমান্তবর্তী খামতাং পাড়ায় সেনাবাহিনীর মদদে বম জাতিসত্তার ৮ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন সাপেক্ষে খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর মদদে গত ৬ এপ্রিল জুরভারং পাড়া এলাকা থেকে বম জাতিসত্তার নিরীহ ২২ জন গ্রামবাসীকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক খামতাং পাড়ায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরের দিন (৭ এপ্রিল) ১৪ জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও কলেজ ছাত্র, স্কুলের কর্মচারীসহ ৮জনকে ‘দুপক্ষের বন্দুকযুদ্ধের’ নামে ব্রাশফায়ার করে ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More