ভূমিহীন থেকে কোটিপতি মানিকছড়ির কালাম চেয়ারম্যান

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
Kagrachari (Kalam Chairman) 22-03-2014 copyখাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভূমিহীন আবুল কালাম মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটি কোটি টাকার মালিক! আশির দশকে ভূমিহীন হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসনের আওতায় গচ্ছাবিল এলাকায় গুচ্ছগ্রামের ৫ একর জমির উপর যার একমাত্র নির্ভরতা ছিল সেই ব্যাক্তির গাড়ি-বাড়ি, অর্থ বৃত্তের আকাশছোয়া সঠিক সম্পদের হিসাব করা এখন দুরুহ ব্যাপার। ভূয়া কাগজপত্রে সরকারি লিজকৃত ভূমি জবর দখল করে অন্যের নিকট বিক্রি, নাম সর্বস্বহীন প্রকল্প দেখিয়ে টি.আর, কাবিখা ও ভিজিএফ’র শত শত মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আতœসাত, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দ্বারা চোরাইপথে কাঠ-বাঁশ ও রাবার পাঁচার, ভূমি দস্যুতা, এলাকায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজী ও ত্রাসের সৃষ্টি সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে এই বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ কর্মী এবং শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের। তবে মামলা ও প্রাণের ভয়ে ত্রাসের রাজা এই প্রভাবশালী চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে নাম প্রকাশে রাজী নন কেউ।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, তার প্রকৃত নাম আব্দুর রাজ্জাক ফরাজি। বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার উত্তর খন্তাকাটা গ্রামের জনৈক মৃত মাস্টার তোজাম্মেল ফরাজির ঔরশজাত সন্তান আব্দুর রাজ্জাক ফরাজি অজ্ঞাত কারণে ১৯৮৩ সালে মানিকছড়ি উপজেলায় এসে পরিচিতি লাভ করে আবুল কালাম নামে। ভূমিহীন হিসেবে সরকারি দেয়া ৫ একর জমি বন্দোবস্তিতে বসবাস শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে পাহাড়ি-বাঙালি ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে ৩ বার ইউপি সদস্য ও ২০০৯ সালের ইউপি নির্বাচনে সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার চুক্তি বিরোধী লংমার্চ চলাকালে সাদা পতাকা উড়িয়ে জামায়াত পরিবারের এই আবুল কালাম রাতারাতি বনে যান আওয়ামী লীগ নেতা। তবে আ’লীগের একাধিক সূত্র জানায়, তার ছেলে হাজতবাসে থাকা বর্তমান জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, বড় জামাতা মনিরুজ্জামান, মেঝ জামাতা আবদুল্লাহ, বড় ভাই মৃত আব্দুল হাফিজ, ভগ্নিপতি আবু বক্কর সহ তার পরিবারের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সাধারণ ক্ষমার আওতায় লক্ষ্মীছড়ি জোনে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেয়া ১৭ মামলার আসামী এই আবুল কালাম স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর উপজেলার বেশ কিছু চিহ্নিত দাগী চোরাকারবারী ও মাদকাসক্তদের অর্থের লোভ দেখিয়ে গড়ে তোলে নিজস্ব ক্যাডারবাহিনী। তার বড় ছেলে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে হাফিজুর রহমান, ইসমাইল, শাহিন, টুটুল, মাসুদ সহ অন্তত ৩০ সদস্যের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে রাতের আধারে কাঠ-বাঁশ-রাবার পাচার, পার্বত্যাঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস এর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজী এবং উপজেলার নিরীহ মানুষকেব জিম্মি করে ত্রাস সৃষ্টি ও একক আধিপত্য বিস্তারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এদিকে, ২ বার ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান হওয়ার পর হতে গচ্ছাবিল মাদ্রাসা মাঠ ভরাটের নামে কয়েক দফায় ৫০ মেট্রিক টনের অধিক খাদ্যশস্য বরাদ্দ নিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, মাটি ভরাট না করে যে পরিমাণ খাদ্যশস্য এ মাঠ ভরাটের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাই যদি মাঠে ফেলা হতো তবে অনেক আগেই মাঠ ভরাট হয়ে যেত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা মাঠটি এখনও পর্যন্ত ভরাট করা হয়নি। এছাড়াও, যেখানে জনসাধারণের চলাচল নেই এবং তদারকি করা সম্ভব নয় উপজেলার সেইসব প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় উন্নয়নের নামে ভূয়া প্রকল্প নিয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় শত’শত মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগও করেছে এলাকাবাসী।

প্রায় বছর পূর্বে উপজেলার চেমব্রুপাড়া এলাকায় জনৈক আবু তাহের নামে এক ব্যক্তিকে ২০ বছরের জন্য রাবার বাগান প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ২৫০ একর ভূমি লিজ দেয় সরকার। লিজের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পর সরকারি ঐ ২৫০ একর ভূমি অত্যন্ত সু-কৌশলে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থে জনৈক এক সিন্ডিকেটের নিকট বিক্রি করে দেয় এই আবুল কালাম গং। এছাড়াও ভূমিদস্যু আবুল কালাম গংদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা আফছার উদ্দিনের ভূমিটিও। ভূমি জবরদখলেও অর্ধশত অভিযোগ আছে আবুল কালাম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

এত সম্পত্তির উৎস কোথায় জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও মানিকছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, তার সমুদয় সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ৩০ লক্ষ টাকা এবং বর্তমানে তার ২০ লাখ টাকা দেনা রয়েছে।

এছাড়াও দলে একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপকি সমশের আলী, ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল, যুবলীগ সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা সেলিম, যুবলীগ নেতা লেয়াকত আলী ও জাহাঙাগীর সহ অসংখ্য নেতাকর্মীকেও নির্যাতন করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমানে এ সংক্রান্ত মামলায় তার বড় ছেলে জেলা যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম খাগড়াছড়ি কারাগারে হাজতবাসে আছেন।

মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী জানান, হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে সে জেল হাজতে আছে।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More