মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ি জুমচাষীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে মানিকছড়িতে বিক্ষোভ

মানিকছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৫ জুন ২০২৩

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি-তাইন্দং এলাকার লাইফু কার্বারি পাড়ায় সেটলার বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি জুমচাষীদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তিন সংগঠনের উদ্যোগে মানিকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সোমবার (৫ জুন ২০২৩) সকাল ১০টায় মানিকছড়ি উপজেলা সদরস্থ জামতলী নামাক স্থানে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম মানিকছড়ি উপজেলা শাখাসমূহের যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কে এই বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য উগ্যজাই মারমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের মানিকছড়ি থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক অংসালা মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, ইউপিডিএফ সদস্য বরুণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সুনীল চাকমা, মানিকছড়ি থানা শাখার সভাপতি অংক্য মারমা ও সচেতন ছাত্র অংহ্লাচিং মারমা প্রমুখ ।

উগ্যজাই মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের মদদে প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের উপর হামলা ও ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটছে। তারই অংশ হিসেবে গত ১ জুন রাতে মাটিরাঙ্গার লাইফু পাড়া এলাকায় পাহাড়িদের ভোগদখলীয় ভূমি বেদখল করে তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে পরিকল্পিতভাবে ৭ জন পাহাড়ি জুমচাষীর ঘর অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পাহাড়িদের টিকে থাকার জন্য আন্দোলন ও প্রতিরোধের কোন বিকল্প নেই। একমাত্র আন্দোলন জোরদার করার মাধ্যমেই আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তাই ছাত্র-যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমি বেদখলসহ শাসকগোষ্ঠির সকল অন্যায়-অবিচার ও দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

পিসিপির নেতা অংক্য মারমা বলেন, এ রাষ্ট্র আমাদের নিজ বাড়িতে সুখে-শান্তিতেও থাকতে দিচ্ছে না। কখনো সেটলার বাঙালিদের দিয়ে, কখনো উন্নয়নের নামে আমাদের ভূমি বেদখল করেই যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।  

তিনি পাহাড়িদের অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করতে ছাত্র সমাজকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান।

অংহ্লাচিং মারমা বলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদকেই ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজটি করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ভূমি বেদখল, হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রয়েছে তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠা ছাত্র সমাজের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সুনীল চাকমা বলেন, শুধু তাইন্দং-তবলছড়ি এলাকায় নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিনিয়ত ভূমি বেদখলের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পাহাড়িদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি শাসকগোষ্ঠির অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সামিল হতে ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।

ইউপিডিএফ সদস্য বরুণ চাকমা বলেন, সরকার প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের উপর নানা অত্যাচার, দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। হামলা, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভূমি বেদখল, অন্যায় ধরপাকড় হত্যা, নিত্যনৈমিত্ত্যিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। সরকারের এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদেরকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে মাটিরাঙ্গার লাইফু কার্বারি পাড়ায় পাহাড়ি জুমচাষীদের ঘরে অগ্নিসংযোগকারী সেটলারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত জুমচাষীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধ করার জোর দাবি জানান।

সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন