সিন্দুকছড়িতে পাহাড়ির ঘর জ্বালিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে রামগড় এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

রামগড় প্রতিনিধি ।। গুইমারার সিন্দুকছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক পাহাড়ি জুমচাষীর ঘর অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রামগড় এলাকাবাসী।
আজ ১ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার বেলা ২টার সময়ে তারা এ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এতে এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বী সূর্য ত্রিপুরা বলেন, আমার ভূমি, আমার জায়গায় আমি বাড়ি করবো আর একদল সেনাবাহিনী এসে কোন কিছু না জানিয়ে সে বাড়ি পুড়িয়ে দেবে তা কী করে হয়? সেনাবাহিনীর কাজ কি বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া? যে সেনাবাহিনী আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়, আমাদের মা-বোনদের কুনজর দেয় সেই সেনাবাহিনী আমাদের দরকার নেই। তাদেরকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা পাঠিয়ে দিন। তাদেরকে সমতলের বাঙালি এলাকায় নিয়ে যান।
আরেক এলাকাবাসী রবি চাকমা বলেন, কাদের নিরাপত্তা দিতে সেনাবাহিনী পাহাড়ে এসেছে? নিশ্চয়ই বাঙালিদের। যদি আমাদের নিরাপত্তার জন্য এখানে আসতো তাহলে এমন ঘটনা হওয়ার কোন কথা ছিলো না। মূলত তারাই শান্ত সবুজে ঘেরা পাহাড়কে অশান্ত ও ঘোলা করছে। তাই তাদের আমাদের প্রয়োজন নেই, কারণ তারা নিরাপত্তা দিতে নয়, পাহাড়িদের দমাতে এখানে এসেছে।
বক্তারা আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী যে একের পর এক সাধারণ জনগণের উপর অত্যাচার, দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সিন্দুকছড়িতে ননজয় ত্রিপুরার জুম ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা থেকেই তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। তারা কথিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষক হয়ে একতরফাভাবে পাহাড়ি বিদ্বেষী কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং এতে সাধারণ পাহাড়িদের ভূমি, বাস্তুভিটা এমনকি ঘর-বাড়িও রেহাই পাচ্ছে না। তারা উন্নয়ন ও সম্প্রীতির কথা বলে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করছে এবং সর্বশান্ত করাচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সেনারা বন্দুকের নলে পাহাড়িদের ভয় দেখিয়ে সাজেক, চিম্বুক পাহাড় থেকে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করছে। চিম্বুক পাহাড়ে সেনাবাহিনী ও সিকদার গ্রুপ কর্তৃক ম্রোদের ভূমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে জনগণকে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দেওয়ার বদলে কেন তারা পাহাড়ি জনগণের সম্পত্তিগুলো হরন করছে? সেগুলো শুধু পাহাড়িদের উপর ,বাঙালিদের উপর নয় কেন? দেশের সকল জনগণ আইনের দৃষ্টিতে সমান ও সকলেরই সমান অধিকার ভোগ করার কথা মহান সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। অথচ পাহাড়ে নিয়োজিত সেনাবাহিনী সংবিধানকে উপেক্ষা করে একপাক্ষিক ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে পাহাড়ি জনগণের সাথে।
বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি অসীম চাকমা।
তিনি বলেন, সরকার পাহাড়িদের উপর বিদ্বেষী আচরণ না করলে সেনাবাহিনী এমন অমানবিক কাজ করতে পারতো না। আমরা একই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও রাষ্ট্র আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে চায়। আমরা রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। তিনি পাহাড়ি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও বৈষম্য ও দমনমূলক আচরণ পরিহারের জন্য রাষ্ট্র তথা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীসহ ছাত্র, যুবক, নারীদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে ভূমি, বাস্তুভিটা, জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হবে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি জুমচাষী ননজয় ত্রিপুরার জুম ঘর পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের আইনের আওতায় আনা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।